বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কেমন ‘পুলিশ সুপার’ চায় নাারায়ণগঞ্জবাসী  

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জবাসী একজন ভাল পুলিশ সুপারের অপেক্ষায় আছে। সকলের প্রত্যাশা এমন একজন পুলিশ সুপার যিনি একদিকে জনবান্ধব এবং আরেক দিকে অপরাধীদের যম। তাঁর নাম শুনলেই যেন ভয়ে অপরাধীদের মনে কাঁপন ধরে। যে কোন অপরাধী কোন অপকর্ম করার আগে যেন তার পরিণাম চিন্তা করতে বাধ্য হয়। 

 

কোন বিশেষ  খেতাবে যেন অন্তত পক্ষে এসপি’কে ভূষিত করা না হয়।এমন খেতাবে তৈলমর্দনের ঘটনায়  কেলেঙ্কারীর জনক হয়ে একজন পুলিশ সুপারকে কেঁদে বিদায় নিতে হল নারায়ণগঞ্জ থেকে। সিংহাম খেতাব দিয়ে এক শ্রেণির তৈলমর্দনকারী ও বেনিফিসিয়িারি এসপি হারুন অর রশীদকে অবনতির তলানীতে নিয়ে ঠেকিয়ে ছেড়েছে বলে মনে করেন বোদ্ধামহল।

 

তাঁদের মতে, শিল্পশহর নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীসমাজ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটা চমৎকার  মেলবন্ধন রয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের পান্ডারা যখন ব্যবসায়ীসমাজকে ডিস্টার্ব করে তখন পুলিশ প্রশাসন উপযুক্ত ডোজ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। যখন রাজনীতিবিদদের মধ্যে থেকে কেউ অন্তরালে অপরাধচক্রের লালন করতে থাকেন তখনো পুলিশ প্রশাসনকেই মাঠে নামতে হয়। 

 

পুলিশ ঈমানদারীর সাথে গর্ত খুড়ে অপরাধীদের বের করে এনে শায়েস্তা করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ যাবত এর ব্যতিক্রম হয়নি। শুধুমাত্র এসপি হারুনের বেলায় ভিন্ন ঘটনা ইতিহাসের রেকর্ড ভেঙ্গেচূড়ে চুরমার করে দিয়েছে। এসপি হারুন-এর নারায়ণগঞ্জে এন্ট্রি অপরাধীদের মনে কাঁপন ধরিয়েছিল। মুখোশের আড়ালে থাকা অপরাধীরাও প্রমাদ গুণেছিল।

 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার মানুষ স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক সচেতন। এ কারণে রাজনৈতিক মেরুকরণও বেশি। শিল্পশহরে অনেক ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য। নাসিক এর ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে কিশোর গ্যাং, মাদক ও ভূমিদস্যুতা। রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ। এই শহরে ৫ কেজি ঝুটের জন্য ২ ঘন্টা  গোলাগুলি হওয়ার ঘটনাও এক সময় শোনা যেত।

 

এখন সেই পরিস্থিতি নেই। তবে এখন বিভিন্ন সেক্টরে চলে নীরব চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতা। ভূমি সংক্রান্ত ও চাঁদাবাজির ঘটনায় সাধারণ মানুষ লোকাল থানায় প্রতিকার না পেয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যায়। এ সকল সমস্যা শক্ত হাতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে মানুষ উপকৃত হয়।

 

বিগত এসপি শুরুতে বেশ কিছু ভাল কাজ করেছেন।বিশেষ করে রাজনৈতিক সন্ত্রাস, মাদক ও ভূমিদস্যুতা কমে গিয়েছিল। শহরের গডফাদার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করেও কিছুই করতে পারেনি।বরং এসপি গডফাদারের কিছু সাঙ্গপাঙ্গকে গ্রেফতার করে জেলে পুড়েছিলেন।

 

শহরের পাইকপাড়া,  দেওভোগ, চাষাড়া, গলাচিপা, আমলাপাড়া ও খানপুর এলাকার লোকজন বলেন, কথায় আছে শেষ ভাল যার সব ভাল তার। এসপি হারুনের শেষ পর্বটা ভাল হয়নি। শুরুতে তিনি ভাল করেছিলেন। কিন্তু মাঝখানে এসে জনগণকে সময় দিতেন না। মানুষ তার কার্যালয়ে গিয়ে বসে থাকতো-তিনি নিচে অফিসে উঠার সময় দু’একটা কথা বলে বিদায় দিতেন। কারো সমস্যা সরাসরি শুনতেন না। শেষ পর্বেতো তিনি কেলেঙ্কারীর জন্ম দিয়ে জেলা থেকে বদলী হলেন। কাজেই আমরা প্রকৃত অর্থেই সৎ পুলিশ সুপার চাই। 

 

বীরমুক্তিযোদ্ধা ও আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি আলহাজ্ব নুরউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করবে এমন পুলিশ সুপার আমরা চাই। মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে। সেভেন মার্ডারের পরে নারায়ণগঞ্জে যে এসপি এসেছিলেন তিনি ভাল ছিলেন। আসলে কে ভাল তা আগে থেকে বলাও মুশকিল। নারায়ণগঞ্জ শিল্পশহর। এখানে নানান মতের মানুষের মিলন মেলা। সকলেই রাজনৈতিক সচেতন। তাই একাধিক রাজনৈতিক মেরুকরণ রয়েছে। সবকিছুকে মানিয়ে নিতে পারে-আমরা এসপি চাই। যিনি নিজগুণে সবকিছু এবজর্বড করেই মানুষের শান্তি নিশ্চিত করতে পারে।

 

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমি এবং নাগরিক কমিটি মনে করে নারায়ণগঞ্জের জন্য এমন একজন পুলিশ সুপার দরকার যিনি নারায়ণগঞ্জের সকল সমস্যা জ্ঞাত থাকবেন। জনগণকে সময় দিবেন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পুলিশ সুপার মাস্তানদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। জনগণকে শান্তির জায়গায় নিয়ে আসবেন। বর্তমান এসপি’র প্রতি জনগণের ক্ষোভ ও হতাশা ছিল। তিনি জনগণকে সময় দিতেন না। জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জে এমন এসপি আনতে হবে যার দরজায় গিয়ে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবেনা। যাঁর কাছে গিয়ে জনগণ নিজের সমস্যার কথা সবিস্তারে জানাতে পারবে এবং সুফল পাবে।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত অর্থে সৎ পুলিশ সুপার চাই। যিনি সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এবং জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করবেন। জনগণের সমস্যা শুনে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিবেন। রংবাজি করবেন না এমন কাউকে প্রত্যাশা করি।

 

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, পুলিশ জনগণের বন্ধু হবে। একই সাথে সে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় জনবান্ধব এর পরিবর্তে প্রভাবশালী বান্ধব এসপি’র দেখাই মিলে বেশি। 

 

সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘পুলিশকে দেখলে আমরা ভয় পাই।এটি কাটানোর জন্য পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে। পুলিশ অনেক সময় আসামি ধরতে মানুষের বাড়ি যায়।কিন্তু আমরা কী ওই পুলিশ হতে পারি না- যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের খোঁজখবর নেবে। তার মেয়েটা ভালো আছে কিনা। কেউ তাকে টিজ করে কিনা ?’ 

 

সত্যিকার অর্থেই একজন সৎ ও চৌকস পুলিশ সুপার চায় নারায়ণগঞ্জবাসী।

এই বিভাগের আরো খবর