শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ওয়ার্ডে বাড়ি করলেই কাউন্সিলর ফারুকে চাঁদা দিতে হয় !

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে একটি আরসিসি সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ কাজের অনিয়ম, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশ কর্মজীবী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ব্যবসায়ী হাজী চাঁন মিয়া। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। 

 

সংবাদ সম্মেলনে চাঁনমিয়া কাউন্সিলর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কাউন্সিলর ফারুক ও তার পিতা ইউনুস মিয়া আমরা বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে আসছে। তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্রে আমি ও আমার পরিবার ভয় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। নাসিক ১ নং ওয়ার্ডের পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকার ওই সড়ক নির্মাণ করা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকাবাসির। তাই এলাকাবাসির পক্ষে আমি সড়কটি নির্মাণ করার জন্য মেয়র বরাবর আবেদন করি। 

 

জনস্বার্থে মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী সড়কটি নির্মাণ কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সড়কটির পাশে আমার দুইটি বাড়ি থাকায় কাউন্সিলর ওমর ফারুক নির্মাণ কাজে বাধা সৃষ্টি করে। অবশেষে সকল বাধা উপেক্ষা করে মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীর আন্তরিকতায় সড়কটির নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহবান সিটি মেয়রকে অবগত করালে মেয়র প্রকৌশলী সুমন দেবনাথ সরেজমিন পরিদর্শন না করে কাউন্সিলর ফারুকের সাথে আঁতাত করে মনগড়া প্রতিবেদন দেয়। 

 

তিনি বলেন, এ বিষয়টি মেয়রকে অবগত করালে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকৌশলী সুমন দেবনাথকে ৩ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেন। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে সরজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একজন সিটি কর্পোরেশন ও আরেকজন পাবলিক সার্ভেয়ারের উপস্থিতিতে ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মাপঝোপ করা হয়। 

 

এতে দেখা যায় বিদ্যমান ৮ ফুট সড়কের ৬ ফুট আমার নিজস্ব জমিতে। নিয়ম অনুযায়ী, রাস্তার দুই পাশের জমির মালিক সমান জমি ছাড়তে হয়। সড়কের উত্তর পাশের বাড়ির মালিক রফিকুল ইসলাম। আমরা সমপরিমাণ জমি ছাড়লে তার বহুতল ভবন ভাঙা পড়ে। তাই আলোচনা সাপেক্ষে মানবিক বিবেচনা করে আমি আমার একাই সড়কের জন্য ৮ ফুট জায়গা দিতে সম্মতি প্রদান করি। আর রফিকুল ইসলাম তার বাড়ির বারান্দা অংশ ভেঙে ২ ফুট জায়গা দিতে সম্মতি প্রদান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। 

 

সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপস্থিত এলকাবাসীর সামনে নাসিকের প্রতিনিধি প্রকৌশলী সুমন দেবনাথ রফিকুল ইসলামের বাড়ির ২ ফুট ও আমার বাড়ির বাউন্ডির দেয়ালের ২ ফুট ভাঙার জন্য লাল দাগ দেন। কাউন্সিলর ফারুক রফিকুল ইসলামের বাড়ি রক্ষা আর আমার বাড়ি ক্ষতি সাধন করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মেয়রকে ভুল বুঝায়। শেষ পর্যন্ত ১২ ফুটের পরিবর্তে ড্রেনসহ ১০ ফুট  প্রশস্থ সড়কে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়। আমি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেই।

 

চাঁন মিয়া কাউন্সিলর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, কাউন্সিলর ফারুক আমার ফ্যাক্টরিতে চাঁদা চাইতে আসে তখন তাদের চাঁদা না দেয়ায় আমার ফ্যাক্টরির দারোয়ানকে মারধর করে। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ পাইনাদি এলাকায় ৪ কাঠা জায়গার মালিক বাড়ি কাজ করতে হলে কাউন্সিল ওমর ফারুককে ১০ লাখ টাকা দিতে হয়। একই সাথে বাড়ি নির্মাণের মালামাল রড সিমেন্ট বালুসহ বিভিন্ন জিনিস তার কাছে কিনতে বাধ্য করে ফারুক। কোন ব্যক্তি নিজের ইচ্ছা মত বাড়ি করতে পারে না। অন্যথায় তিনি বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন। সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেনের মাদক ব্যবসা এই কাউন্সিলরের হাতে নিয়ন্ত্রাধীন বলে দাবি করেন চাঁন মিয়া।  

 

অভিযোগের সকল বিষয় অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক বলেন, ‘রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়তে বলায় এবং তিনি নিজেই এই রাস্তার টেন্ডার করেছেন, তবে রাস্তাটি ৮ ফুট করায় চাঁন মিয়া আমার উপর ক্ষুদ্ধ হন। তিনি সামনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলেকশন করবে তাই এমন মিথ্যা অভিযোগ করছে। রাস্তার ব্যাপারটির আগে তার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিলো। মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজির অভিযোগ পুরোটাই চাঁনমিয়ার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁর ফ্যাক্টরিতে যদি আমি কাউকে মারধরই করি তবে তিনি কেন থানায় অভিযোগ করলেননা। আসলে এগুলো বানানো।’   

এই বিভাগের আরো খবর