শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়ছে মৌসুমী ভিক্ষুকের দৌরাত্ব

প্রকাশিত: ২০ মে ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ঈদকে কেন্দ্র করে শহরের আনাচে কানাচে বেড়েছে মৌসুমী ভিক্ষুকের ভীড়। ১০ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্বো বৃদ্ধ পুরুষ/মহিলারা ঈদের এ সময়টাতে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে এ ভিক্ষাবৃত্তিকে । 


এর মধ্যে স্বল্পসংখ্যক ভিক্ষুক ভিক্ষা পাওয়ার উপযুক্ত হলেও অনেকেই রয়েছেন অভিনয়ধারী ভিক্ষুক। ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার ভিক্ষুক নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে মৌসুমী ভিক্ষুক এসে এর সংখ্যা দ্বিগুণ করে তুলছে।

 


এদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেছে যে, তুলনামূলক বেশি আয়ের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নগরীতে ছুটে আসেন তারা। বাড়তি আয় শেষে ঈদের পর তাঁরা তাদের অঞ্চলে ফিরে যাবেন।

 


 সোমবার (২০ মে) নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মৌসুমী ভিক্ষুকরা দল বেঁধে নেমে পড়েছেন।
নগরীর প্রায় প্রতিটি রাস্তাঘাট, মার্কেট, হাসপাতাল, বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস আদালত, বাসস্ট্যান্ড, বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন, মসজিদ প্রভৃতি এলাকায় দল বেঁধে ভিক্ষুকরা বাড়তি আয়ে আশায় নেমে পড়েছেন ।

 


বিশেষ করে  চাষাঢ়া শহীদ মিনার,ফুটপাত ও মার্কেটগুলোতে এ সকল মৌসুমী ভিক্ষুকদের আনাগোনা বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন রোডগুলোতে ও ভিক্ষুকদের ভীড় দেখা গেছে।  আর এসব মৌসুমী ভিক্ষুকদের কারণে পথচারীদের পরতে হচ্ছে  বিব্রতকর পরিস্থতিতে।

 


ঘুরতে ঘুরতে ২নং রেল গেটের রেল ক্রসিং এর সামনে এসে কথা হয় ভিক্ষুক পিন্টু মিয়া,বয়স ১৪,বাসা চানমারি বস্তি,পরিবারের সদস্য সংখা ৪ জন। ঘরভাড়া ২২০০ টাকা এক রুমের মাসিক ভাড়া গুনতে হয়। পরিবারের কর্তা অসুস্থ, ৪ বছরের ছোট ভাই ও মা বিভিন্ন বাসায় কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করেন। পিন্টুর দৈনিক আয় ১৫০- ২০০ টাকা। ওর সাথে কথা বলে জানা গেলো- আমি বাচ্চা বলে আমাকে অনেকেই তাড়িয়ে দেয়, সাহায্য করতে চায় না।  

 


চাষাঢ়া এসে দেখা যায় ভিক্ষুকদের মেলা। বঙ্গবন্ধু রোডের দুই পাশের ফুটপাত জুড়ে তাদের অবস্থান। কেউ শুয়ে, কেউ বসে তাঁদের ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয় লুৎফা টাওয়ারের সামনে এক ভিক্ষুকের সাথে,নাম প্রকাশে অপরাগতা জানিয়ে তিনি বলেন, ভিক্ষা না করলে খামু কী? কে দিব খাওন। না চাইলে দো আল্লাহও দেয় না। আর তো মানুষ ।

 


ময়মনসিংহ থেকে আসা শহরের রাইফেল ক্লাবের সামনে ভিক্ষাবৃত্তির করতে আসা রহিমা বেগমের কাছ থেকে জানা গেলো ভিন্ন চিএ। পাগলায় দুর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন দু‘দিন হলো। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে  দৈনিক ৩৫০-৪০০ টাকা আয় করেন। ঈদ পর্যন্ত এ শহরে থাকবেন এবং পাশাপাশি শহরের ধনীদের কাছ থেকে যাকাত ফিতরা আদায় করবেন বলে জানান।

 


এদিকে মৌসুমী ভিক্ষুকদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতির চিত্রও। অনেক সময় দেখা যায় টাকা না দিলে গায়ে হাতে ধরে বসছে। আবার কেউ পা ধরে বসে আছে।

 


ভিক্ষুকদের এহেন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে পথচারী আহমদ আলী জানান, যে হারে ভিক্ষুক বাড়তেছে। মনে তো হয় নারায়ণগঞ্জ ভিক্ষুকদের শহর হয়ে যাবে।


আরেকজন পথচারী মন্ডল বিশ্বাস বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি করে তো ঠিক আছে  কিন্তু না দিলে যে গায়ে হাতে পায়ে ধরা শুরু করে। তখনই বিরক্তটা লাগে।
ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই কয়েক হাজার ভিক্ষুক নারায়ণগঞ্জে চলে আসে। কিছু চলে গেলেও বাকিরা অনেকেই স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয় শহরে বা শহরের আশেপাশে কোথাও।
 

এই বিভাগের আরো খবর