বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আড্ডা ফেলে আহত পেঁচাটিকে বাঁচালেন তারা

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : বাচ্চাদের ঢিলে পেঁচাটি আহত হয়। এছাড়া, পেঁচাটির গায়ে ছিল পুরনো জখম, নাকে সৃষ্ট ইনফেকশনে বাসা বেঁধেছিল পোকা
বন্ধুদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উত্তর লক্ষণখোলায় আড্ডা দিচ্ছিলেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ।

 

কাছেই খেলছিল একদল শিশু। হঠাৎ তাদের হৈ-চৈ শুনে সেদিকে দৃষ্টি দেন ইশতিয়াক। কাছে গিয়ে দেখতে পান, পরিত্যক্ত কারখানার ভেতরে জন্মানো ঝোপে কিছু একটা খুঁজছে তারা। 


জিজ্ঞেস করলে বাচ্চারা জানায়, তাদের ছোড়া ঢিলে একটি পেঁচা আহত হয়ে গাছ থেকে নিচে পড়েছে। সেটিকেই খুঁজছে তারা। বিষয়টি জেনে খুবই মর্মাহত হন ইশতিয়াক। এরইমধ্যে বাচ্চারা খুঁজে পায় পেঁচাটিকে। ইশতিয়াক ও তার বন্ধুরা বাচ্চাদের বুঝিয়ে পেঁচাটিকে বাচ্চাদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন। 
তিনি দেখতে পান, বাচ্চাদের ঢিলে পেঁচাটি আহত হয়েছে। এছাড়া, পেঁচাটির গায়ে ছিল পুরনো জখম, নাকে সৃষ্ট ইনফেকশনে বাসা বেঁধেছিল পোকা। 


পেঁচাটিকে নিয়ে খুবই ভাবনায় পড়েন তারা। কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারেন না। এরইমধ্যে তিনি আহত পেঁচাটির ছবি তুলে “আমাদের নারায়ণগঞ্জ” নামে ফেসবুকের একটি গ্রুুপে দেন এবং ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পরামর্শ চান। 

 

এ সময় অনেকেই তাকে পাখিটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। পরে বন্ধুরা মিলে পেঁচাটিকে স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার পেঁচাটিকে প্রথমে চিকিৎসা দিতে রাজি না হলেও ইশতিয়াক ও তার বন্ধুদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত পাখিটিকে চিকিৎসা দেন এবং সেটিকে পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেন। বিকেল নাগাদ পাখিটি প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠে। সন্ধ্যার দিকে বন্ধুদের নিয়ে ফুলচান মিয়ার ডকইয়ার্ডে পেঁচাটিকে ছেড়ে দেন।


ইশতিয়াক আহমেদ জানান, চিকিৎসা দেওয়ার পর পেঁচাটিকে বাড়িতে নিয়ে খাঁচায় রেখেছিলেন। প্রথমে ভেবেছিলেন পাখিটিকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করবেন। কিন্তু বিকেলে নাগাদ সুস্থ হয়ে উঠলে পাখিটিকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। 


তিনি বলেন, “পেঁচাটিকে ছেড়ে দেওয়ার পর সেটি খুব স্বাভাবিকভাবেই উড়ে গেছে। পেঁচাটিকে বাঁচাতে পেরেছি। খুব আনন্দ লেগেছে আমার।”
এদিকে উদ্ধারকৃত পেঁচার ছবিটি ঢাকা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে পাঠানো হয় বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলাকে। ছবি দেখে তিনি এটিকে লক্ষ্মী পেঁচা হিসেবে চিহ্নিত করেন।


জোহরা মিলা বলেন, “লক্ষ্মী পেঁচা একটি নিশাচর পাখি। এটি কীটপতঙ্গ ও ইুুর খেয়ে বেঁচে থাকে। পাখিটি সারাদেশেই কম-বেশিদেখা যায়। কিন্তু কুসংস্কার, বৈরী পরিবেশ, খাদ্যের অভাব ও আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া, লক্ষীপেঁচার প্রতি কাকসহ কয়েকটি পাখির শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব এবং আক্রমণ ইত্যাদি কারণে এটি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।”


পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবীর স্বার্থে এই পাখিটি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন এই বন কর্মকর্তা।
তথ্য সূত্র ও ছবি : ঢাকা ট্রিবিউন

এই বিভাগের আরো খবর