বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

চঞ্চল হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : তরুণ নাট্যকার দিদারুল ইসলাম চঞ্চল হত্যা মামলার ৬ বছর অতিবাহিত হলেও বিচারের কোন কূল কিনারা না হওয়ায় তদন্ত করে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য বের করে খুনীদের মুখোশ উন্মোচনে এবং  সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চঞ্চলের পরিবার ও স্বজনেরা।

 

বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে চঞ্চলের পরিবার ও স্বজনেরা এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

এ সময় নিহত দিদারুল ইসলাম চঞ্চলের বড় ভাই জোবায়ের ইসলাম পমেল, মা খালেদা আক্তার রুবিনা, ছোট ভাই তুষার ইসলাম, চাচা আরমান হোসেন, চঞ্চল হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ আলম কবির উপস্থিত ছিলেন।

 

দিদারুল ইসলাম চঞ্চলের বড় ভাই জোবায়ের ইসলাম পমেল  সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোন প্রকার তদন্ত ছাড়া, নতুন কোন আসামীকে গ্রেফতার ছাড়া, কারো জবানবন্দি না নিয়ে একটা মনগড়া চার্জশীট দেয়া হয়েছিল। যে কারণে আমরা চার্জশীটে নারাজি দিয়েছিলাম। কিন্তু আজও পর্যন্ত আমরা হতাশ। বিচার দাবি করা ছাড়া আর কোন কিছু করার উপায় নেই।

 

বিচারহীনতার ৬ বছর হতে চলছে কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাইয়ের হত্যার বিচার পেলাম না। জানতে পারলাম না কে আমার ভাইটাকে কেন, কি কারণে হত্যা করেছে। সে তো কোন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না। একজন সাংস্কৃতিক কর্মী ছিল। এ শোকটা বয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের পরিবারে।

 

প্রিয় আদরেরর সন্তানকে হারিয়ে এখনো কাঁে আমার মা, বা, আত্মীয়-স্বজনসহ কাছের মানুষরা। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি তদন্ত করলেও অদ্যাবধি রহস্য উদঘাটন হয়নি। বার বার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলালেও রহস্যের উদঘাটন  করতে পারে নি প্রশাসন।

 

দিদারুল ইসলাম চঞ্চলের মা খালেদা আক্তার রুবিনা বলেন, পুুলিশ সবকিছুর রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হলেও আমার ছেলের হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না কেন।  এর পেছনে কার হাত রয়েছে যে ৬ বছরেও আমার সন্তানের হত্যার রহস্য বের হচ্ছে না।

 

প্রশাসন আমার সন্তানের হত্যার রহস্য উন্মোচনে গাফিলতি ও গড়িমসি করছে। আমাদের শুধু তারা বাসায় গিয়ে গিয়ে শান্তনাই দিচ্ছে। প্রশাসনের কাছে এক মায়ের জোর দাবি আমি আমার সন্তানের হত্যার রহস্য উন্মোচন চাই। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।

 

সংবাদ সম্মেলনে দিদারুল ইসলাম চঞ্চলের বড় ভাই জোবায়ের ইসলাম পমেল জানান, ২০১২ সালের ১৬ জুলাই গভীর রাতে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় চঞ্চল। ওই রাত ১ টা থেকে দেড়টায় চঞ্চল, তার বন্ধু মীম, রুহিত, রাকিব, রাশেদ ও শফিক একত্রে নগরীর ২নং রেলগেট এলাকার আল্লাহু হোটেলে চা-নাশতা করে। তারপর আর সে বাসায় ফেরেনি।

 

চঞ্চলের নাট্যগুরু শোয়েব মনির ও পাঁচ বন্ধুকে বাসায় ডেকে চঞ্চল নিখোঁজ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা চঞ্চলকে খোজাঁখুজি করতে বাধা প্রদান করে। দেখা করতে বলে। পরে ১৮ জুলাই শীতলক্ষ্যা নদীতে বন্দর উপজেলার শান্তিনগর এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে চঞ্চলের লাশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে  ফেলে পুলিশ।

 

খবর পেয়ে ১৯ জুলাই লাশের ছবি ও পরিধেয় কাপড় দেখে উদ্ধার করা লাশটি চঞ্চলের বলে আমি শনাক্ত করি । পরে তড়িঘড়ি করে অজ্ঞাত হিসেবে লাশ দাফন করে ফেলাটা আমাদের কাছে অত্যন্ত রহস্যের সৃষ্টি করে। যার কারণ আজও অজানা।রায় মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর হয়।

 

২০১২ সালে র‌্যাব চঞ্চল হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে তার দুই বন্ধু মিম ও রাকিবকে গ্রেফতার করে ডিবিতে ন্যস্ত করে। কিন্তু তখন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল এ দুইজনকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে নিলেও আসামীদের পরিবারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে দায়সারা জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং স্বীকারোক্তি নিতে ব্যর্থ হয়। এরপর এ দুই আসামী জামিনে মুক্ত হয়ৈ ঘুরাফেরা করছে।

 

এরপর চঞ্চল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও কোন কুলকিনারা হয় নি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা আবুল হাশেম নতুন কোন আসামী না ধরেই আসামীদের কোন জবানবন্দী না নিয়ে মামলার রহস্য উদঘাটন না করে অনুমান ভিত্তিক দায়সারা ভাবে এ মামলার চার্জশীট দিয়ে দেয়। আমরা এ চার্জশীট প্রদানের বিরুদ্ধে নারাজি পিটিশন দেই।

 

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আদালত পিটিশনটির শুনানী শেষে চঞ্চল হত্যার অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডির কাছে ন্যস্ত করে। এবং সিআইডির পরিদর্শক আব্দুল কাইয়ুম এ মামলার তদন্তভার পান। সময় গড়িয়েছে অনেক কিন্ত এ হত্যার রহস্যের জট খুলতে পারে নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

চঞ্চল হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ আলম কবির জানান, চঞ্চল হত্যার চার্জশীট জমা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তড়িঘড়ি করে আদালতে জমা দিয়েছে। চঞ্চল হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুরো ঘটনাটি আরো গভীর ভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন। পূণাঙ্গ তদন্ত হলে মামলার রহস্যের জট উন্মোচন হতে পারে।

 

উল্লেখ্য, নিহত দিদারুল আলম চঞ্চল নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের অনার্স বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। মাত্র ২০ বছর বয়সেই চঞ্চল একজন সফল নাট্যকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। সে নারায়ণগঞ্জ ঐকিক থিয়েটারের একজন সক্রিয় সদস্যও ছিল।

 

ক্ষণজন্মা এই নাট্যকার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ‘শত মানুষের হাজার স্বপ্ন,  ‘হাড়তরঙ্গ’ এবং ‘বক্তাবলী’ নামে তিনটি নাটক রচনা করে। নিখোঁজ হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে ২০১২ সালের ১৩ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর উপলক্ষে ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে যে ১০০টি মুক্তিযুদ্ধের নাটক মঞ্চস্থ হয় তার মধ্যে চঞ্চলের রচিত  ‘বক্তাবলী’  নাটকটিও মঞ্চস্থ হয়। ওই নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে পুরস্কৃত করা হয় তাকে।

এই বিভাগের আরো খবর