বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কচিকাঁচাদের গণতন্ত্র চর্চা

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

বিশেষ প্রতিনিধি : ছোট শিশু দিয়া, বৃষ্টি, টুসি সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছিল। ওরা কেউ কাধে ব্যাগ নিলনা। সকলে হাসতে হাসতে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। মাকে বলে গেল আজ স্কুলে ভোট। মানে নির্বাচন। আমরা সবাই ভোট দিব। কি মজা! দুই ঘন্টা পর ভোট দিয়ে ওরা বাসায় ফিরে এল। সকলেই খুশি। কেননা ওরা ভোট দিতে পেরেছে। এই ছিল কচিকাঁচাদের গণতন্ত্র চর্চার একটা ছোট দৃশ্য। 

 

গতকাল একযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫৪৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ছোটদের এই গণতন্ত্র চর্চা জেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ছোটদের নির্বাচন নিয়ে অভিভাবকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ছোট বেলা থেকে শিশুদের মৌলিক বিষয়গুলোর সাথে পরিচয় ঘটানো ভাল। এতে করে তাদের মধ্যে গণতন্ত্রবোধ, সামাজিক মূল্যবোধসহ অনেক মৌলিক বিষয়ের বীজ বপন হয়ে গেল। এই শিশুরাই একদিন জাতির হাল ধরতে পারবে। সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের ভিত্তি আরো মজবুত হবে। দেশও উন্নতি অগ্রগতির পথে হাঁটবে।  শিশুকাল থেকে গণতন্ত্র চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া, অন্যের প্রতি সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি, ঝরেপড়া রোধে সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রাথমিকেও স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠনের গুরুত্ব অপরিসীম।

 

এদিকে, স্টুডেন্টস কাউন্সিল নিয়ে সুধীসমাজেও একটা ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে বলেছেন, ছোট বাচ্চারা নিষ্কলুষ। ওদের মন একেবারে পরিষ্কার। ওরা সবকিছু পরিষ্কার বুঝতে পারে। সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলে। তাই এখনি উপযুক্ত সময় শিশুদের মধ্যে গণতন্ত্রের বীজ বপন করার। সেই কাজটিই করা হচ্ছে। ভালোকে অবশ্যই ভাল বলতে হবে। 

 

ছোটদের নির্বাচন হলেও আয়োজন ছিল একেবারে বড়দের ন্যায়। সেই ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, ভোট কেন্দ্র, নির্বাচন কমিশনার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, নিরাপত্তা কর্মী সবই ছিল। ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে ভোট দিয়েছে। প্রার্থীরাও ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছে। দৃশ্যটি কী চমৎকার ! জাতীয় সংসদ কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের চেয়ে এর গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়।

 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি শিক্ষনীয় বিষয়। গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৫৪৮টি প্রাইমারি স্কুলে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়।

 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানান, চলতি বছর ৫৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি খুঁদে ভোটারের এ নির্বাচনে ভোট দেয়ার কথা ছিল। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টায় ৫৪৮টি হাজার স্কুলে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। শিশুকাল থেকে গণতন্ত্র চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাশীল হওয়া, অন্যের প্রতি সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি, ঝরেপড়া রোধে সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রাথমিকেও স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে ২০১০ সালে স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০১৩ সাল থেকে সারাদেশে স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে ২০২০ সারে স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে।

 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে আমাদের প্রতিনিধি জানান, সারাদেশের মত সদর উপজেলারও ১২১টি স্কুলে (রোববার) একযোগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত  উৎসবমুখর পরিবেশে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

পাইনাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুসরাত চৌধুরি জানান, প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু হোক শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রের চর্চার লক্ষ্যেই স্টুডেন্টস কাউন্সিল নির্বাচন। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী আমেজে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। নির্বাচনে ছাত্র-ছাত্রীরাই ভোটার। উপস্থিতি বেশি। তারাই প্রার্থী এবং নির্বাচনের সব দায়িত্ব পালন করে। শিক্ষকরা তাদের সহযোগিতা করেন মাত্র।

 

রামারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন সুলতানা জানান, স্কুলের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী নির্বাচনে ভোটার ছিল। নির্বাচনে ১৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে।

এই বিভাগের আরো খবর