শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ওয়াসার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ : ‘মসজিদ’ই খাবার পানির ভরসা

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নগরের প্রায় সকল এলাকার ওয়াসার পানিতেই ময়লা ও দুর্গন্ধ। পানি পান তো দূরের কথা মাঝেমধ্যে ঘরের গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। এই বিষয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কোন সুফল পাওয়া যায়নি, ফলে ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

 

প্রতিকার না পাওয়ায় এখনও পানির তৃষ্ণা মেটাতেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তৃষ্ণা মেটাতে নগরবাসী ওয়াসার পরিবর্তে নগরের মসজিদগুলোর দ্বারস্ত হচ্ছেন। পানির জন্য সকাল বিকালে মসজিদে মানুষের সিরিয়াল তৈরী হয়ে যায়। তারা মসজিদ থেকেই প্রতিদিনের খাবার পানি সংগ্রহ করেন।

 

সরেজমিন নগরের একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৮ টা বাজলেই পানির প্রয়োজনে মসজিদে মসজিদে জগ, কলসি পানির পাত্র নিয়ে উপস্থিত এলাকাবাসী। সিরিয়ালে পানি সংগ্রহ শুরু হয়।  একেক এলাকার প্রতিটি মসজিদ থেকে ১০০-১৫০ টি পরিবারের খাবার পানির যোগান হয়। চাষাড়া, কালিবাজার, আমলাপাড়া, ডনচেম্বার, কলেজ রোড, গলাচিপা, দেওভোগ, থানা পুকুরপাড়সহ বেশিরভাগ এলাকায় একই চিত্র দেখা যায়।

 

আমলাপাড়া বড় মসজিদে সকাল ৮ টায় মসজিদের সাব-মার্সিবল পাম্প (পানি উঠানোর যন্ত্র) চালানো হলে এলাকাবাসী পানি সংগ্রহ করতে আসে। মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলওয়ার হোসেন জানান, প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘন্টা মোটর চালাই সকালে। আশেরপাশের মানুষ তখন আইসা পানি নিয়ে যায়।

 

আমলাপাড়ার বড় মসজিদের পাশেই মো.মুকুলের বাড়ি। তিনি বলেন, আমি সহ আমার বাড়ির সব ভাড়াটিয়া মসজিদ থেকে পানি নেয়। আর ওয়াসার যে পানি আসে সেই পানি খাওয়ার মতো পানি না। পানি লাল, আর পানি থেকে গন্ধ আসে। কখনো কখনো এতো খারাপ পানি আসে। গোসল করতেও পারি না।

 

আমলাপাড়ার জামিয়াতুল আশরাফিয়া রহমতুল্লাহ মাদ্রাসা থেকে সকাল ৮ টায় ও সন্ধ্যা ৮ টায় এলাকার মানুষ পানি সংগ্রহ করে। মাদ্রাসার পাশের আশরাফিয়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন বলেন, ওয়াসার পানি ভাল না, দূর্গন্ধ। এলাকার দুইটা পরিবার বাদে সবাই এখান থেকে পানি সংগ্রহ করে।  

 

গলাচিপা এলাকার অধিকাংশ মানুষ বায়তুল মামুর জামে মসজিদ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে। ওই এলাকার  রোকন উদ্দিন বলেন,  ওয়াসার পানি দিয়ে কাপড়-চোপড় ধোঁয়া, আর গোসল ছাড়া এই পানি দিয়ে আর কিছু করা যায় না। এই পানি খেলে ১২ মাসের ১১ মাসই ডায়রিয়ায় হাসপাতালে থাকতে হবে। পানি মসজিদের ডিপ কল থেকে আনি। প্রতিদিন পানি আনা-নেওয়া করতে অনেক কষ্ট হয়।

 

কলেজ রোড এলাকার আল্লামা ইকবাল রোড জামে মসজিদ থেকে পানি সংগ্রহ করে মনিরা বেগম। বয়স ষাটের কাছাকাছি। কলেজ রোডের একটি ৫ তলা বাড়ির প্রতি ফ্লাটে তিনি ৬ লিটার করে পানি সরবরাহ করেন। তিনি ১৫টি ফ্লাটের মানুষের জন্য প্রতিদিন ৯০ লিটার দিয়ে আসেন।

 

এর বিনিময়ে তিনি মাসিক ভিত্তিতে কিছু টাকা পান।  তিনি বলেন, পানি উঠাইতে অনেক কষ্ট হয়। সকাল-বিকাল দুইবেলা পানি নিয়ে আসি। আল্লামা ইকবাল রোডের প্রায় সকল বাসিন্দারাই এই মসজিদ থেকে পানি সংগ্রহ সংগ্রহ করে।

 

দেওভোগের একতা সড়কের এলাকাবাসী রীতিমত তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে শঙ্কিত।ওই এলাকার বাসিন্দা আমিনা বেগম বলেন, ওয়াসার পানি খাওয়া যায় না। যে পানিতে লাল লাল পোকা পাই, ওই পানি কি মুখে দেওয়া যায়? এজন্য একতা সড়ক  জামে মসজিদ থেকে পানি নেই।


 দেওভোগের জিমখানা লেকের আশেপাশে অধিকাংশ পরিবার দেওভোগ বড় জামে মসজিদ থেকে খাবার পানি  নেয়। এলাকাবাসী নিজাম উদ্দিন বলেন, ওয়াসার পানিতে থাকে ময়লা। এই পানি কি খাওয়া যায় না কি? ফুটাইয়াও পানি খাওয়া যায় না।

 

 থানা পুকুরপাড় জামে মসজিদ থেকে থানা পুকুরপাড় এলাকাবাসী পানি সংগ্রহ করে। প্রতিবার নামাজ পড়ার পড়েই বোতল ভরে পানি নিয়ে যায় এলাকাবাসী। নামাজ শেষে নামাজিদের পানির বোতল সহ নামতে দেখা যায়। মসজিদ থেকে আসরের নামাজ পড়ে দুই হাতে দুই বোতল দিয়ে পানি নিয়ে যাচ্ছেন মজিদ রহমান।

 

তিনি প্রতিবেদককে বলেন, পানিতে ময়লা থাকে এজন্য মসজিদ থেকে পানি নিয়ে যাই নয়ত মাম পানির বোতল কিনে নিতে হয়। পানি এতো ময়লা ফুটাইয়াও খাওয়া যায় না, রুচিতে বাঁধে।  

 

 নারায়ণগঞ্জ ওয়াসা মডস জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাসেম এই বিষয়ে তাঁর অফিসের টেবিলে রাখা বোতলজাত পানি দেখিয়ে বলেন, ‘এই যে আমি ওয়াসার পানি খাই। পানি তো পরিষ্কারই। নগরবাসী পানি কেন মসজিদ থেকে পানি সংগ্রহ করে কিংবা তারা কেন ওয়াসার পানি খায় না এটা আমি জানি না।’

 

এই বিভাগের আরো খবর