শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এক সপ্তাহে ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার ৫ নারী ও শিশু  

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : জেলা জুড়ে একের পর এক ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ সকল নির্মম ঘটনাগুলো থেকে বাদ পড়ছে না শিশুরাও। আর এ ধর্ষণের ঘটনাগুলো অধিকাংশই পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয়দের দ্বারা সংগঠিত। ৫ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহে ৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩ জনই শিশু।


বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী ধর্ষণকে সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি হিসেবে উল্লেখ্য করে বলেন, সমাজের মানুষের চিন্তা চেতনা বিকৃত হওয়ার ফলেই ধর্ষণের ঘটনা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে।আর আইনের শাসনের যথাযথ প্রয়োগের হলে এই ঘটনা গুলো হ্রাস পাবে। ধর্ষণের প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠ বিচার করতে হবে। এছাড়াও প্রতিটি শিশুর মা-বাবাকে তাদের সন্তানের প্রতি সচেতন হতে হবে। 


বিভিন্ন তথ্যসূত্রানুসারে, গত ৯ ডিসেম্বর সোনারগাঁয়ে সাড়ে চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তারই চাচার বিরুদ্ধে। ১০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সোনারগাঁর অলিপুরা এলাকা থেকে জীবন (২৭) নামে ঐ চাচাকে আটক করে র‌্যাব-১১।


একইদিন ফতুল্লা থানার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকায় ষোল বছর বয়সী কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে একটি ইটভাটার পাশে গণধর্ষণের ঘটনায় কিশোরীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাতেই পুলিশ অভিবুক্ত ছয় ধর্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ।গণধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারকৃত ছয় যুবক দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।


গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানার মুক্তিরকান্দি গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে রাসেল, নেত্রকোনা জেলার কালিয়াজুরি থানার লিন্সা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত. রুকু মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া, মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার বিক্রমপুর এলাকার মৃত. খোরশেদ আলমের ছেলে শাহাদাৎ হোসেন, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার বিরামপুর গ্রামের ফরিদের ছেলে সুমন, একই জেলার কেন্দুয়া থানার হরিপুর গ্রামের হাদিছুর রহমানের ছেলে রবিন এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার বোয়ালিয়া ফকির বাড়ির আ.লতিফের ছেলে আল আমিন।আসামিরা প্রত্যেকেই একে অপরের বন্ধু এবং দাপা ইদ্রাকপুরসহ আশপাশের এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে। 


পরদিন দুপুরে ফতুল্লা থানার সম্মেলন কক্ষে জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ধর্ষিতা কিশোরী নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোপচর ফকিরবাড়ি এলাকায় কে এম ইন্টারন্যাশনাল এন্ড এ্যাডভ্যান্স মশার কয়েল কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। ভুক্তভোগী কাজের খোঁজে ভাইয়ের সাথে বের হলে ধর্ষকরা তাদের থেকে টাকা ছিনতাই করে ভাইকে তাড়িয়ে দিয়ে বোনকে গণধর্ষণ করে।


সোমবার রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জে পাইনাদী উত্তরপাড়া এলাকায় এক কিশোরীকে (১৬) গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। ১০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে ওই কিশোরী বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তিনজনকে আসামী করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। পুলিশ রাতেই রবিন (১৯) ও কালাম (৩০) নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।


পুলিশ ও মামলার সূত্রে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী মিজমিজি চৌধুরীবাড়ি এলাকার একটি মশার কয়েল ফ্যাক্টরিতে চাকুরী করছে। এ সুবাদে একই এলাকার অটোরিকশা চালক রবিনের সঙ্গে ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।সোমবার রাতে ওই কিশোরীকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রবিন তার এক বান্ধবীসহ তাকে পাইনাদী উত্তর পাড়ায় একটি বিলে নিয়ে যায়।


 
এ সময় তার বান্ধবী ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে বাড়িতে চলে যায়। পরে ওই কিশোরীকে বিলের ঝোপের মধ্যে নিয়ে জোরপূর্বক রবিন, কালাম ও ফারুক হোসেন নামে ৩ যুবক পালাক্রমে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।


 
৮ ডিসেম্বর চকলেট খাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৪ বছরের শিশু কন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় লম্পট ফারুক (৪৫)কে গ্রেপ্তার করেছে ধামগড় ফাঁড়ি পুলিশ। এ ব্যাপারে ধর্ষিতা শিশুটির মা বাদী হয়ে সোমবার বিকেলে ফারুককে আসামি করে বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরদিন সকালে বন্দর থানার গকুলদাসের বাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।


 
৫ অক্টোবর রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের পর্শি এলাকায় প্রেমের সম্পর্ক ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শনিবার  রাতে ধর্ষক ও তার দুই সহযোগীকে আসামি করে ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। ধর্ষক খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আবুল কালাম আজাদ। এ ঘটনায় ধর্ষক আবুল কালাম আজাদ ও তার বন্ধু সবুজকে রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই বিভাগের আরো খবর