বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাওলাদ হোসেনের পরিবার

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : নগরীর ২৩ শায়েস্তা খান রোডের মো.তাওলাদ হোসেনের বাড়িতে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বাড়ির নিচতলা থেকে এক দোকানদার ভাড়াটিয়াকে আটক করে নিয়ে যাওয়ায় চরম নিরপত্তাহীনতা ভুগছে তাওলাদ হোসেনের পরিবার। তাওলাদ হোসেন অসুস্থ থাকায় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান অসহায় অবস্থায় কারো সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।


তাওলাদ হোসেনের স্ত্রী কারিমুন্নেসা জানান, আমার স্বামী তাওলাদ হোসেন গতকাল অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। এদিকে জায়গা সম্পর্কিত একটি ব্যাপারে আজ সদর মডেল থানার ওসি ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আমরা সেখানে যাইনি বলেই হয়তো এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।  


পারিবারিক সমস্যার ঘটনা তুলে ধরে কারিমুন্নেসা বলেন, নগরীর ২৩ শায়েস্তা খান রোডের এই বাড়িতেই আমার স্বামী তাওলাদ হোসেন আমাদের নিয়ে বসবাস করেন। ১ বছর আগে পারিবারিক ভাবে দেনদরবার হলো আমাদের এবাড়িটি ছেড়ে দিলে আমাদের ডনচেম্বারে ৮ শতাংশ জায়গার উপর দোতলা বাড়ি করে দেয়া হবে।

 

কিন্তু সেখানে গর্ত ও পরিবেশ মানসম্মত না হওয়ায় আমরা যেতে নারাজ ছিলাম। ওই বিচারে মন্টু ঘোষ, দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, নান্নু সরদার, শামসুজ্জামান ভাষানীসহ আরো বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো পারিবারিক এবিষয়ে কেউ মামলা করবেনা। কিন্তু আমার স্বামীর ভাই দুই নম্বর রেলগেট এলাকার জোনাকি স্টুডিওর মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন এবিষয়ে বাটোয়ারা মামলা করেন। এতে পারিবারিক বৈঠকের সেই দলিল বাতিল হয়ে যা। আমরাও পাল্টা বাটোয়ারা মামলা করি।

 

এরমধ্যে গত ৮/৯ মাস আগে এবিষয়ে মিমাংসার জন্য এসপি অফিসে বেশ কয়েকবার আমাদের ডাকা হয়। এবিষয়ে দেখভালের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু যেখানেই দেখা হয় আমার স্বামীকে তার ভাইবোনরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার কারণে আমরা আর সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।  

 

আমার স্বামী এব্যাপারে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন (নং ৩৮৮/২০১৯) করেন। ওই রিট মোকাদ্দমায় সকল প্রকার প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আদেশসহ আদালতের দেওয়ানি মামলা রায়ে বিরোধীয় নিষ্পত্তির হওয়ার সময় প্রার্থনা করা হয়। কিন্তু আমার স্বামীর ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে নানা অভিযোগ করে।

 

গত ১৫ তারিখে পুলিশ পরিচয়ে জনৈক এএসআই সামসু ফোন দিয়ে এবং বাড়িতে এসে আমার স্বামী তাওলাদ হোসেনকে খোঁজাখুঁজি করেন। আমার স্বামী একজন হার্টের ও প্রেশারের রোগী। সে একজন বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা।  নানা পেরেশানিতে তিনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন বিধায় ওইদিনই আমরা নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আবেদন করি। এরএকদিন পরেই আমার স্বামী সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। আমিও তখন ঢাকায় ছিলাম।

 

এদিকে সদর মডেল থানায় একটি বৈঠকে বসার জন্য আমাদের ডাকা হয়। কিন্তু স্বামী অসুস্থ থাকায় আমরা সেখানে যেতে পারিনি। আর তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজ ৫০/৬০ জন লোক এসে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়, সিসি টিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। সদর মডেল থানার ওসি ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। এরকিছুক্ষণ পরে তিনি আমাকে ফোন দিয়ে থানায় যেতে বলেন।

 

আমি জানতে পারি আমাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া দোকানদার সোহেলকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। আমার স্বামী হাসপাতালে এরমধ্যে পারিবারিক বিষয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা এবং হামলার ঘটনায় আমি, আমার মেয়ে, আমার মা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারকাছে অভিযোগ করবো সেটিও বুঝতে পারছিনা।


কারিমুন্নেসা বলেন, আমার বাবা এই নারায়ণগঞ্জেই সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি আমার স্বামী সন্তানের নিরাপত্তা চাই। আমি আমার স্বামী সন্তানকে নিয়ে এই বাড়িতেই বসবাস করতে চাই। আমি কোথাও যাবোনা। যা হবার হোক। মামলার রায়ে যা আসবে আমি তাই মেনে নেবো। কিন্তু অন্য কেউ এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে আমাদের উচ্ছেদ করবে এসব থেকে আমরা পরিত্রান চাই, সাথে নিরাপত্তার আবেদন জানাই।


সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার সময় আমি ওই রাস্তা ধরে আসতেছিলাম। পতিমধ্যে কিছুলোক জড়ো হতে দেখে সেখানে থামি। পরে দেখলাম বিষয়টি তাদের পারিবারিক বিষয় এবং সম্পত্তি বাটোয়ারা নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ। তাওলাদ সাহেবের পরিবার সিসি টিভি ক্যামেরা এবং তার কেটে নেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাওলাদ সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া দোকানদারকে আটক করে নেয়ার ব্যাপারটি ওসি তদন্ত বলতে পারবেন। দুইপক্ষের মিমাংসার জন্য তিনি হয়তো নিয়ে ডেকে থাকতে পারে।  

 
এবিষয়ে তদন্তে দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ওখানে চারভাইয়ের সম্পত্তি। এক ভাই ভোগ দখলে রয়েছে। বাকি তিনভাই আজ ওই বাড়ির নিচতলায় নিয়ে একটি দোকানে তালা মারে। ওই দোকানদার তালা ভেঙে দোকানে প্রবেশ করায় তাকে ধরে আনা হয়েছে। এব্যাপারে কোন মামলা হয়নি। প্রথমে শুনেছিলাম সেখানে দুপক্ষের মারামারির আশঙ্কা রয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 
 

এই বিভাগের আরো খবর