শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘আমি রুপ নগরের রাজকন্যা রুপের জাদু এনেছি’

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ‘আমি রুপ নগরের রাজকন্যা/ রুপের জাদু এনেছি।/ ইরান তুরান পার হয়ে আজ/  তোমার দেশে এসেছি।’ কবি আজিজুর রহমানের লেখা হারানো দিনের এই গানটির সাথে যখন ছোট্ট বন্ধু সোয়াইমা নাচ করছিল তখন মনে হয়েছিল হিম হিম হেমন্তের দুপুরের মিষ্টি রোদের মধ্যে বাস্তবে কোন রাজকন্যা রুপের জাদু নিয়ে এসেছে। একজন রাজকন্যা তার রুপের জাদু নিয়ে এসে মিলনায়ত ভর্তি দর্শকদের মুগ্ধ করে যেন আবার ঐ গানের কথার মতো ‘সবার চোখে রঙ লাগিয়ে/ সবার মনে ঢেউ জাগিয়ে।/ নতুন দেশের পথে আমি আজকে আবার চলেছি/ জানি ও জানি সবার মনকে নিয়ে চলেছি।’ চলে গেল।

 

শহরের বেইলী স্কুলের নার্সরির শিক্ষার্থী সোয়াইমা নৃত্য করেছিল ‘নিজ প্রতিভায় জাগো’ নামক একটি প্রতিযোগিতায়। ‘চলো স্বপ্নপূরণ করি’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে বেইলী স্কুলের আয়োজন করে এ প্রতিযোগিতার। বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী নারায়ণগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে চলে এ প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান। 

 

‘শিশুদের সৃজনশীল কাজের উৎসাহ প্রদান করার জন্য আমাদের এ ব্যতিক্রমী আয়োজন। এবার চতুর্থবারের মতো আমরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি।, প্রতিযোগিতা সর্ম্পকে ঠিক এমনটাই বলছিলেন বেইলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক।

 

‘নিজ প্রতিভায় জাগো’  অনুষ্ঠানটি কেন ব্যতিক্রম জানতে চাইলে তিনি জানান, আজকের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি আমরা প্রি-নার্সারি থেকে ক্লাশ টু-তে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন তারা বয়সে অত্যন্ত নবীন, মানে খুবই ছোট। তাদের মন মানসিকতা বিবেচনা করে অনুষ্ঠানে প্রতযোগিতার বিষয় আমরা উন্মুক্ত রেখেছি। এখানে যে যার পছন্দ অনুযায়ী বিষয় যেমন-নাচ, গান আবৃত্তি, একক অভিনয় ইত্যাদি নির্ধারণ করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে তাদের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা রয়েছে।

 

মঞ্জুরুল হক বলেন, আমদের আজকের এ প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করছে তার নিজেরাই বিষয় নির্ধারণ করেছে এবং সে অনুযায়ী তারা চর্চা করেছে। এক্ষেত্রে আমরা বা স্কুলের ওই বিষয়ের সংশ্লিষ্ট কোনে শিক্ষক তাদেরকে সহযোগিতা করিনি। এখানে প্রতিযোগী যা যা করছে তা নিজেদের মেধা-মননশীলতা বা প্রতিভা দিয়ে করেছে। আমরা শুধু দেখতে চাই এ বয়সে কার ভিতরে কতটুক প্রতিভা রয়েছে এবং কারো সাহায্য ছাড়া তার কতটুক বিকাশ ঘটাতে পারে। অর্থাৎ তাদের যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে সেটির বিকাশই আমাদের মূল লক্ষ্য।

 

তিনি বলেন, বিগত তিন বছর আমরা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন ঘরোয়াভাবে আমাদের স্কুলেই করেছি। কিন্তু এবার সর্বাধিক প্রায় ২০০ প্রতিযোগী হওয়ায় আমরা এ আয়োজন এখানে করেছি। প্রতিযোগিতার বিষয় উন্মুক্ত থাকায় আমাদের স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা খুবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। পাশাপাশি আমরা অভিভাবকদের কাছ থেকেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি এবং তাঁরা আমাদেরকে খুব সহযোগিতা করছে।

 

