শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এমপির গাড়িকে সেবা দিতে দেরি : সিএনজি স্টেশনে হামলা, ভাঙচুর 

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০১৯  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : এমপি বলে কথা! সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গেলে তার গাড়ি কেন দাঁড়িয়ে থাকবে? হোক সেখানে যতই সিরিয়াল কিংবা ভিড় থাকুক না কেন? সবার আগে তো এমপিকেই সেবাটা দিতে বাধ্য কর্তৃপক্ষ। 


বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমানকে সেই সেবাটা দিতে ব্যর্থ হওয়ার দরুণ চরম মাশুল দিতে হয়েছে এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত সাহাবুদ্দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী, কর্তৃপক্ষকে। 


এমপির গাড়িকে ১০ মিনিটের সেবা দিতে দেরী হওয়ায় ভাঙচুর সুনামিতে ২৪ ঘন্টা পরেও ফিলিং স্টেশনটি একটি ভুতুড়ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে পড়ে রয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে এখনো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি সিএনজি স্টেশন কর্তৃপক্ষ।   


সূত্র জানিয়েছে, বুধবার (২৯ আগস্ট) দিবাগত রাত ৯ টার দিকে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকার সাহাবুদ্দিন  সিএনজি ফিলিং স্টেশনে সেলিম ওসমানের গাড়ি গ্যাস নেওয়ার জন্য যায়। সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি আগে  থেকেই লাইনে দাঁড়ানো ছিলো। কিন্তু এমপি সেলিম ওসমানের  গাড়িটি লাইন ভেঙে আগে যাওয়ার চেষ্টা করে। 


তখন উপস্থিত কর্মচারীরা সেলিম ওসমানের গাড়ির ড্রাইভারকে লাইনে দাঁড়াতে বলে। এনিয়ে তখন তর্কাতর্কি শুরু করে দেয় ড্রাইভার। এ সময় গাড়ির ভেতরেই ছিলেন এমপি সেলিম ওসমান।  গাড়ির ড্রাইভার ও পাম্পের লোকজনের মধ্যে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এমপি সেলিম ওসমান। 


এসময় পাম্পের ম্যানেজারও বেরিয়ে আসেন ভেতর থেকে। তাকে আসতে দেখে আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন সেলিম ওসমান। এক পর্যায়ে এমপি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। পরে রাত দশটার দিকে স্থানীয় আওয়ামী ও যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মী এসে পাম্পে ভাঙচুর চালায়। 


স্থানীয়রা জানিয়েছে, রাত ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল, ফায়জুল, আজমতসহ স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ  নেতা ওই ফিলিং স্টেশনে এসে হৈ- চৈ শুরু করেন।  ৫০/৬০ জনের মতো ছেলেপেলে এসে সিএনজি স্টেশনের বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করছে, ক্যামেরা ভাঙছে। 


একদল বিল্ডিং এর ছাদে বসে ভাঙচুরের সময় টহল দেয়। একদল ভেতরে ল্যাপটপ ও লুটপাট  চালাতে শুরু করে। কয়েকজন পাম্পে যাদের পেয়েছে সবাইকে মারধর করছিলো। প্রায় ২৫/৩০ মিনিটের তান্ডবে পুরো সিএনজি স্টেশনের উপর দিয়ে সুনামি বয়ে যায়। এরপর হুড়মুড় করে ওই নেতারাসহ ভাঙচুর করা ব্যক্তিরা চলে যায়। এর কয়েক ঘন্টা পরে পাম্পের লোকেরা পাম্পে তালা মেরে চলে যায়।


বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সরেজমিনে পাম্পটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, চারদিকে সুনশান নিরবতা। পাম্পের কোন লোকজন নেই। পাম্পের দুই তলা ভবনের সামনে ভাঙা সিসি ক্যামেরা পড়ে আছে। ভবনের গেট ও ক্যাশ কাউন্টারে ঝুলছে তালা। 


ভেতরে কিংবা বাইরে কোথাও পাম্পের কোন লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাত ৮টার দিকে এক লোক হুড়মুড়িয়ে ঢুকে সিএনজি স্টেশনের বাইরের বাতিগুলো জ্বালিয়ে বাইরে একটি নোটিশ বোর্ড টানিয়ে দিয়ে যান। 


সেখানে লেখা ‘যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে সাময়িক বন্ধ থাকার জন্য কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ কথা বলার চেষ্টা করলেও ব্যক্তিটি দৌঁড়ে সিএনজি স্টেশন ত্যাগ করেন।  


আশেপাশের লোকজন জানিয়েছে, বুধবার রাতে ভাঙচুরের পর থেকেই সিএনজি স্টেশনের লোকজন ও এরপাশের দোকানদাররা আতঙ্কিত হয়ে দোকান ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। সাংবাদিক, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন এসে মাঝে মধ্যে নানা প্রশ্ন করছেন এগুলো এড়াতেও অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। 


বুধবার রাতের তান্ডবের পর সিএনপি স্টেশনের লোকজনকে এক মুহুর্ত্বের জন্যও আর দেখা যায়নি। সন্ধ্যার পর এসে শুধু এক লোক এসে বাতি জ্বালিয়ে সটকে পড়েছেন। সারাদিনে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 


এ বিষয়ে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-২) সাজ্জাদ রোমন বলেন, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের  লোকজন যদি কোন লিখিত অভিযোগ দেয় সেই আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের পক্ষ থেকেও বেশ কয়েকটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। 
কি ঘটেছিলো সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাঙচুরের ঘটনায় ফতুল্লা থানার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে আসল ঘটনা উদঘাটন করা হবে। 


এদিকে সাহাবুদ্দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাইদ বলেন, ফিলিং স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনায় কেউ কেউ এমপি সেলিম ওসমানকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে আমি ছিলামনা। আমার স্ত্রী ও সন্তান ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় আমি ঢাকায় ছিলাম। 


আমাকে ফোনে জানানো হয়েছে ফিলিং স্টেশনে হামলা হয়েছে। হামলাকারিরা সিসি ক্যামেরা ভেঙে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার নিয়ে গেছে। তাই কারা হামলা চালিয়েছে তাদের চেনা যাচ্ছেনা। স্টাফরাও কাউকে চিনতে পারেনি। কাউকে না চেনায় সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো।


 সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান দুজনেরই সাথে আমার সম্পর্ক ভালো। তারা আমাদের দূরের কেউ নন। আমি পরে শুনেছি ঘটনাটি তাই এখনো বুঝতে পারছিনা কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো।


তবে সূত্র জানিয়েছে, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক, স্টাফ  ও এরআশেপাশের প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোন ব্যাপারেই কিছু পরিস্কার করে তারা বলতে চাইছেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর  শক্তিশালী ভূমিকায় আসল ঘটনা উদঘাটন এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভবপর হবে।  
 

এই বিভাগের আরো খবর