বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গণজমায়েত করে ত্রাণ বিতরণের হিড়িক, মৃত্যুকে দাওয়াত হচ্ছে কি !

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : প্রথমে কেহ বিষয়টি আমলে নিতে চায়নি। কেহ মাঠেও নামেনি। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে মাঠে নামেন কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার  খোরশেদ। এরপর বসে থাকেননি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরউদ্দিন আহমেদ ও কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুসহ কিছু প্রগতিশীল ও দানশীল মানুষ। 

 

এদের তৎপরতার চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরপরই শুরু হয় বিভিন্ন মহলের সচেনতা সৃষ্টির কর্মসূচী ও ত্রাণ তৎপরতা। ত্রাণ তৎপরতা নিয়েই এখন ভয় বেশি।  কেননা সবই চলছে নিয়ম লংঘন করে। প্রথমে লংঘিত হয়েছে মানবতা। 

 

কেননা তখন মুষ্ঠিমেয় লোক ত্রাণ দিলেও অধিকাংশ ছিলেন নিরব। এখন লংঘন হচ্ছে করোনা প্রতিরোধের নিয়ম নীতি। যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি মানা হচ্ছেনা। এতেকরে ত্রাণ বিতরণকারী এবং ত্রাণ গ্রহণকারী উভয়েই বিপদে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বোদ্ধামহল।

 

তাদের মতে, গণজমায়েত করে ত্রাণ বিতরণের হিড়িক পড়েছে। এই গণজমায়েত থেকেই করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ। কাজেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রাণ বিতরণ করা উচিৎ। এখন ত্রাণের কথা শুনলেই সেখানে মূহুর্তেই ঘটে গণজমায়েত। 

 

অনেক বিত্তবান উদার মনের মানুষ ত্রাণ বিতরণ করছেন। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। যে কোন সময় ঘটতে পারে অঘটন। এভাবে ত্রাণ দিতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব না মানলে পরোক্ষভাবে মৃত্যুকেই দাওয়াত করা হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  


তাদের মতে, চলমান বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমন নিয়ে যেভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাড়া মহল্লাতে ত্রাণের নামে ছুটাছুটি হচ্ছে এতেকরে ভাইরাসটি খুবই দ্রুত নারায়ণগঞ্জকে  গ্রাস করবে এমনটাই তাদের আশংকা!

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও চলছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অঘোষিত লকডাউন। সুদূর প্রবাস ইতালি, আমেরিকা, স্পেন সহ ভাইরাসটির মূল উৎপত্তিস্থল চীনের মতো প্রেক্ষাপট যাতে এই বঙ্গকে গ্রাস না করতে পারে তার জন্যই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ইতিমধ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। 

 

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনসহ সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও একযোগে কাজ করছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিষয়টি ততটা আমলে না নিয়ে লোক দেখানো ত্রাণ বিরতণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ত্রাণ সংগ্রহ করার জন্য প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে গণ জমায়েত হচ্ছে। সর্বশেষ চাষাঢ়াস্থ রাইফেল ক্লাবের সামনেও অসহায় দু:স্থ মানুষদের লম্বা সারি দেখা গিয়েছে। তবে মানুষের এই জমায়েত কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছেনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনির সদস্যরা। 

 

সেই গণজমায়েতে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তারা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমানের সহায়তার জন্য জড়ো হয়েছেন এখানে। তাদের অভিযোগ ত্রান যদি না দেওয়া হয় তাহলে তারা সরাসরি এসে বলে দিতে পারে কিন্তু তারা সেটা না করে ঘন্টার পর ঘন্টার সাধারণ মানুষদের দাঁড় করিয়ে রাখছেন বলে তাদের অভিযোগ।  

 

অনেকেই ক্ষোভ প্রকশ করে বলেছেন, প্রয়োজনীয় ত্রান সামগ্রী বিতরণ করার জন্য এলাকা ভিত্তিক কমিটি প্রণয়ন করতে পারতো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু তারা সেটা না করে ভাইরাসটির মুখে ঠেলে দিচ্ছে সাধারণ মানুষদের। 

 

তাদের অভিযোগ, কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিদিনই এলাকাগুলোতে জনপ্রতিনিধিরা একাধিক ব্যক্তি নিয়ে সমবেত হচ্ছে এবং ত্রাণ বিতরণের ছবি তোলার জন্য হুলস্থুল বাধিয়ে দিচ্ছে। তাদের আশংকা এইভাবে যদি মহামারি ঠেকানো যেত তাহলে হয়তো ইতালি কিংবা স্পেনে এতো মানুষের মৃত্যু হতো না। 

 

যেখানে আক্রান্ত রাষ্ট্রগুলোতে ১৪৪ ধারা জারি করেও ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রন করতে পারছেনা সেখানে নারায়ণগঞ্জের এমন পরিস্থিতি অবশ্যই মৃত্যুকে দাওয়াত দেওয়ার মতো!


জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি ক্রমশই নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাদের আশংকা যেভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে এতে ভাইরাসটিতে সমগ্র নারায়ণগঞ্জ আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। 


তিনি আরো জানিয়েছেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত হয়েছে এবং তারা নির্দেশ দিয়েছেন কোথাও একাধিক ব্যক্তি সমবেত হয়ে ত্রাণ বিতরণ করতে পারবেনা। যেখানেই গণজমায়েত করে ত্রাণ বিতরণ করা হবে সেখানেই প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


নারায়ণগঞ্জের একজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাদের সামর্থ্য যতটুকু তারা তার থেকেও বেশি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মানুষ নাছোরবান্দা। তারা ত্রাণের জন্য দিক-বিদিক ছুটছে। 


তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ত্রাণ সংগ্রহ করার জন্য এমনও মানুষ হাজির হচ্ছেন যাদের অর্থের কমতি নেই। তারা চাইলেই দুস্থ ও দরিদ্্র একাধিক পরিবারকে কয়েক মাস খাওয়াতে পারেন। কিন্তু আশচর্যের বিষয় তাদেরও ত্রাণ প্রয়োজন।  

এই বিভাগের আরো খবর