বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ক্লিনিক, ডায়াগস্টকি সেন্টার ও ল্যাবগুলোতে ভুয়া ডাক্তারে সয়লাব

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ শহর ও আশপাশে বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব গুলোতে ভুয়া ডাক্তারে সয়লাব। এতে একদিকে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ল্যাবগুলোতে নানা রোগের পরীক্ষায় সঠিক রোগ সনাক্ত হচ্ছে না। অন্যদিকে চলছে ভুল চিকিৎসা। 


সাধারণ মানুষ অর্থের ব্যয়ে ভুল চিকিৎসা পেয়ে হতাশ ও শঙ্কায় ভুগছে। গত কয়েকদিনে র‌্যাব এর অভিযানে বেশ কয়েকজন ভুয়া ডাক্তারকে আটক করে জেল জরিমানা করেছে। সচেতন মহল মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্যহীনতায় চিকিৎসার নামে প্রতারণা চলছে।


জেলা সিভিল সার্জন জানান, ভুয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম থামাতে ভবিষ্যতে অনলাইনের মাধ্যমে সব ডাক্তারকে নজরদারীতে নিয়ে আসা হবে। নারায়ণগঞ্জ শহর ও আশপাশে বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব গুলোতে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। 


এসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাব গুলোতে রোগীরা নানা রোগের পরীক্ষা করলেও সঠিক রোগ সনাক্ত হচ্ছে না। ফলে ভুয়া ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অনেকে নিরবে মৃত্যুর কোলে ডলে পড়ছে। অনেকে বুঝতেও পারছে না ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়।

 
গত কয়েকদিনে সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারাগাঁয়ে র‌্যাব এর ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে বেশ কয়েকজন ভুয়া ডাক্তার আটক হয়। কাঠের ব্যবসা কিংবা পানি সাপ্লইয়ের কাজে নিয়োজিত থাকলেও পরে এমবিবিএস ডাক্তার সেজে রোগী দেখেছেন। এইচএসসি পাশ করে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘ দিন রোগী দেখছিলেন। 


গত ৬ আগস্ট হিরাঝিল সেবা মেডিকেল সেন্টার থেকে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয় এইচএসসি পাশ করে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘ দিন রোগী দেখছিলেন সবুজ ইসলাম সরকার। গত ৩০ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড নিউ মুক্তি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে গ্রেফতার হয় ভুয়া ডাক্তার মোস্তাক আহম্মেদ করিম ওরফে এমএ করিম বশির। 


গত ২৩ জুলাই এসএসসি পাশ করা ভুয়া ডাক্তর মো. ফারুক হোসেন ও তার জামাতা ইমরান হোসেনকে ১ মাসের কারাদন্ড ও ২০ হাজার জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৭ দিনের কারাদন্ড প্রদান করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত।


 গত ৮ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জে হীরাঝিলে পপুলার হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ল্যাব থেকে র‌্যাব-১১ গ্রেফতার করে কামাল হোসেন ও মায়া বেগম দুই ভুয়া ডাক্তারকে আটক করে। 


এছাড়াও সম্প্রতি মেডিসিন গাইনি ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে রোগী দেখা ভুয়া ডাক্তার ফাহমিদা আলম ও সোনারগাঁও থেকে তিন ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার করে র‌্যাব। আটকদের ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মেয়াদে জেল জরিমানা করেন।


অভিযানে আটককালে র‌্যাব-১১ এর সিপিএসসি’র কমান্ডার মেজর তালুকদার নাজমুল সাকিব বলেন, ‘দুই জন ভুয়া ডাক্তার মাধ্যমে চিকিৎসা পরিচালনা হচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ ডাক্তার না । এরা হচ্ছেন মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট ম্যাটসের। তারা নিজেদেরকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে এখানে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলো।


এদিকে শহর ও আশপাশে বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ল্যাব গুলোতে ভুয়া ডাক্তারদের প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ অর্থ ব্যয়ে ভুল চিকিৎসা পেয়ে হতাশ ও শঙ্কায় ভুগছে। তারা চান এসবের প্রতিকার। 


চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বললে তারা জানান, চিকিৎসা নিতে এসে যদি ভুয়া ডাক্তারের মাধ্যমে প্রতারিত হই। কিংবা বড় কোন ঘটনার সম্মুখীন হই। আসলে আমরা কাকে বিশ্বাস করবো। 


র‌্যাবের চলমান কয়েকটি অভিযানের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি আমাদের এজেলায় এতো ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষের কি করার রয়েছে। আমরা তো ভুক্তভোগী। 


সচেতন মহল মনে করেন, জেলা সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্যহীনতায় চিকিৎসার নামে প্রতারণা চলছে। 


এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যাবস্থা নিয়ে মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ঢাকা বিভাগ দক্ষিণের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম।


তিনি বলেন, এই ব্যাপারে যদি সিভিল সার্জন একটু সক্রিয় হতো তাহলে এধরণের ঘটনা ঘটে না। সরকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয় দৃষ্টি আর্কষণ করবো আপনারা এই বিষয় মনিটরিং সেলে করুন মনিটরিং বাড়িয়ে ভূয়া ডাক্তার চিহ্নিত করেন।

 
এসব বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ভুয়া ডাক্তারের অপতৎপরতার কথা স্বীকার করে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো.ইমতিয়াজ বলেন, জেলায় ৮৪ টি অনুমোদিত ক্লিনিক আছে। আমরা তদারকি করছি। ভবিষৎতে অনলাইনের মাধ্যমে সব ডাক্তারকে নজরদারীতে নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।


তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের যদি নির্ধারিত যে ডাক্তার আছে তাদেরকে আমরা নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসতে পারি। আর এই ব্যাপারে যদি কারো জানা থাকে তাহলে সিভিল সার্জনকে ও স্বাস্থ্য বিভাগকে জানান। আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা  নেবো।


নারায়ণগঞ্জ শহরেও যত্রতত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জনের অনুমতিবিহীন ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠেছে শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যেখানে ল্যাব পরীক্ষার নামে দিন দুপুরে চিকিৎসার নামে চলছে বাণিজ্য। ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে কর্মীরাই রিপোর্ট তৈরি করে দিচ্ছেন। 
 

এই বিভাগের আরো খবর