শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কিশোর অটোচালকরা উধাও !

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২০  

ইমতিয়াজ আহমেদ : পশ্চিম দেওভোগ মাদ্রাসার শেষ মাথায় অটোর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন জামিল মাহবুব। যাবেন খাঁনপুর হাসপাতাল। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন বেলা পৌণে বারোটা। দেরি হয়ে গেলে ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যাবেনা। যেতেই বিশ মিনিট লেগে যাবে। 

একটি অটোও খালি পেলেন না। সবই ছিল যাত্রী বোঝাই। বাধ্য হয়েই ব্যাটারি চালিত রিক্সায় চড়লেন। তাঁরা সংখ্যায় তিনজন। স্বামী-স্ত্রী কোন মতে বসলেও ছোট মেয়েটি বসেছে তাদের কোলে। রিক্সার হুড লাগানো যায়না। খোলা হুডেই রওয়ানা দিলেন তাঁরা। 

অটোচালকরা কোথায় গেল ? এ প্রশ্নের উত্তরে রিক্সাচালক মাঝ বয়েসি লোকটির জবাব-‘পোলাপাইনের দল সব বাড়িতে। ওরা এই সময় গাড়ি চালাইবোনা। যদি করোনায় ধরে। এই ডরে ওরা এলাকায় আড্ডা মারে। 


করোনার কয়দিন ওরা গাড়ি চালাইবোনা। কয়জন দল বাইন্ধা বেড়াইেতে গেছে দেশের বাড়ি। ওরা লকডাউনের আগে আইতে পারবোনা। লকডাউন উঠলে তয় আইবো।’


দেওভোগ পানির ট্যাংকি এলাকার কয়েকজন অটো মালিকের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, অনেক পোলাপাইন দেশে গেছে। লকডাউনের আগেই গেছে। এখনতো লকডাউন ইচ্ছা থাকলেও আইতে পারবোনা। 

এখন যারা গাড়ি চালাইতাছে তারাই প্রকৃত চালক। তাদের সংসার আছে। সংসারের বোঝা টানতেই ওরা রাস্তায় নামছে। ওদের সংসারে কে খাবার দিব। 


সরকার মানুষকে বাঁচানোর জন্য রাস্তাঘাটে মানুষ চলাচল কমাইয়া দিছে। কিন্তু গরীব মানুষ খাইবো কি ? বউ পোলপান লইয়া খাওনের উপায় নাই।   


শহরের ডায়মন্ড চত্তরের বঙ্গবন্ধু কর্ণারের সাথেই অটোস্ট্যান্ড। সেখানে প্রতিদিন যে পরিমাণ অটো থাকতো এখন তার চার ভাগের একভাগ দেখা যায় মাত্র। 


মাসদাইরের স্থায়ী বাসিন্দা রবিউল  হোসেন জানান, ভাই আমাগো সংসার আছে। সন্তান আছে। একলা জান। একলা কামাই। ঘরে থাকলে খাওন দিব কে ? সরকারতো খাওন দেয়না। 

তবে সব নিয়ম মেনে অটো চালাই। কারো কাছে পয়সা না থাকলে পয়সা নেইনা। পারলে আমিও মানুষরে সহায়তা করি। এইবার মহাবিপদে পড়ছি। আল্লায় বাঁচাইবো। অনেক পোলাপান অটো চালায় না। কেহ দেশের বাড়িতে গেছে। কেহ মহল্লায় আড্ডা   মারে। 


কাশীপুরের দেওয়ানবাড়ি এলাকা ও ভোলাইল এর কয়েকজন অটোচালক জানান, এখন অটো চালায় জেনুইন চালকরা। আগের মত খেপ পাইনা। তবুও মহাজনের ভাড়ার টাকা দিয়া ঘরের লইগা চাল-ডাল কিনতে পারতাছি। 


এইটা আল্লাহ পাকের মেহেরবানি। পোলাপাইনরা ঘুইরা বেড়ায়। তবে সবাই একরকম নয়। কিছু কিছু ছেলে সংসারের হাল ধরছে। 

এই সকল কিশোররা পড়ালেখা করতে পারে নাই। সংসারের জন্য অটো চালায়। কয় দিন ধইরা রাস্তায় গাড়ি কমতাছে।  
 

এই বিভাগের আরো খবর