বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ঔষধ কেনায় মূল্যছাড় থেকে বঞ্চিত ভোক্তারা

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির মাধ্যমে ঔষধ বিক্রিতে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বাস্তবায়ন করার উদ্দ্যোগ নিয়েছে ঔষধ প্রশাসন। তবে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে ঔষধ বিক্রি বাধ্যতামূলক করার কারনে ঔষধ কেনায় ভোক্তারা এতদিন যে মূল্য ছাড় পেয়ে আসছিল সে সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবেন বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন ঔষধ ব্যবসায়ীরা। 


তবে ঔষধ বিপনন ব্যবস্থায় প্রচলিত নিয়ম বা কমিশন প্রথা নিয়ে ঔষধ প্রশাসন বা সমিতি কোন নতুন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি। ফলে ঔষধ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ঔষধ ব্যবসায়ী বা দোকানদাররা যে কমিশন বা মূল্যছাড় পেয়ে থাকে তা বহাল থাকছে। মাঝখানে নতুন নিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকছে ভোক্তাদের। যারা জীবন রক্ষার্থে খুচরা দোকান থেকে দু এক পাতা ঔষধ কিনে থাকেন।

 

কিন্তু মুদ্রার ওপিঠে ঔষধ ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তাদের মতে, কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে যোগসাজশে ঔষধ ব্যবসায়ীরা বছরের বিভিন্ন সময়ে ক্রেতাদের কাছ ‘গলাকাটা’ দাম আদায় করে মুনাফা লোটেন। দোকানে একজন ক্রেতা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে গেলেই সবচেয়ে জরুরী ও দামী ঔষধটি ‘সাপ্লাই নেই’ বলে বিক্রেতা গলাকাটা দাম আদায় করেন। 

 

জটিল রোগের কারনে যেসব অসুস্থ মানুষকে সারাজীবন ঔষধ সেবন করতে হবে-এমআরপি বাধ্যতামূলক করায় তাদের চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে। দুনিয়ার সব দেশেই পণ্যের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য থেকে বহু পণ্যে মূল্য ছাড় দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও তা চলে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশে একমাত্র কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি সে সুযোগ রুদ্ধ করে দিয়েছে। এতে ঔষধ কোম্পানীর ডিলার থেকে শুরু করে ছোট-বড় দোকানদারেরা-ই লাভবান হবে। এতেকরে সমিতির নামে সিন্ডিকেট করে ভোক্তাদের বঞ্চিত করে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার সুযোগ থাকে ।


সূত্রমতে, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ২০১৮-২০১৯ সালের বার্ষিক সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মো: সাদেকুর রহমান ঘোষনা করেন ১ জানুয়ারী ২০২০ তারিখ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খুচরা ঔষধ বিক্রয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

 

সারাদেশে সমিতির সকল শাখা তা বাস্তবায়ন করবে। সমিতির ওই সিদ্ধান্ত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ এক পত্রের মাধ্যমে সারাদেশের জেলা শাখাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরআগে ২২ ডিসেম্বর সমিতির চিটাগাংরোড উপ-শাখা তাদের আওতাধীন এলাকায় সদস্যদের একটি চিঠি দেয়।


চিঠিতে বলা হয়, সমিতির বার্ষিক সাধারন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত মূল্যে (এম,আর,পি) ঔষধ বিক্রয়ের জন্য অনুরোধ করা হইল। কেহ এই নির্দেশ অমান্য করলে বা ডিসকাউন্ট দিয়েছেন প্রমানিত হইলে উদ্ভুত যে কোন পরিস্থিতির জন্য সমিতি কোন রকম দায়-ভার বহণ করবে না।


এই নির্দেশনা জারির পর নতুন বছরের শুরুর দিন থেকেই তা কার্যকরও করা হয়। এরফলে ইতিপূর্বে যে সকল রোগী বড় দোকানগুলো থেকে কিছুটা ছাড় দেওয়া মূল্যে ঔষধ কিনতেন তারা আর সে সুযোগটা পাচ্ছেন না। সমিতির সিদ্ধান্তের আগে বড় বড় দোকানগুলো নিজেদের প্রাপ্ত কমিশন থেকে রোগীদের ছাড় (ডিসকাউন্ট) দিতেন। এখন তাঁরা তা বন্ধ করে দিয়েছেন।

 

সিদ্ধিরগঞ্জের সবচেয়ে বড় ঔষধের মার্কেট চিটাগাংরোড এলাকায়। সেখানে গিয়ে বেশ কয়েকটি ঔষধ ব্যবসায়ীর কাছে পূর্বের মত ছাড় দেওয়া মূল্যে ঔষধ কিনতে চাইলে তাঁরা তা দিতে রাজি হয়নি।এর কারন জানতে চাইলে বলেন, সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের কম দামে ঔষধ বিক্রি করা যাবে না।

 

বিক্রি করলে দোকানে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। আগে আমরা আমাদের কমিশন থেকে কিছু ছাড় দিয়ে রোগীদের কাছে ঔষধ বিক্রি করতাম। এতে তাঁরা উপকৃত হতেন। এখন আর তা সম্ভব নয়।

 

এ বিষয়ে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি চিটাগাংরোড উপ-শাখার সভাপতি মো: মোয়াজ্জেম হোসেন ময়না বলেন, আমরা এমআরপি বাস্তবায়নের যে চিঠি দিয়েছি তা আমাদের সিদ্ধান্ত না। এটা কেন্দ্রিয় কমিটির সিদ্ধান্ত। ডিসকাউন্ট কেন দেওয়া যাবে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাহলে তো এমআরপি বাস্তবায়ন করা হল না।

 

এমআরপি বাস্তবায়ন হবে খুচরা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ; পাইকারী বিক্রয়ের বেলায় না। এতে করে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কেন্দ্রিয় সিদ্ধান্ত ।

 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সচিব মো: নছর উদ্দিন বলেন, ঔষধ কোম্পানীগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঔষধ বিক্রয়ের কমিশন বৃদ্ধি করছে না। জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে। রিটেইলারেরা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

 

এসব বিষয় নিয়ে গত বছর ১৯ ডিসেম্বর সমিতির বার্ষিক সাধারন সভায় সারাদেশের ১৩/১৪শত কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট দাবি উত্থাপন করেছে। সবার দাবির প্রেক্ষিতে রিটেইলারদের (খুচরা বিক্রেতাদের) স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর