শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খানপুর হাসপাতালে ওষুধ প্রতিনিধিদের হাতে নাকাল রোগী-স্বজনেরা(ভিডিও

প্রকাশিত: ১০ জুলাই ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জের খানপুরের ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের চলাফেরার কারণে চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

 

খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে কয়েকদিন গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকেই ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের ছড়াছড়ি। একপাশে তাদের মটর সাইকেলের মেলা ও সেই সাথে চলছে তাদের আড্ডাবাজি। আবার  রোগীরা হাসপাতাল থেকে বের হলেই ৫-৬ জন বিক্রয় প্রতিনিধি তাদের উপর হুমড়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে বিক্রয় প্রতিনিধিদের জটলা লেগেই আছে। চিকিৎসকদের কক্ষ থেকে বাইরে আসামাত্র বিক্রয় প্রতিনিধিরা রোগীদের হাত থেকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছোঁ মেরে নিয়ে ওষুধের নাম লিখে নেওয়ার পর ফেরত দেন। এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা একই রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া করেন।

 

খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শহরের দেওভোগ এলাকার গৃহিণী ফাতেমা তুজ জহুরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে ব্যবস্থাপত্র হাতে বের হচ্ছিলেন। সেখান থেকে বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাঁচ-সাতজন বিক্রয় প্রতিনিধি তাঁর হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নিয়ে যান। জহুরা বলেন, ‘পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লিখে দেওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে দোকান থেকে ওষুধ কিনে বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়া মাত্র ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের  লোকজন ব্যবস্থাপত্র হাত থেকে কেড়ে নিয়ে যায়। একজনের পর আরেকজন। এভাবে ১০ মিনিট ধরে শুধু হাতবদলই হয়।’

 

একটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, প্রতিদিন এই হাসপাতালে গড়ে ৭০-৬০ জন বিক্রয় প্রতিনিধি আসেন। সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত তাঁরা হাসপাতালে অবস্থান করেন। পরে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ওষুধ লেখার অনুরোধ করতে তাঁরা চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

 

প্রতিনিয়ত এই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা.সঞ্চয় কক্ষের সামনেই ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিদের জটলাটি বেশ বড় থাকে। চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা তাঁর কক্ষের সামনে থাকা বিক্রয় প্রতিনিধিদের জন্য দাঁড়ানোর সুযোগটুকুও ঠিকভাবে পাননা। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হতেই অন্য রোগীদের ঠেলে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ব্যবস্থাপত্র দেখতে।   তবে আরএমও সঞ্চয় বলেন,  ‘আমি অতীতেও নিজে ওসব বিক্রয় প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রমাণ নিয়ে আসলে আবারো ব্যবস্থা নেবো।’

 

চিকিৎসা নিতে আসা ফতুল্লার আফজাল হোসেন বলেন, ডাক্তারগণ রোগীকে কি চিকিৎসা ও কি ওষুধ দিচ্ছে সেটা সংগ্রহ করছেন না শুধু ওই বিক্রয় প্রতিনিধিরা। সাথে রোগীদের রোগের সকল ব্যক্তিগত তথ্যও তাদের হাতের মুঠোয়।  রোগীদেও রোগ দেখে ডাক্তারকে তারা তাদের কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে দিতে বলে। নিজেদের ওষুধ বিক্রির জন্য অসুস্থ রোগীদের তারা বিরক্ত করে। রোগী যখন রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার জন্য অন্য কক্ষের উদ্দেশে ছোটে, তখন তাদের পেছন পেছন ছোটেন ওই প্রতিনিধিরা। রোগীকে আটকে তখন তারা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে রাখে। মহাযন্ত্রণা তৈরি করে তারা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিরা হাসপাতালে রোববার ও বুধবার অর্থাৎ সপ্তাহে ২দিন আসতে পারবে। তাদের আসার সময় দুপুর ১ টার পর থেকে ডাক্তার থাকা সময়কালীন সময় পর্যন্ত। কিন্তু তারা এই নিয়ম পুরোপুরি লঙ্ঘন করে সপ্তাহে ৬ দিন হাসপাতালে চলে আসে। হাসপাতালের বাঁধাধরা নিয়ম না মেনে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু করে বহিঃবিভাগ খোলা থাকার পুরোটি সময় তারা হাসপাতালে অবস্থান করে।

 

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ওষুধ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিদের দৌরাত্মের ভুক্তভোগী নাদিয়া ইসলাম বলেন, রোগীরা বের হলেই মৌমাছির চাকের মতো সবাই আইসা ধরে। বিব্রত হয়ে গিয়েছিলাম আমি প্রথম বার। এখন আর ছবি তুলতে দেই না। এদের মধ্যে কয়েকজনের ব্যবহারও ভালো না। ব্যবস্থাপত্র না দেখতে দিলে তারা অশালীন মন্তব্য করে।

 

খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.আবু জাহের এই বিষয়ে বলেন, ‘তাদেরকে একাধিক বার নোটিশসহ বিভিন্ন ভাবে অবগত করেছি। আমার সামনে পড়লে আমি হাসপাতাল থেকে বের করে দেই। কিন্তু শিক্ষিত মানুষের যদি বিবেক না থাকে সেক্ষেত্রে আর কি করার থাকে। তবুও আমি ভেবেছি যারা অসময়ে আসে এবং ডাক্তারের সাথে সময়ের আগে দেখা করে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবো।’

এই বিভাগের আরো খবর