শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আড়াইহাজারে নাব্যতা সংকট ও দখলের কবলে হাড়িধোয়া নদ

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৯  

আড়াইহাজার (যুগের চিন্তা ২৪) : আড়াইহাজার উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহমান হাড়িধোয়া নদের প্রায় পুরো অংশ জুড়ে নাব্যতা সংকট ও দখলের কবলে পড়েছে। নানা কায়দায় দখল করে নিচ্ছিন নদের দুই তীর। এতে খরস্রোতা এ নদ সংকুচিত হয়ে গেছে।


নদটি খাগকান্দার ইউনিয়নের কলাগাছিয়ায় মেঘনা নদীর সংযোগস্থল থেকে শুরু করে উচিতপুরা, রামচন্দ্রী, জাঙ্গালিয়া, শান্তির বাজার, চম্পকনগর ও গোপালদী বাজার হয়ে ফের মেঘনায় সংযোগ হয়েছে। নদ খনন না করায় শুঁকিয়ে গেছে। নদের দুই তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা বিভিন্ন বাজারগুলোতে নৌযান যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।ফলে, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সড়ক পথে মামলার পরিবহন করতে গিয়ে ব্যসায়ীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ নৌযানে মালামাল পরিবহন করতে পারলে খরচ অর্ধেকে নেমে আসতো।


অপরদিকে তীরবর্তী ফসলি জমিতে দেখা দিয়েছে সেচ সংকট। এতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্র অর্জনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এদিকে অনেকেই লুট করে নিচ্ছে যাচ্ছে নদের মাটি। এছাড়াও দুই তীরের অসংখ্য ডায়িং-ওয়াশিং মিলসহ নানা মিল কারখানার রং ও বর্জ্য নদের পানিতে ফেলছে। এতে পানির স্বাভাবিক রং বদলে  গেছে। এর পানি ব্যবহার করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নদের তীরবর্তী বাসিন্দারা। 


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নয়নাবাদ বাজার, উচিৎপুরা বাজার, রামচন্দ্রী বাজার ও ঐতিহ্যবাহি গোপালদী বাজার। নদের তীরের বাজারগুলোতে বড় নৌকা ও লঞ্চযোগে কম খরচে রাজধানীসহ  জেলা শহর নারায়ণগঞ্জ মোকাম থেকে মালামাল আনা হতো। নাব্য সংকট ও দখলের কবলে পড়ে নদ সংকুচিত হওয়ায় লঞ্চতো দূরের কথা ছোট্ট আকারের নৌকাও চলাচল করতে পারছে না।


স্থানীয়রা জানান, নদের তীরে গড়ে উঠা শত শত ডাইংয়ের অপরিশোধিত রঙের কালো পানি পড়ে দূষিত হয়ে গেছে পানি। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদের তীর ঘেঁষে মাটি ভরাট করে বিভিন্ন ব্যবসা ছোট বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। 


জাঙ্গালিয়া এলাকার বাতেন মিয়া বলেন, নদের পানিতে গোসলসহ গৃস্থলীর সকল কাজ করা হতো। এখন এর পাশ দিয়ে হাটাই দায় হয়ে পড়েছে। মিছমিছে কালো পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পানিতে নামতেই ‘গা’ চুলকানি ধরে। গবাদী পশু পানি খাওয়ানো হলে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, ডাইংয়ের অপরিশোধিত বর্জ্য নদের পানিতে পড়ে মাছের রেণু ও পোনা মরে যাচ্ছে। এতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। 


নয়নাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী জালাল মিয়া বলেন, নদকে কেন্দ্র করে নয়নাবাদ ও শান্তির বাজার গড়ে উঠে। কম খরচে মালামাল আনাহতো লঞ্চ বা বড় নৌকা যোগে। ক্রেতার সমাগম ছিল। এখন লঞ্চতো দূরের কথা এখন ডিঙ্গি নৌকাও চলতে পারে না। এতে তীরবর্তী ব্যবসায়ীরা ঝিমিয়ে পড়ছেন। অনেকে এরই মধ্যে ব্যবসা গুঁটিয়ে ফেলেছেন।


গোপালদী এলাকার জেলে শ্রী কালিপদ বলেন, বর্ষার দুই থেকে তিন মাস নদের চেহারা পাল্টে যায়। আগের মতো মাছ পাওয়া যায়। নদের পাড়ের জেলেদের মধ্যে অনেকে পেশায় ছেড়ে অন্যপেশায় চলে গেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘মাছ ধইরা আমাগো পরিবার চলতো। এহোন অনেক অভাবে আছি। আগের মত মাছ পাই না। জালের দাদন টেহ্যা দিতে পারি না।’  


আগুয়ান্দী এলাকার স্কুল শিক্ষক মোবারক হোসেন জানান, নদের পঁচা পানির গন্ধে দুই তীরের বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দেয় পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি। খনন না করায় খরস্রোতা হাড়িধোয়া আজ মৃত। এরই মধ্যে নদের পানি চলে গেছে একেবারে তলদেশে। শুঁকিয়ে খাঁ খাঁ করছে নদের বুক। অনেকেই নদের মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।


আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহাগ হোসেন বলেন, নদ বা খাল খননে কোন প্রকল্প আপাতত নেই। 

এই বিভাগের আরো খবর