শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করলেন হিমু

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : সাভারের বিরুলিয়ায় গায়ে আগুন লাগিয়ে নওশাদ হাসান হিমু (২৭) নামের এক তরুণ আত্মহত্যা করেছেন। সাভারের রানা প্লাাজা ধসে দুর্ঘটনার পর অক্লান্ত উদ্ধার তৎপরতার জন্য তিনি সবার পরিচিত ছিলেন ‘হিরো হিমু’ নামে।আর এ ট্র্যাজেডির ৬ বছর পূর্তির দিনই আত্মহননের পথ বেছে নিলেন হিমু।


বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বিরুলিয়ার শ্যামপুর এলাকায় আবদুল হক মোল্লার বাড়িতে একা ভাড়া বাসায় আত্মহত্যা করেন হিমু। তিনি বরিশালের উজিরপুর থানার বাবর গ্রামের সরদার আবুল হোসেনের ছেলে। বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘হিমালয় হিমু’ নামে।


সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজগর আলী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। যতটুকু জেনেছি হিমু কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না। এছাড়া তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গেও থাকতেন না। আমরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি।


প্রথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে কিভাবে তার মৃত্যু হলো তা আমরা ময়না-তদন্তের পর জানতে পারবো। তার মরদেহ ময়না-তদন্তের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এসআই আজগর আলী।


আত্মহত্যার আগে ‘হিমালয় হিমু’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বেশ কিছু পোস্ট দেয়া হয়। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব সূত্র জানায়, এটি হিমুর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল ছিল। 


বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে পোস্ট করা হয়, “#এমনিকরেইহয়যদিশেষহোকনা” । আবার সন্ধ্যা ৭টা ৮ মিনিটে পোস্ট আসে “#ছোটবেলাহইতেইআগুনআমারঅনেকপছন্দ”। ৭টা ২৮ মিনিটে একই পোস্ট আবারও করা হয়। এরপর রাত ৯টা ১১ মিনিটে পোস্ট আসে, “#আগুনসর্বগ্রাসিতাইভালোবাসি।”


রাত ৯টা ২২ মিনিটে লেখা হয় “#কোনমৃত্যুরজন্যকেউদায়ীনয়”। রাত ৯টা ২৬ মিনিটে হিমুর আইডি থেকে “#জয়বাংলা#প্যারানাই।” পোস্ট করা হয়। আর ওটাই ছিল সর্বশেষ পোস্ট।


পরিবার সূত্র জানায়, হিমু সাভারের রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের নিয়ে ব্যথিত ছিল। মাঝেমধ্যেই সে ওই ঘটনা নিয়ে আবেগ পরায়ণ হয়ে পড়ত। লাশের গন্ধ আসে ভেবে সে রানা প্লাজার ঘটনার পর কখনো শরীরে পারফিউম ব্যবহার করেনি।


স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা হিমু অনেকটা কাছ থেকে দেখেছিল। সেখানকার উদ্ধার তৎপরতায় সে নিয়োজিত ছিল।


তার মৃত্যুর খবরে অ্যাক্টিভিস্ট কল্লোল মোস্তফা ফেসবুকে লেখেন, ‘কিভাবে সম্ভব! কেন এরকম করল হিমু ? রানা প্লাজার উদ্ধার তৎপরতায় যে মানুষগুলোকে সত্যিকারের হিরো মনে হয়েছিলো, হিমু ছিল তার মধ্যে অগ্রগামী। এত সিরিয়াস ও ডেডিকেটেড ছিল ! ধ্বংসস্তূপের যে গভীরতায় কেউ ঢুকতে সাহস করতো না, হিমু অবলীলায় সেখানে চলে যেত আহত-নিহত মানুষদের উদ্ধার করতে। হি ওয়াজ রিয়েলি মাই হিরো। ...ভীষণ কষ্ট লাগছে হিমুর মতো প্রাণবন্ত একটা ছেলে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করছে শুনে। খুব খারাপ লাগছে।’

এই বিভাগের আরো খবর