শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এবার ১২ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আটক

প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০ এর অধিক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার ১২ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে আটক করেছে র‌্যাব-১১। গ্রেফতার করার সময় অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের মোবাইল ও  কম্পিউটার থেকে একাধিক অশ্লীল ভিডিও জব্দ করে র‌্যাব।

 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল ১১টায় ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। গ্রেফতারকৃত অধ্যক্ষের নাম মাওলানা মো. আল আমিন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ভূঁইয়াপাড়া এলাকার রেনু মিয়ার ছেলে। বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। একই সঙ্গে তিনি ফতুল্লা এলাকার একটি মসজিদের ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

 

খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক লে: কর্ণেল কাজী শামসের উদ্দিন, ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম ও পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল আজিজ।

 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক লে.কর্ণেল কাজী শামসের উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া স্কুল শিক্ষকের ধর্ষণের ঘটনাটির প্রচারিত বিভিন্ন নিউজ ও ভিডিও আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজে আপলোড করেছিলাম। এই নিউজ দেখে স্থানীয় একজন মহিলা যখন ফেসবুকে দেখছিলেন, তখন তার তৃতীয় শ্রেণী পড়–য়া মেয়ে এটি দেখে তার মাকে জিজ্ঞাসা করে যে, ‘স্কুলের ওই শিক্ষকের শাস্তি হলে আমাদের হুজুরের কেন শাস্তি হবে না? আমাদের হুজুরও তো আমাদের সাথে এমন করে। পরে শিশুটি তার মাকে বিস্তারিত জানালে শিশুটির মা র‌্যাব অফিসে এসে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন যে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ  একাধিক ছাত্রীকে তার বাসায় পড়তে গেলে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে।

 

তিনি জানান, এরপর র‌্যাব এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু ঐ শিক্ষার্থী নয় ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর যাবৎ ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পর্যন্ত ১২ জন ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানিও করেছেন।

 

তিনি আরো জানান, অধ্যক্ষ আল আমিন মাদ্রাসার একটি রুমে তার পরিবার নিয়ে থাকতো এবং একটি অফিস কক্ষসহ কয়েকটি ক্লাস রুমে ছেলে মেয়েদেরকে পড়াতো। তার স্ত্রী একজন পর্দানশীল মহিলা, সে ভিতরের দিকে থাকতো, সামনে তেমন একটা আসতো না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় পড়তে আসা ছাত্রীদেরকে ডেকে তার রুম ঝাড়– দেওয়া ও বিভিন্ন কৌশলে এনে রুমের ভেতর তাদেরকে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করে।

 

র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক জানান, এ সকল ঘটনার প্রমাণস্বরুপ আমরা তার মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার তল্লাশী করে প্রচুর পর্নোগ্রাফী ভিডিও পেয়েছি। কিছু কিছু পর্নোগ্রাফী সে নিজেও তৈরী করেছে।  সে তার কাছ পড়তে আসা কোন ছাত্রীর ছবির মাথার অংশ পর্নোগ্রাফি ভিডিওর সাথে সংযুক্ত করে ছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল  করে একাধিকবার ধর্ষণ করে।

 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক অধ্যক্ষ আল আমিন ধর্ষণ,ধর্ষণের চেষ্টা ও যৌন হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তার দাবি তিনি আগে এমনটা ছিলেন না শয়তানের প্ররোচনায় পরে সে এমনটা করতেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অধ্যক্ষের শাস্তি  ও মাদ্রাসা বন্ধের দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।

 

উল্লেখ্য,এর আগে গত ২৭ জুন  সিদ্ধিরগঞ্জে অক্সফোর্ড নামে একটি বেসরকারী স্কুলের ২০ জনেরও অধিক ছাত্রীকে ৪ বছর ধরে যৌন হয়রানীসহ ধর্ষণের অভিযোগে সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল ও প্রধান শিক্ষক জুলফিকার ওরফে রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১।
 

এই বিভাগের আরো খবর