মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

উবে গেছে মানবতা !

ফরিদ আহম্মেদ বাধন

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২০  

করোনা ভাইরাস। একটি মাত্র ভাইরাসের কারণে মানবতা যেনো হারিয়েছে যেতে বসেছে। করোনা আক্রান্ত নয় তবে অসুস্থ, এমন মানুষও এখন অমানবিকতার শিকার হচ্ছে অহরহ। পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে হাসপাতাল সর্বত্র  যেনো এখন ভর করেছে অমানবিকতা।

 

যুবকটির এ্যাজমার সমস্যা ছিল। শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণে তাকে নিয়ে তাঁর স্বজনরা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গত ১০ মে রাতে ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকার হাসপাতালগুলোতে। কিন্তু না, কোথাও তাঁর চিকিৎসা দিতে চাননি চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের ধারণা ছিল রিমন হোসাইন করোনায় আক্রান্ত। তবে শেষ পর্যন্ত তার চিকিৎসার জন্য ঠাঁই হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

 

 তবে ততক্ষণে বেশ দেরী হয়ে গেছে। ১১ মে ভোরে  রিমন এই পৃথিবী থেকে  না ফেরার দেশে চলে যায়। রিমনের মৃত্যুর সংবাদে তার পিতা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যবরণ করেছে। রিমনের মৃত্যুর পর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাহলে করোনা সন্দেহে রিমনের চিকিৎসা দিতে ঢাকার হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ যে অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তাকে বি বলা যায় ?

 

শুধু রিমনই নয় শহরের দেওভোগের কৃষ্ণচূড়ার মোড় এলাকায় গিটারিষ্ট হিরো যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তাকে বহন করতে যে এ্যাম্বুলেন্স এসেছিল তা এলাকাবাসী বহণ করতে বাধা দিয়েছিল। আর হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার কারণে হিরোর মৃত্যু হয়েছিল বলে দাবী করেছেন তার স্বজনরা। অপরদিকে খানপুর হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে স্ত্রী মৃত্যু বরণ করায় স্বামী পালিয়ে যায়। 


চিনের উহান শহর থেকে সৃষ্ট করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের কারণে দেশ থেকে দেশ বিচ্ছিন্ন। কোলাহলের নগরী পরিনত হয়েছে ভুতরে নগরীতে। সামান্য জ্বর,ঠান্ডা জনিত রোগীর খবরে মানুষ আতকে উঠছে। স্থানীয় ফার্মেসীতে জ্বর এবং ঠান্ডা জনিত রোগের কথা শুনলে যেনো ঔষধ বিক্রি করতেও তারা অস্বস্তি প্রকাশ করে। কেউ যদি জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে পরিবারের লোকজন সেই ব্যক্তিকে নিয়ে যেনো পড়ছেন মহাবিপদে !  

 

বছরের পর বছর ধরে যে সমস্ত স্বজনদের সাথে বসবাস তারাই করোনার কারণে হয়ে যাচ্ছে পর।  করোনা উপসর্গ থাকলেই সে ব্যক্তি করোনা রোগী নয় এমনটি ভাবছে না কেউ।  


অপরদিকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে সন্তান, স্ত্রী এমনকি পাড়া প্রতিবেশীও সরে যাচ্ছে দূরে। সড়কের পাশে মৃত মানুষ পড়ে থাকতে দেখলেও সেই মানুষের পাশে কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে নিহত ব্যক্তির পাশে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দাঁড়াতে দেখা গেছে।  


অনেক আগে থেকেই এ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার রিমন। হঠাৎ করে গত ১০ মে রাতে তার শ^াসকষ্ট দেখা দেয়। স্বজনরা তাকে নিয়ে রাতেই ছুটে গিয়েছিলেন ঢাকায়। রিমনকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ধর্ন দিয়েও তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেনি। হাসপাতালগুলোর  ধারণা ছিল রিমন করোনায় আক্রান্ত। শেষ রাতে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সকালে তার মৃত্যু হয়।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রিমনের চাচা সানিক হোসেন মনে  ক্ষোভ নিয়ে বলেছেন, এই  দেশে কোন রোগেরই চিকিৎসা নেই। নিজের চোখের সামনে দেখছেন চিকিৎসক ও নার্সরা তার ভাতিজাকে ধরেও দেখেনি। কাজেই প্রশ্ন আসে মানবতা আজ থাকতেও নেই। অজানা আশংকায় সবাই যার যার প্রাণ বাঁচাতে যেনো পিছিয়ে আছেন অসুস্থ স্বজনের কাছে থেকে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর