বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদের ৬৫তম জন্মজয়ন্তীতে সম্মাননা

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদের ৬৫তম জন্মজয়ন্তীতে সম্মাননা প্রদান করেছে খেলাঘর আসর নারায়ণগঞ্জ। শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহম্মাদ চুনকা নগর মিলনায়তনে খেলাঘর নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি রথীন চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে এঅনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

 

ফারুক মহসিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, সহধর্মিণী ও আবৃত্তি শিল্পী ফাহমিদা আজাদ। এছাড়া অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাফিজ আশরাফ, শরীফউদ্দীন সবুজ, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের (এনইউজে) সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি, বৈশাখী টেলিভিশনের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম রফিক, প্রণব কৃষ্ণ রায়, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়াউল ইসলাম কাজল, সাবেক সাধারণ সম্পাদ ধীমান সাহা জুয়েল, মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সভানেত্রী লক্ষ্মী চক্রবর্তী, গণসংহতি নারায়ণগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক তরীকুল সুজনসহ খেলাঘল আসরের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কবি হালিম আজাদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া খেলাঘর আসরের পক্ষ থেকে কবি হালিম আজাদকে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়।  

 

অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে প্রতিটা ক্ষেত্রে যেখানে অত্যাচার অবিচার অনাচার সেখানেই যেন হালিম আজাদের মতো তরুণরা রুখে দাঁড়ায়। আমরা জানি, হালিম আজাদ কেমন এবং সে কতটুকু আন্তরিক। অনেক অনুষ্ঠানে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্য নারায়ণগঞ্জের অত্যাচার ও অবিচারকে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সবকিছু মিলিয়ে এ যেনো এক অন্য হালিম আজাদ। 

 

মেয়র আইভী আরো বলেন, ২০০৩ যখন তাঁর (হালিম আজাদ) সাথে আমার কথা হয়। তখন আমি আরেক হালিম আজাদকে চিনতাম নরম, নমণীয় ও ভদ্র। তিনি যখন সংবাদে কাজ করতেন তখন আমি বলতাম কাকা অনেক কিছু দেখেন কিন্তু লিখেননা কেন? আমাকে বলতেন সাবাই আমার কাছে সমান তুমিও আমার ভাতিজি আবার অনেকেই তো সম্পর্কে ভাতিজা-ভাজতি তো কি বলবো? অনেক কিছুই বলতে পারিনা। কিন্তু সেই হালিম আজাদই কি তীক্ষè প্রতিবাদাই‘না করেছেন ত্বকী হত্যা নিয়ে। সকল সম্পর্কের উর্ধ্বে উঠে সত্য এবং ন্যায়ের পথে উনি অনেক কথা বলেছেন যেটা হয়তো অন্য কেউ হলে, অনেকেই সাহস করে বলতে পারেনি। 

 

মেয়র আইভী বলেন, অনেক সময় হালিম আজাদ আমার কাছে আশ্চর্য্য লেগেছে যে, কি ধরণের বোধ নিয়ে কি শক্তি ও সাহস নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। আমি শুধু বলতে চাই অবশ্যই তিনি সাহসী নইলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তিনি কিভাবে করেছেন। যুদ্ধের পরে দেশ স্বাধীন হয়েছে এই দেশেকে গড়ার পেছনেও তাদের কর্তব্য ছিলো, দায়িত্ব ছিলো। কাজ করেছেন ও লেখনির মাধ্যমে তিনি সবসময় জাগ্রত ছিলেন। কিন্তু সন্তান হারানোর বেদনায় বাবার যে আকুতি ও প্রতিবাদ সেটা উনি দেখিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেই হালিম আজাদকেই চাই। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে প্রতিটা ক্ষেত্রে যেখানে অত্যাচার অবিচার অনাচার সেখানেই যেন হালিম আজাদের মতো তরুণরা রুখে দাঁড়ায়। 

 

কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.আবু সাইদ বলেন, যে দেশে গুণীজনের সম্মাননা দেয়া হয় না সে দেশে গুণীজনের জন্ম হয় না। তবে নারায়ণগঞ্জ হালিম আজাদের জন্ম হওয়ার সুবাদে সে যে শুভেচ্ছা-সম্মান, ভালোবাসা পেল তা অসাধারণ। এ সুবাদে কবি হালিম আজাদের চিন্তাশক্তি,তার জীবনাদর্শ, মুক্তচিন্তা, সৃজনশীল মনোভাব সম্পর্কে  শিশুরা জানতে পারলো। এর মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষগুলো জানতে পারলো হালিম আজাদকে। আমাদের পৃথিবীতে তিনটা জিনিসের খুবই অভাব। সেগুলো হল-সাহস, স্বাধীন চিন্তা ও একে অপরের প্রতি আস্থার খুবই অভাব।

 

নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, হালিমের (হালিম আজাদ) সাথে আমার অনেক স্মৃতি। যা বলে শেষ করা যাবে না। সেই কলেজ জীবন থেকে রাজনীতি, সংস্কৃতি চর্চায়ও  একসাথে পথচলা। হালিম (হালিম আজাদ) বলছিলো আমি খুব অসুস্থ। কেমন একটা অজানা শঙ্কা কাজ করছে। মনে হল খুব অল্প সময়েই ওয়াহিদ রেজাকে হারিয়েিেছ। এই সময়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন সময়। এই সময়টাতেই হঠাৎ চলে যেতে হয়। কিন্তু কষ্ট হলেও সত্যি যে আমরা আরেকটি হালিম আজাদ পাচ্ছি না। হালিম আজাদদের জন্য ব্যর্থতা যে তার শূণ্য জায়গাটা পূরণের জন্য আর কোনো হালিম আজাদ তৈরী করে যেতে পারেনি। তবুও একটাই প্রত্যাশা থাকবে সুন্দর সমাজ গঠনে যুগে যুগে হালিম আজাদের মত এমন গুণীজনদের আগমন ঘটবে। খেলাঘরের কাছে প্রত্যাশা রইলো  ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে তারা যেভাবে কাজ করছে এ সকল কাজ অব্যহত রেখে এ শিশুদের আগামীদিনের ভবিষ্যৎ হিসেবে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে গড়ে তোলা।

 

নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টি বলেন, নারায়ণগঞ্জে যে জিনিসটার অভাব  সেটা হল সাহসের।  আমরা প্রতিনিয়ত এত চাপে থাকি এত চাপে থাকার কারণে আমরা খুব বেশি সাহসী মানুষ পাই না। নারায়ণগঞ্জে যে কয়জন মানুষ সাহস দেখিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মেয়র আইভী,হালিম আজাদের মত মানুষরা। আর মেয়র আইভী,হালিম আজাদ হল আমাদের বাতিঘরের মত। তাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই, সাহস পাই, প্রতিবাদ করার সাহস অর্জন করি। যুগে যুগে এমন মানুষদের সাথে নিয়ে চলতি পারি এই কামনাই করি।

 

সভাপতির বক্তব্যে খেলাঘর আসর নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি রথিন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জে এমন অনেক গুণীজন আছে যারা শুধু আমাদের দেশে নয় সমগ্র উপমহাদেশে তারা সমাদৃত রয়েছে।  তাদের আমরা খুঁজে খুঁজে এনে সম্মান জানানোর প্রত্যয় নিয়ে আমাদের আজকের এ আয়োজন । হালিম আজাদ একধারে যেমন কবি,অন্যদিকে একজন সৎ সাংবাদিক যা আমাদের বর্তমান সময়ে বিরল। তার জীবনী থেকে পরবর্তী প্রজন্ম শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলুক। নিজেদের সমৃদ্ধ করুক।

 

অনুষ্ঠানে কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ বলেন, আজকের এ সম্মানের যোগ্য কোনো কাজ আমি আদৌ করতে পেরেছি কি না তা আমার জানা নেই। আমি মনেও করি না। আমি যা করেছি তা আমার চিন্তাভাবনা থেকে করেছি। আমি তখন তোলারাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। আমার বড় বোন ঢাকা ট্রেনের নিচে আহত হয়ে মারা যায়। আমি তখন মাকে বললাম ‘আমিও যদি এভাবে মারা যাই? মা তখন বলল,কোনো ব্যাপার না। আমি তোমাদের দেশের জন্যই দিয়ে দিয়েছি। সেদিন থেকেই আমি আমাকে মুক্ত করে দিয়েছি। জীবনে বহুবার মৃত্যুর সম্মুখীনও হয়েছি। এরশাদের আমলে বাংলাবাণীতে থাকাকালীন সময়ে আমাকে এরশাদের বাহিনীউঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। গুলিও করতে চেয়েছিলো। তারপর মুক্তিযুদ্ধে তিন তিন বার  মৃত্যুসম্মুখীন হয়েছিলাম। সর্বশেষ আমাদের সন্তান ত্বকী হত্যার পর মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম।  সেদিন ঢাকা থেকে এসে নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধুর সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম তখনই কিছু ছেলে পিছু নিয়ে আমার পিছন থেকে বলতে শুরু করে ‘শালাকে গুলি করে দেয়া উচিত। আমি তখন এক চায়ের দোকানীকে জিজ্ঞেস করলাম ওরা কারা  সে বলল ওরা ছাত্রলীগের, খানপুরে থাকে। সেদিনও আরো একবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। কিন্তু  একবারও মৃত্যু হয় নি। সম্প্রতি অফিসে কাজ করাকালীন সময়ে স্ট্রোক করি। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। সেদিনও আমি বেঁচে যাই। হয়তো এই দিনগুলোর জন্যই। আপনাদের কাছে আসবো বলে।

 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নৃত্য,আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করা হয়।
 

এই বিভাগের আরো খবর