বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০১৮  

সাহিত্য ডেস্ক(যুগের চিন্তা ২৪) :  আজ ১৯ জুলাই, বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনের অনন্য কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল এমনকি গোটা জাতি। তবে তিনি এখনো বেঁচে আছেন লক্ষ পাঠকের হৃদয়ে। 

বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিশীল ও জনপ্রিয় এই লেখকের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে তার স্বপ্নঘেরা নুহাশ পল্লীতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান,  গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আশপাশের কয়েকটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নুহাশপল্লীতে কোরআন তেলাওয়াত করবে। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের  স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও হুমায়ূন আহমেদের সন্তান নুহাশ, নিষাদ, নিনিত নুহাশ পল্লীতে এসেছেন।  নুহাশপল্লীতে কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। নুহাশপল্লীর আশপাশের মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র, পরিবারের সদস্য এবং হুমায়ুন আহমেদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন লেখকসহ প্রায় ৬শ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে।

এ ছাড়াও প্রকাশকরা নুহাশ পল্লীতে কথাশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়ে’ অনুষ্ঠিত হবে দোয়া মাহফিল। একইভাবে অন্য প্রকাশের পক্ষ থেকে নুহাশপল্লীতে বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, খ্যাতিমান কথাশিল্পী, চলচ্চিত্র-নাটক নির্মাতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তিনি বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পর পরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। বলা হয়, তার লেখা পছন্দ করেন না এমন মানুষও তার নতুন লেখাটি ‘গোপনে’ পড়ে ফেলেন। দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, যারা তার অন্তত একটি নাটক দেখেননি কিংবা তার কোনো বই পড়েননি। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য। তিনিই তরুণ-তরুণীদের করেছেন বইমুখী। প্রত্যেক বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতে হামলে পড়ে তার ভক্ত-অনুরাগীরা।

হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ১৬ তারিখ তিনি চলে যান লাইফ সাপোর্টে। সে অবস্থাতেই ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারোটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিউইয়র্ক থেকে ২০১২ সালের ২৩ জুন দেশে ফিরিয়ে আনা হয় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ। এরপরের দিন তাকে সমাহিত করা হয় তার গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়। সেখানেই অসীম ঘুমে শায়িত হয়ে আছেন হুমায়ূন আহমেদ।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মাঝে তিনি সবার বড়। খ্যাতিমান কম্পিউটার বিজ্ঞানী, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোটভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।