শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে প্রতীকী মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২০  

ঈদের আগে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের চলতিসহ বকেয়া বেতন ও পূর্ণ বোনাস পরিশোধ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ, নগদ সহায়তা ও আর্মি রেটে রেশন নিশ্চিত করার দাবিতে প্রতীকী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

বুধবার (১৪ মে) সকাল ১১ টায় জেলা সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ প্রতীকী মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

 

সংগঠনের জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সহসভাপতি এমএ মিল্টন, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ প্রমুখ। 

 

মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের মোট শ্রমজীবী মানুষের ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক যাদের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি দৈনিক কাজভিত্তিক মজুরি চুক্তিতে নিয়োজিত শ্রমিক। গত ২৬ মার্চ থেকে অদ্যবধি ৪৯ দিন যাবত লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে চরম অসহায়ত্ত্বের মধ্যে দিনযাপন করছে। সরকার করোনা পরিস্থিতি উত্তরণে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই প্রণোদনা প্যাকেজে শ্রমজীবী মানুষের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। বরাদ্দকৃত নগদ সহায়তার ৭৬০ কোটি টাকা অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করলে প্রতি শ্রমিক পাবে প্রায় ১৪০ টাকা মাত্র যা সহায়তার নামে প্রহসনের শামিল। 

 

বক্তারা আরও বলেন, প্রচার মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ প্রদানের যত চিত্র দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাণের দাবিতে শ্রমজীবী মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি বাসাভাড়া পরিশোধের চাপ ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর ও শিল্পাঞ্চলে বসবাসকারী শ্রমজীবী দিনমজুর মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে। 

 

নেতৃবৃন্দ বলেন, ১০ দিন পরে মুসলিম ধর্মাবলম্বী সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ উপলক্ষে সরকার ৫০ লাখ শ্রমিককে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে অথচ দেশে শুধু অতি দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই ১ কোটি ৯০ লক্ষ যাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেকের কমপক্ষে ৮ হাজার টাকা প্রয়োজন। করোনা অজুহাতে সরকারি তহবিল থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সহযোগিতা গ্রহণ করার পরও শিল্প মালিকরা চরম দায়িত্বহীন অপরাধমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছেন। কর্মস্থলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারখানা চালু করার অনুমতি নিয়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় আয়োজন ছাড়াই কারখানা চালাচ্ছে।


মানববন্ধনে উল্লেখ বলেন,  ত্রিপক্ষীয় সভার সিদ্ধান্ত হয় সাধারণ ছুটির সময় শ্রমিক ছাঁটাই হবে না। কিন্তু মালিকরা বিভিন্ন অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত রেখেছে। শিল্প পুলিশের রিপোর্ট অনুসারে সরকারি নির্দেশনার পরও শুধু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে প্রায় নয় হাজার শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। কটন পাওয়ার, প্রি-সাইজ, সরকার ডায়িং, সান গার্মেন্টসসহ অনেক কারখানায় এখনও মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। ছুটিতে থাকা শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতনের ৬৫ শতাংশ এবং কর্মরত শ্রমিকদের ১০০ শতাংশ মজুরি পরিশোধ কৌশলে সরকারের অনুমোদন নিয়েও এখন প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধেও মালিকরা টালবাহানা করছে। ঈদ বোনাস শ্রমিকের সারাবছরের কাজের ধারাবাহিকতার অধিকার অথচ করোনা দুর্যোগে মাত্র ১ মাস উৎপাদন বন্ধ থাকার অজুহাতে ঈদ বোনাস কর্তনের অনৈতিক চেষ্টা করছে। অথচ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী চরম দুর্যোগকালীন সময়েও শ্রমিককে বাঁচাতে মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকের উপর নির্যাতন করছে যা নিন্দনীয়। 

 

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের চলতিসহ বকেয়া বেতন ও পূর্ণ উৎসব ভাতা পরিশোধ, সরকারি নির্দেশনা ভঙ্গকারী মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, মালিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শ্রমিকের প্রাপ্য পাওনা পরিশোধ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ, নগদ সহায়তা, আর্মি রেটে সারাবছর রেশন সরবরাহ, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় আয়োজন করা এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকের চিকিৎসা ও সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, কৌশল করে, ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার অপচেষ্টা বুমেরাং হয়ে যেতে পারে।

এই বিভাগের আরো খবর