শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আদালত চত্ত্বরে নৈমত্তিক আইনজীবীদের হাতাহাতি রক্ষকরাই মানছেনা আইন

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : আইনের বই অনুযায়ী আইনের তাত্ত্বিক জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করে ব্যক্তি বা সংস্থার আইনী সমস্যা সমাধানের রাস্তা করেন একজন আইনজীবী। সাধারণভাবে মানুষ মনে করে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করে আইন দিয়ে সঠিক বিচারে পেতে সহযোগিতা করেন একজন আইনজীবী। এক কথায় বললে আইনের আওতার মাঝে আইনী সহয়তা দেয় আইনজীবী। 


কিন্তু আদালতের কাঠগড়ায় আইন দিয়ে যারা সমস্যার সমাধান করেন তারাই ভুলে গেছেন আইন। নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আইনের রক্ষকরাই ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। তারা আইন ভুলে একের পর এক বেআইনী আচরণ করছে । নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে একের পর এক হাতাহাতির ঘটনা ঘটেই চলছে।


নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় এই বছরে আইনজীবীদের মাঝে গেলো পনের দিনের মধ্যেই বেশ কয়েকবার মারামারির ঘটেছে। আইনজীবীদের এই আচারণ আইনজীবীদের মাঝেও অনাকাঙ্খিত। নানান কারণে একের পর এক মারপিটের ঘটনা ঘটছে। 


যাদের সহযোগিতায় আদালতে ন্যায়ের প্রত্যাশা করেন জনসাধারণ তাদের মাঝে বেআইনী আচরণ সাধারন মানুষের কাছেও জন্য হতাশাজনক। তবে নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্ত্বরেই এখন নৈমত্তিক আইনজীবীদের হাতাহাতি। 


চলতি মাসের শুরুতেই পরপর জেলা আদালতের আইনজীবীদের মধ্যে ৫টি হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ৩ নভেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে আদালত পাড়ায় এড.আজিজুর রহমান মোল্লার চেম্বারের সামনে এড.সাখাওয়াত ও এড.বারী ভূইয়ার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।


জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সংগ্রহের বিষয়কে কেন্দ্র করে এই হাতাহাতাতির ঘটনায় এড.সাখাওয়াতকে লাঞ্ছিত করা হয়। এঘটনায় আদালত পাড়ায় থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হয় । নিজ দলীয় আইনজীবীদের হাতে এড.সাখায়াতের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় আদালত পাড়ায় সর্বস্তরের আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। 


এই ঘটনার জের ধরে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই লাঞ্ছিত হয়েছেন আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতা এড.আব্দুল বারী ভূঁইয়া। ৪ নভেম্বর সকালে আদালতপাড়ায় এই ঘটনার পরপরই আরো বেশ দুইদফা বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। 


এতে তৈমূরপন্থী বিএনপি আইনজীবী নেতা এড.আব্দুল হামিদ খান ভাষানী ও সাখাওয়াতপন্থী বিএনপি আইনজীবী নেতা আনোয়ার প্রধানও মারধরের শিকার হন। বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতাদের মধ্যে  মারধর ও হাতাহাতির ঘটনায় আদালতপাড়ায় উত্তেজনা তৈরি হয়।


কয়েকদফায় হাতাহাতির পর এড.বারী ভূঁইয়া, এড.আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, এড.আশরাফুল ইসলাম সিরাজী, এড.আবুল আল ইউসুফ খান টিপু এড.আজিজ আল মামুন, এড.শরীফুল ইসলাম শিপলু এবং অন্যদিকে এড.সরকার হুমায়ুন কবির, এড.খোরশেদ মোল্লা এড.আনোয়ার প্রধানসহ আরো বেশ কয়েকজন আইনজীবী আরেকদফা হাতাহাতি ও মারামারির প্রস্তুতি নেন। তবে শেষ পর্যন্ত আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড.হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক মোহসিন মিয়ার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত নিবৃত্ত হতে হয় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের।