বিগত বছরের তিনটি অনুষ্ঠানেই অংশগ্রহণ করেছে ওয়াফিয়া আনবার আফরা নামক দ্বিতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থী এবং বরাবরের মতো এবারও সে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। স্কুলের এমন একটি ব্যতিক্রম আয়োজনে শিশুর প্রতিভা বিকাশে ঠিক কেমন সহায়ক হয়েছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াফিয়া আনবার আফরা’র মা ফাতেমা-তুজ-জোহরা বললেন, শিশুদের মঞ্চে কোন কিছু উপস্থাপন করার মূল ভিত্তি আসলে এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আর্জিত হচ্ছে। অনেক বাচ্চারা আছে যারা ভালো করে অন্যদের সাথে বা অপরিচিত কারো সাথে ঠিক মতো কথা বলতে পারেনা। কিন্তু এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের অনেকের এ সমস্যা কেটে গিয়েছে। বিশেষ করে আমার বাচ্চার জড়তা অনেক কেটে গিয়েছে। ও এখন খুব সাবলীভাবে কথা বলতে পারে এবং যেকেনো ধরনের অনুষ্ঠান বা প্রতিযোগিতায় আনন্দের সাথে অংশগ্রহণ করে।

 

তিনি বলেন, আমি মনে করি এ ধরনের প্রতিযোগিতা আরও বেশি বেশি আয়োজন করা দরকারর। যাতে কোমলমতি শিশুরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর সাবলীলভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে। এবং তাদের এ অনুষ্ঠাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান বা প্রতিযোগিতায় পরিবেশনা ভালো হয়। শিশুদের প্রতিভা বিকাশে এ ধরনের প্রতিযোগিতা আরও বড় আকারে হওয়া দরকার। 

 

‘এ ধররে অনুষ্ঠান শিশুদের প্রতিভা বিকাশের একটি পথ তৈরি করবে’ বলে জানালেন শামীম হোসেন সরকার নামে স্কুলের আরেকজন অভিভাবক। তিনি বলেন, এর ফলে ভবিষ্যতে সে যেকোন কাজ খুব ভালোভাবে করতে পারবে। আমরা বড়রা এখনও অনেকে মাইকের সামনে বা অনেক লোকের উপস্থিতিতে কোন অনুষ্ঠানে ঠিক মতো কথা বলতে পারিনা। সেখানে এখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা এই বয়সে সেটা অনেকটা রপ্ত করে ফেলেছে। এটা আসলে এ ধরনের প্রতিযোগিতা বা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। 

 

এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলা মাধ্যমে এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের নারায়ণগঞ্জে রয়েয়েছে। এজন্য আমরা খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের মাধ্যমে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়া-শুনার পাশাপাশি দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথেও পরিচিত হতে পারছে। যা তাদের ভবিষ্যতে চলার জন্য একটি সঠিক দিক নির্দেশনা দিবে, তারা দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

 

‘আমরা সব সময় একটা গৎবাধা বা ছকে বাধা নিয়মের মধ্যে চলতে পছন্দ করি এবং ঠিক সেভাবে আমরা শিশুদেরকেও পরিচালনা করে থাকি। আমরা সাধারণত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানদণ্ড হিসেব করি পাবলিক পরীক্ষায় এর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু বেইলী স্কুল হলো এর থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম।, ঠিক এমনটাই বলছিলেন ইকবাল আলী নামে একজন অভিভাবক।

 

তিনি বলেল, আমার মেয়ে ইহনা ইকবাল অর্পি আজকের এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই চর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার ও চর্চা করার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করে। যা বর্তমান সময়ের জন্য খুবই যুগোপযোগ। আমাদের কোমলমতি শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যা আমরা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা খুবই কম লক্ষ্য করি।

 

স্কুলের মর্নিং শিফ্টের ইন-চার্জ এবং অনুষ্ঠান সমন্বয়কারী মিলিয়া আফরোজ তৃপ্তির সঞ্চালনায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, আবৃত্তিকার শ্বাশতী পাল, স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মাহমুদা আক্তার এবং নন্দীতা বিশ্বাস। শিক্ষক-শিক্ষার্থী  অভিভাবকসহ অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবাই এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরো খবর