মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

করোনা প্রতিরোধে সেনাবাহিনীকে সংযুক্ত করার দাবি নাগরিক কমিটির

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : দেশের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সেনাবাহিনীকে সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি।


সোমবার (২৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানানো হয়। করোনা দুর্যোগকে পুঁজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে নারায়গঞ্জ নাগরিক কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক।

 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা দেখেছি দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে বিভিন্ন সময় আমাদের সেনাবাহিনী মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আজকে দেশের এ দুর্যোগে আমরাদের সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমরা মনে করি। আমরা মনে করি, বাজার-ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ প্রশাসনের সকল পর্যায়কে সক্রিয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করা আজকে সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, আমরা সমগ্র বিশ্ববাসী আজকে এক মহাদুর্যোগের মুখোমুখী এসে দাঁড়িয়েছি। প্রায় তিন মাস আগে চীনের উহান প্রদেশে সৃষ্টি হওয়া কোভিড-১৯ বা নভেল করেনাভাইরাস আজ এশিয়া, ইয়োরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৩ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ১৪ হাজারেরও অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশ আজ বিপর্যস্ত। এখন পর্যন্ত চীনের পর ইতালী ও ইরান ভয়াবহ এক সময় অতিবাহিত করছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্ব অর্থনীতি নিশ্চিৎ এক মহাসংকটের মুখোমুখী হতে যাচ্ছে। 


দেশের বর্তমান পরিস্থির কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আজকে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের মানুষও আতঙ্কিত, ম্রিয়মাণ, বিপদাপন্ন। স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন-জীবিকা। রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে মানুষকে গৃহবন্দী হয়ে যেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে এ অবস্থা মেনে নিতে হচ্ছে। আমরা নিশ্চিৎ জানিনা আমাদের দেশে কত জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, কারণ করোনা সনাক্ত করণের রাসায়নিক তথা কিট আমাদের দেশে এখনো তেমন নেই। 


গত তিন সপ্তাহে আমাদের দেশে বিদেশ থেকে প্রবাসী এসেছে ২ লাখ ৯৮ হাজারেরও বেশি। যেসব দেশ করেনায় বিপর্যস্ত সেসব দেশ থেকেই মূলতঃ তারা এসেছেন। আর করোনা পরীক্ষা হয়েছে এখানে মাত্র ৪৬৯ জনের। প্রবাসী যারা আসছেন তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন যত্রতত্র। তারা নিজেরাও জানেন না তাদের মধ্যে কে কে করেনায় আক্রান্ত। আবার জানলেও কেউ কেউ তা গোপন করে যাচ্ছেন। এতে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের পরিবার-পরিজনসহ এলাকার অসংখ্য মানুষ। যেহেতু তাদের পরীক্ষ করা যাচ্ছে না সেহেতু আক্রান্তদের সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানও আমাদের আইইডিসিআর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। 


আমাদের দেশের কয়েকটি অঞ্চলে করোনাভাইরসের প্রাদুর্ভাব বেশি। মাদারীপুরের শিবচরের ৭৮ হাজার মানুষ এখন প্রায় গৃহবন্দী। আমাদের মতো ঘন-জনবহুল দেশে এই রোগটি দ্রুত বিস্তারের সবকটি বৈশিষ্টই বিদ্যমান। দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত জনগণ, যারা দৈনিক কাজের মাধ্যমে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তারা হঠাৎ করেই এই দুর্যোগে মহাবিপাকে পড়েছে। কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে যাচ্ছে। কত দিন এ অবস্থা চলবে আমরা তাও নিশ্চিৎ জানি না। 


দেশে বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের এ দুরবস্থাকে পুঁজি করে বরাবরের মতোই এখনো এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে মানুষের মধ্যে বাড়তি আতঙ্ক তৈরি করে চলেছে। তারা চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেলসহ নিত্যপণ্যের সব কিছুরই দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের উদ্যোগে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে, আমাদের এখানেও হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। তাদের অধিক মুনাফার লোভে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভয় তৈরি হচ্ছে। 


বক্তব্যে বলা হয়, এখন এক দিকে জনগণকে ঘরে থাকার জন্য, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সচেতন করা অন্যদিকে বাজার-ব্যবস্থা ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আজ তাদের নাগরিকদের জীবন বাঁচাতে ঘরে ঘরে খদ্য ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিল, বাড়ি ভাড়া প্রদানসহ আর্থিক সহায়তার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে। আমাদের দেশেও সামর্থ অনুযায়ী কর্মহীন মানুষদের রক্ষা করার জন্য সরকারি উদ্যোগ জরুরি বলে আমরা মনে করছি। 


সরকারের পাশাপাশি আজকে দেশের বিত্ত্ববান নাগরিকদেরও এ দুঃসময়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমরা সকলে সম্মিলিতভাবে যার যার সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে নিশ্চয়ই জাতীয় এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারবো। 

 

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি রফিউর রাব্বি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত সীমিত ও ছোট পরিসরে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আমরা সংগঠনের মাত্র ৪-৫ জন সদস্য আসছি এবং অল্প সংখ্যক গণমাধ্যম কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।


রফিউর রাব্বি বলেন, আজকে আমাদের এ সংবাদ সম্মেলনের পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে একটি মিটিং থাকায় আমরা এ কর্মসূচি বাতিল করেছি। আমরা মনে করি এ দুর্যোগের সময়ে সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূূমিকা থাকা উচিত। করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন যে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা বা জীবানুনাশক ব্যবহারের জন্য কাজ করা হচ্ছে বা বলা হচ্ছে; আমরা চাই তা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে করুক। কারণ এখন শহরে যা হচ্ছে তা ব্যক্তি উদ্যোগে এবং বিচ্ছিন্নভাবে হচ্ছে।


তিনি বলেন, বস্তিবাসীসহ দিনমজুদের ঘরে অবস্থান করানো নিশ্চিত করতে হবে এবং এসময়ে সরকারের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করার বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। এমনটা না হলে তারা ঘরের ভিতরে থাকলে না খেয়ে মরবে, আর বাইরে থাকলে করোনায় মরবে। তাছাড়া সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি আমদের জনগণেরও এ বিষয়ে সাড়া দিতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।

 

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির কোষাধ্যক্ষ আ. হাই, সদস্য জহিরুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম মিন্টু প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরো খবর