বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গভীর রাতে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : ১৯৫২-এর ২০ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল বুধবার। বিকেলের দিকে ঢাকা শহরের সদ্য যোগ দেয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোরায়শী এক নির্দেশে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ আহুত হরতাল ও সাধারণ ধর্মঘটের দিন সভা, সমাবেশ ও মিছিলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে ১৪৪ ধারা জারি করেন।

 

এই নির্দেশে বলা হয় ‘যে জনগণের একটি অংশ ঢাকা শহরে জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করার চেষ্টা করছে এবং যেহেতু আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি সেই ধরনের শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল জনসাধারণের জীবনে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে তাই আমি এস এইচ কোরায়শী সিএসপি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা পি, আর, পি, সির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী ঢাকা ও তেজগাঁও পুলিশ স্টেশন নিয়ে গঠিত ঢাকা শহরের সমগ্র এলাকায় আমার লিখিত পূর্বানুমতি ব্যতীত ২০ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ থেকে তিরিশ দিনের মধ্যে সেই ধরনের সকল জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।’ 

 

প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলের দিকে রিক্সায় মাইক লাগিয়ে ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারির এ ঘোষণা প্রচার শুরু করলে প্রথমেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ও সাধারণ ধর্মঘট সফল করার জন্য। 

 


১৪৪ ধারা জারি করা সম্পর্কে প্রাদেশিক সরকারের চিফ সেক্রেটারী আজিজ আহমেদ জানান আমরা গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে আগেই জেনে গিয়েছিলাম যে ২১ ফেব্রুয়ারির হরতালের নামে শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে এবং প্রাদেশিক পরিষদের বাজেট অধিবেশন ঘেরাও করে রাখা হবে। তাই এ ধরনের শোভাযাত্রা কিংবা মিছিল যাতে বের না হয় এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিরাপত্তা যাতে বিঘিœত না হয় সে জন্যই ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ দেয়া হয়।

 

২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার ৯৪, নবাবপুরে আওয়ামী মুসলিম লীগের অফিসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের এক জরুরি বৈঠক ডাকা হয় উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য।

 

এ বৈঠকের মূল আলোচনা কেন্দ্রীভূত হয় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতাল ও সাধারণ ধর্মঘট কর্মসূচি বহাল থাকবে কী থাকবে না সেই প্রশ্নের ওপর। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার পক্ষে মতামত দিলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তোয়াহা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মুসলিম লীগ সরকারের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেই ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল ও সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে এবং মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলেও ২১ ফেব্রুয়ারি হরতালের পক্ষে মিছিল শুরু হয়। ১৯৫২-এর ২০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ও ঢাকা হলের মধ্যবর্তী বিশাল পুকুরের সিঁড়িতে ছাত্রনেতাদের এক বৈঠকে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারের সব নিষেধাজ্ঞা ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে কোনো মূল্যে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল ও সাধারণ ধর্মঘট সফল করার কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়।