শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আড়ালে থাকছে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : বর্তমানে দেশে ৫৯টি ব্যাংক রয়েছে । এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক ৪১টি, রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংক ৯টি এবং অবশিষ্ট ৯টি হলো বিদেশী ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৯ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৯ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা ।

 

রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ জনতা ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।  বাস্তবে খেলাপি ঋণের চিত্র আরো ভয়াবহ বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। 

 

পুনঃতফসিলের কারণে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র জানা যাচ্ছে না। অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যাংকগুলো ঋণের পুনঃতফসিল করছে। আর এইক্ষেত্রে ঋণ পুনঃতফসিল নিয়মের মধ্যে করতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ঋণ পুন:তফসিল করা হয়েছে। এতে করে অনেক ঋণ আদায় না হলেও খেলাপি ঋণের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে না। ফলে আড়ালে থাকছে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র। 

 

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। যেকোনো মূল্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করতে হবে। এটা উদ্ধার করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ দেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমে যায়। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কম দেখানোর জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনেক ব্যাংক ঋণ অবলোপন করছে। ফলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরো বেশি হতে পারে। 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন চাপের কারণে যাচাইবাছাই না করেই অনেক সময় ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। আর এই কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আবার ঋণের বিপরীতে যে জামানত রাখা হয়েছে সেগুলো সঠিক না। ফলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। 


কোনোভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না খেলাপি ঋণের। কেবল ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে ৭৬ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালের শুরুতে এর পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।


অন্যদিকে, একই সময়ে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। ফলে দেশে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, এখন থেকে নতুন করে আর খেলাপি ঋণ বাড়বে না বরং কমে আসবে। তিনি বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রণালয়ের আলাদা দুটি কমিটি কাজ করছে।

 

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এটি একটি ক্রাইম, আমাদের এই ক্রাইম বন্ধ করতে হবে। এই ঋণ বাড়ার প্রবণতা আমাদের থামাতে হবে, জাতিকে খেলাপি ঋণ থেকে মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, কৃষকের টাকা, এই টাকাকে খেলাপিতে পরিণত করা যাবে না। 

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ১০ বছরে অর্থ্যাৎ ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৬ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম বছর ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ বাড়েনি বললেই চলে। 

 

২০১০ সালে সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, ২০১১ সালে যা নেমে আসে ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকায়। ২০১২ সালে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা হয়। ২০১৩ সালে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা কমে ৪০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকায় নেমে আসে খেলাপি ঋণ।

 
২০১৪ সালে আবার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকায়। ২০১৫ সালে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে (সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। 

এই বিভাগের আরো খবর