শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জনও কম নয়

প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : এবারের দ্বাদশ বিশ্বকাপে শেষ চারের আশা শেষ। সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেও এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা বেশ নজর কেড়েছে ক্রিকেটে কুলীন দেশগুলোর। বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ক্রিকেট বিশ্লেষকরা তাদের কলামে বাংলাদেশের ক্রীড়া নৈপুণ্যের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। 

 

ধারাভাষ্যকক্ষে, সাবেকদের বিশ্লেষণে উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা পেয়েছে দল। গত মঙ্গলবার নিজেদের অষ্টম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানের ব্যবধানে হেরে সেরা চারের সমস্ত স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছে টাইগাররা। সেরা চারের দৌড় থেকে ছিটকে পড়লেও, টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই বেশ ধারাবাহিক ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বোলিংয়ে খুব একটা ধাঁর না থাকলেও ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যে আসর জুড়েই দারুণ সব লড়াই উপহার দিয়ে আসছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

 

টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিয়ে টাইগাররা জানান দিচ্ছিল, সেমির জন্য আমরাও ফেভারিট। এরপর নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় প্রতিপক্ষের সঙ্গেও তীব্র লড়াই করে বাংলাদেশ। কিন্তু ছোট-খাটো কিছু ভুলে ওই ম্যাচ দুটি হাতছাড়া হয়ে যায়। যার মাশুল এখন বেশ ভালো করেই দিতে হচ্ছে। 

 

শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা বাংলাদেশ নিজেদের অষ্টম ম্যাচ ভারতের বিপক্ষেও দেখিয়েছে। হয়তো উপরের সারির একজন ব্যাটসম্যান আরও একটু দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারলে ভারত বধের কাব্যও লিখতে পারতো মাশরাফির দল। কিন্তু তা আর হয়নি। ফলে ম্যাচ হার আর সেমির আগেই বিদায় নিশ্চিত হয় স্টিভ রোডসের ছাত্রদের। 

 

এদিকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে না পারলেও পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে বাংলাদেশ দলের লড়াকু মানসিকতা বেশ মনে ধরেছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলির। তাই ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন তিনি, বাংলাদেশ সত্যিই পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত লড়াকু ক্রিকেট উপহার দিয়েছে। 

 

এই লড়াই করার মানসিকতার জন্য তাদের বিশেষ কৃতিত্ব দেয়া উচিত। আর তারা তো শেষ উইকেট পর্যন্ত জয়ের লড়াইয়ে টিকে ছিল। আমাদেরকে জয়ের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। জয় পাওয়ায় আমরা খুশি। দুর্দান্ত একটি বিশ্বকাপ কাটিয়ে বিশ্ববাসীর নজর কেড়ে নিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। এখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পন্ড হওয়া হওয়া ম্যাচটির কথা কিংবা অল্পের জন্য হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড ম্যাচটির কথা বার বার ঘুরে ফিরে আসছে। 

 

সেমিতে না যাওয়ায় ভক্ত-সমর্থকদের আবেগের বাড়াবাড়ি থাকবে-অপ্রাপ্তির আক্ষেপ থাকবে ঠিকই, কিন্তু অর্জনের বিশাল খাতার লেখাগুলো তো আর মুছে যাবে না। ব্যাট-বল হাতে সাকিব আল হাসানের একের পর এক অনন্য কীর্তি, মুশফিকুর রহিমের ধারাবাহিক রান পাওয়া, মোস্তাফিজুর রহমান-মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনদের উইকেটের শিকারে দুই অঙ্কে পৌঁছানো, নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোর, সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতা-এত সাফল্য বিশ্বকাপের একক কোনো আসরে আগে কখনওই তো পায়নি বাংলাদেশ। যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলে নিজেদের ছাপ রেখেছে দল, আদায় করে নিয়েছে স্তুতি, শেষ ম্যাচেও নিজেদের সেই ঘরাণার ক্রিকেটের সেরাটা দেখাতে চাইবে বাংলাদেশ।

 

বিশ্বকাপে এক আসরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি জয় ২০০৭ ও ২০১৫ আসরে, তিনটি করে। এবার তিনটি জয় পাওয়া হয়ে গেছে এর মধ্যেই। শেষ ম্যাচে হাতছানি নতুন রেকর্ডের। সব মিলিয়ে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ থেকেও পাওয়ার আছে অনেক কিছু। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ক্রিকেটে যে পথ ধরে হাঁটছে, এরকম একটি টুর্নামেন্ট কাটানো বা একটি বেশি জয়, দলকে দেবে আরও এগিয়ে চলার বিশ্বাস। 

 

সবচেয়ে বড় কথা, শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে মাথা উঁচু করেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে পারবে বাংলাদেশ। পাওয়ার তাই এখনও অনেক কিছু আছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপেরও কিছুটা আছে বাকি। বাংলাদেশের বিশ্বকাপও কি শেষ ? ম্যাচ এখনও বাকি একটি। আপাতদৃষ্টিতে যেটিকে মনে হতে পারে নিয়ম রক্ষার ম্যাচ। আদতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচ থেকেও পাওয়ার আছে কিছু। সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। তবে একটি লক্ষ্য পূরণের সুযোগ এখনও আছে।

 

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিপক্ষের নাম উল্লেখ করে না বললেও দল সংশ্লিষ্ট সবাই নানা সময়ে, নানা জায়গায় বলেছেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রাথমিক লক্ষ্য ৫টি জয়। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানকে হারানো। সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের অন্তত একটিতে জয়। সম্ভাব্য সেই পাঁচ জয়ের তিনটি ধরা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ ভাসিয়ে নিয়েছে বৃষ্টি। লক্ষ্য পূরণের শেষ ধাপ পাকিস্তানকে হারানো।

 

সেমিফাইনালের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন তাতে জোড়া লাগবে না। তবে নিজেদের কাজটুকু করতে পারার স্বস্তি থাকবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় আরেকটি দিক থেকেও বেশ জরুরি। পয়েন্ট টেবিলের ৫ নম্বরে থাকা। নিজেদের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারালে এবং পরদিন ভারতের কাছে শ্রীলঙ্কা হারলে বাংলাদেশই থাকবে পাঁচে। শীর্ষ চারের বাইরে এই অবস্থানগুলোর মূল্য হয়তো এমনিতে সামান্যই আছে। তবে বিশ্বকাপের মতো আসরে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে পঞ্চম সেরা দল হতে পারলে, বাংলাদেশের জন্য সেই অর্জন কম কিছু হবে না। 

এই বিভাগের আরো খবর