এই মারামারির রেশ তাও বন্ধ হয়নি। এরপর মারধরেরর শিকার হন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি এড.সরকার হুমায়ন কবির। ৬ নভেম্বর আদালতপ্রাঙ্গণে ঢোকার মূল ফটকের সামনে এড.বারী ভূঁইয়া ও তার ছেলে শিক্ষানবীশ আইনজীবী আশরাফ দুজনে মিলে এড.সরকার হুমায়ূন কবিরকে মারধর করেন। মারধরের সময় এড.সরকার হুমায়ুন কবিরের শার্ট ছিড়ে ফেলে তারা। পরে অন্যান্য আইনজীবীদের উপস্থিতিতে সেখান থেকে ছাড়া পায় হুমায়ুন কবির। 


এই ঘটনার সপ্তাহ না পেরুতেই বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়নকে আদালতপাড়ায় প্রকাশ্য মারধর করেছেন যুবদল নেতার সাবেক স্ত্রী (রুবিনা আক্তার সাথী)। সে গুলশান যুবদলের সভাপতি শেখ শরিফ উদ্দিন আহম্মেদের সাবেক স্ত্রী।


১১ নভেম্বর সকালে আদালতপ্রাঙ্গণে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নয়নের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রুবিনা আক্তার সাথী কিছুক্ষণ কথা বলে। কথার এক পর্যায়ে হটাৎ সে নয়নকে থাপ্পড় দেওয়া শুরু করে। অন্য আইনজীবীরা আসলে সাথী বলে উনি আমার জীবন শেষ করে দিছে। ব্ল্যাকমেইল করে সংসার তছনছ করে দিছে।   


সবশেষ ১৪ নভেম্বর যৌতুকের মামলায় হাজিরা দিতে এসে বাদী ও আইনজীবী মনিরুজ্জামান মন্টুর সাথে আসামি পক্ষের আইনজীবীর সহকারি মহিউদ্দিন সেন্টুর মারামারির ঘটনা ঘটেছে। 


সকালে আদালত পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। বাদী ও বিবাদীর লোকজনের মধ্যে মামলার হাজিরা নিয়ে তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি থেকে আইনজীবী মনিরুজ্জামান মন্টু আইনজীবী সহকারী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন সেন্টুর মধ্যে মারামারি বেঁধে যায়। পরবর্তীতে কোর্ট পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।


নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের মাঝে এই ধরণের মারামারির ঘটনায় প্রভাব পড়েছে অন্য আইনজীবীদের মাঝেও। এতে তারা একদিকে যেমন আতঙ্কিত অপরদিকে এসবের কোন প্রতিকার না পেয়ে বেশ বিরক্তও আইনজীবী সমিতির বর্তমান কার্যকরী পর্ষদের উপর। 


আইনজীবীরা বলছেন, বর্তমান পর্ষদ শুধু চেয়ে থাকেন কারা তাদের কাছে অভিযোগ করবেন। তারাও কিন্তু আদালতেই থাকেন। এসবকিছু তারা জানেন। তবে দেখেও না দেখার ভান করেন। তবে এতে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী ও আদালতপ্রাঙ্গণের ব্যাপারে সবার কাছে নেতিবাচক তথ্য যাচ্ছে। 


আইন দিয়ে যারা ন্যায় বিচার করার মতো মহান পেশায় যুক্ত থাকেন তাদের কাছে এই ধরনের বেআইনী আচরণ প্রত্যাশা করে না সাধারণ মানুষ।


তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ব্যক্তিগত রাখাই যুক্তিযুক্ত। আর পেশাগত বিষয় হলেও সেক্ষেত্রে আইনজীবীরা আদালত পাড়ায় মারামারি করলে সেখানে এই পেশা, আদালত এবং এরসাথে জড়িত ব্যক্তিদেরই মানহানি হয়। 
 

এই বিভাগের আরো খবর