কবি মিলন মাহমুদের একগুচ্ছ কবিতা
প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিমুগ্ধ গেলাশের উল্টো ছায়ায়
বসে বসে নিজেকে দেখি,
আর ভাবি দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে
দিন শেষে আমিও বইয়ের মলাট,
লেফট রাইট লেফট রাইট
গর্তে পালানো পিঁপড়ের সারি।
তারিখ
এ সত্য কাউকে দেইনি
অবিচল পাথর কেটে বসিয়েছি
যার অনুরক্ত ফলক,
দৈন্যতা ঘুরেফিরে এই তল্লাটে মুখস্থ
করে নিলে, বসে থাকে প্রজাপতি সেই
কাননে, জড়ো হয় কবিদের আড্ডা-
আর পরাস্ত মৃত মুখ
কিম্বা অলিখিত অভিশাপ,
কেউ কাছে টেনে নেয়নি ত্রিশ দিনের তারিখে।
কেউ এসে দেয়নি বিসর্গের পাতা খুলে
কতোসব উল্লাসের পাশ কাটিয়ে বৃক্ষছক
কাটা, নিজ নিজ কথা বলা আপন ঘোরে।
মনে পড়ে যায় শহরের কোলাহল
বিলুপ্ত জোনাকির ভুল পথে জ্বলে ওঠা।
আমাদের মিছিল গিয়েছিল
কিন্তু আমরা যায়নি, বিদ্রুপে ঠাসা কোলাজ
ভ্রমণ করে অবরুদ্ধ মনের দেয়ালে...
খুনি ও ধর্ষিতার অবিকল হাত
গেয়ে চলে জয়গান, তখন আমরাও বাদ পড়ে
গেলে নিয়মিত খবরে...
হয়তো ত্রিশ দিনের কোনো এক তারিখ
আমাকেও মারে।
আত্মবিলাপ
১.
কেউ এনে দিচ্ছে বইয়ের পাতা
গাছের পাতা, ভগ্ন বাকল, শুকনো খড়,
পাটখড়ি, গলিত হাতঘড়ি, উত্তপ্ত চোখ...
হালখাতার উঠোনে
ঐরকম চেহারা বেড়ে যাচ্ছে রোজ !
২.
আমরা অপেক্ষায় আছি;
কেউ পাখিদের স্বর নিয়ে
পুকুরের জল ও সবুজ ফেনা নিয়ে,
পাঁচিল ঘেরা অরণ্যের খাদে
একটুকরো আহমক্কি রোদ নিয়ে,
আবার কেউ আছে অজ্ঞাত পোকাদের
আস্তানায়...
ডিম পাড়ে এই মৌসুমে বাচ্চা ফোটায়।
৩.
দূর হতে শোনা যায় বিস্মৃত খাতায়
ইথারে টেনে আনে ইশকুলের ঘন্টাধ্বনি,
লেখাজোকা সংসার আর পড়া হয়
হাড়ি-পাতিল, বাসনকোসন, রান্নার আয়োজন।
আজকাল বাজার সওদায় ভীষণ টান
পড়ে, দিন দিন দীর্ঘ হয় জিহ্বার স্বাদে।
৪.
কিছুক্ষণ বাদে সমবেত হবে সভা পরিষদ
উদযাপন করবেন বাঘ আর হরিণের প্রেম,
শিকারি নখের ভালোবাসায় গেঁথে রাখবে
জামকালো মাংসের দোকান,
পাথরের আগুনে পুড়ে খাবে স্বৈরাচারী ঢংয়ে।
৫.
সকাল সকাল ...
প্রতিবেশীর বারান্দায়
ঝুলছে বক্ষবন্ধনী
দেনদরবার চলছে বসন্ত বাতাসে!
৬.
শুনেছি মানুষের তল্লাটে
ক্ষুধারা পাখি হয়ে উড়ে,
কখন যে আমার গাছেতে বসে ?
বসন্ত বিলাপ
বাতাসও বলে দেয়
এখন অন্যরকম জলবায়ু
মৃদুমন্দ থরথর কাঁপে সফেদ
পাঞ্জাবি...
ফাল্গুনের রৌদ্রে মেলে রাখে হৃদয়
সক্রিয় এক ছাদে
উড়ে আসে কৃষ্ণচূড়ার রং
লেগে থাকে ঠোঁটে
এখন অন্যরকম হাওয়া
কেউ কেউ মরে বসন্ত বিলাপে !