শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঘরবন্দী নিম্ন আয়ের মানুষের কি হবে ?

প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০২০  

ইমতিয়াজ আহমেদ : বিত্তবানদের সহায়তায় ভরসা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত মোটা দাগে হতাশার কালো রেখাটা থেকেই যাচ্ছে। এই নগরীতে দু’জন কাউন্সিলর ও একজন মুক্তিযোদ্ধার  দেখানো  পথ ধরে এখন অনেকেই হাঁটছেন। গরীব মানুষকে সহায়তা করছেন। 

 

গণমাধ্যমে  কঠোর সমালোচনার পর মাঠে নামার কথা বলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। চলতি সপ্তাহে এমপি শামীম ওসমান ও এমপি সেলিম ওসমান দরিদ্র অসহায় এমনকী মিডিয়াকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষনা দিয়েছেন।  সেলিম ওসমানের পক্ষ থেকে দেয়া ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলররা। সর্বত্রই আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। 


আর এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সরকার লম্বা ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে এই ছুটিতে যাতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তথা নিম্ন আয়ের, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুরসহ অসহায় মানুষদের খাদ্যকষ্ট না থাকে সে জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছেন দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে তারা। 


তুলে দিচ্ছেন খাদ্য ও অন্য পণ্য। এতেকরে এ সকল মানুষের মুখেও ফুটছে স্বস্তির হাসি, কেটে যাচ্ছে অনিশ্চয়তা। সবার ভালবাসায় ভরসা পাচ্ছেন মানুষগুলো। প্রতিদিনই বিতরণ করা হয় নানাপণ্য। এরপরও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ঘরবন্দী নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর কী হবে ? 


সারাদেশ অঘোষিত লকডাউনে। এ অবস্থায় ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন মানুষের ঘরে খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নগরীর বাবুরাইলে রিক্সাওয়ালা মামুন পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। একার আয়ে ছয় জনের সংসার চালানো তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। 

 

শনিবার বেলা একটায় রিক্সা নিয়ে বের হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত  ১৫০ টাকা রোজগার করেছেন। এখান থেকে ৬০ টাকা রিক্সা মালিককে জমা দিতে হবে। বাকি ৯০ টাকা দিয়ে চাল ডাল নুন মরিচ কিনে বাড়ি ফিরবেন। এই টাকায় স্ত্রী-দুই সন্তান ও মা বাবার মুখে আহার দিবেন। 


বিত্তবানদের সহযোগিতা তার কপালে জোটেনি। মামুন শুনেছেন তার সাথের কয়েকজন  রিক্সাচালক  ত্রাণসামগ্রী পেয়েছেন। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ। পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামেও ফিরে যেতে পারছেন না। গাড়ি ঘোড়া বন্ধ। আর বাড়িতে গিয়েই বা কি করবেন। সেখানেও তো কোন কাজ নেই। জীবন মরণ সমস্যার মধ্যে পড়েছেন মামুন মিয়া। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলে এসব কথাই জানা গেল।


সরকার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর শ্রমজীবী মানুষের একটি অংশ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। যারা রয়ে গেছেন তারা তাদের সংখ্যা নেহায়েত কম না। শহরের বস্তিবাসীদের অনেকেরই আয় রুজির কাজ নেই বলেই চলে। 


তাই তাদের  কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। কর্মহীন অবস্থায় তারা বস্তিতেই আছেন। ভাইরাসের আতঙ্ক থাকলেও তাদের কাছে করোনা প্রতিরোধের চেয়ে বেশি প্রয়োজন খাবারের নিশ্চয়তা।


সফি নামের এক দিনমজুরের সঙ্গে কথা হলো দ্বিগুবাবুর বাজার কাঁচা বাজারে। তিনি বাজার পৌঁছে  দেন মানুষের ঘরে ঘরে। কিন্তু নিজের বাজার নিজে করতে পারেন না। আগে তার আয় বেশ ভালই ছিল। কারণ মানুষ করোনার ভয়ে প্রচুর জিনিসপত্র কিনে রেখেছেন। তখন তার ভালই চলত। 


এখন মানুষ বাজারে আসাই বন্ধ করে দিয়েছে। বোঝা টানাও তার বন্ধ এখন। পরিবার পরিজন নিয়ে চলাই তার খুব কষ্ট হয়ে গেছে। সেলিম নামের আরেক ‘মিনতি’ বা মুটে তার বাড়িতে ৮ জন সদস্য। একা বোঝা বয়ে ৮ জনের সংসার চালান। কিন্তু আর ৮ জনের সংসার চলছে না। 


আগে যেসব মানুষের বোঝা টানতেন তারা আর বাজারমুখী হচ্ছেন না। আগেই সব কিনে মজুত করে রেখেছেন। ৮ জনের মুখে ভাত  দেয়ার মতো তার অবস্থা নেই। বিত্তবানদের কাছ থেকেও তারা এখনও কোন সাহায্য পায়নি। এমন চিত্র শহরজুড়েই।

 

রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া সহযোগিতার ৫ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি সয়াবিন তেল ও এক কেজি চিনি পেয়েছিলেন রিক্সাচালক আমির হোসেন বলেন, বাড়িতে মা ও ছোট দুই ভাই আছে। এটাই তার প্রথম সাহায্য পাওয়া। 


ছয় দিন ধরে করোনাভাইরাসের কারণে গোটা দেশ যখন লকডাউনে তখন তিনিও এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য ঘরেই বন্দী ছিলেন। কিন্তু যেদিন তার জমানো সব খাবার শেষ হয়ে যায় সেদিন সে রিক্সা নিয়ে রাস্তায় বের হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে এ খাবার পেয়ে যান। দুদিন ভালভাবেই ওই খাবার খেয়ে ঘরেই ছিলেন। 


কিন্তু শনিবার আবার তাকে রিক্সা নিয়ে  বের হতে হয়েছে। ঘরে খাবার নেই। খাবারের জন্য সারা দিন রিক্সা চালিয়ে মাত্র আড়াইশ’ টাকা আয় করতে পেরেছেন। এখন থেকে ৭০ টাকা রিক্সার জমা দিতে হবে। বাকি টাকা দিয়ে বাজার সদাই করে ঘরে ফিরবেন। 


মানুষ পথ দিয়ে হেঁটে গেলেও কেউ রিক্সায় উঠতে চান না। রিক্সাকেও তারা ভয় পাচ্ছেন। এমন অনেক কাহিনীর কথা গত কয়েক দিনে জানা গেছে।

এই বিভাগের আরো খবর