শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাজাকার ইস্যুতে

আইভীর বক্তব্য ‘টক অব দ্যা টাউন’

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২০  

বিশেষ প্রতিনিধি (যুগের চিন্তা ২৪) : গতকাল শনিবার (১১ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জে ‘টক অব দ্যা টাউন’ ছিল নাসিক মেয়র ডাঃ আইভীর সাহসী বক্তব্য। রাজাকার ইস্যুতে  মেয়র আইভীর বক্তব্য সুধীমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আলোচনার বিষয় একটাই ছিল ডিসি-এসপি’র মাঝে রাজাকারের ছেলে। শহরের দক্ষিণ ব্লকের প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতারা বলেছেন, ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী শুরু থেকেই রাজাকার ইস্যুতে সোচ্চার।


তিনি অনেক আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজাকারের ছেলে রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি পদে আসীন হল কেমন করে। ডিসি রাইফেল ক্লাবের সভাপতি সেখানে রাজাকারের ছেলে কি করে সাধারণ সম্পাদক হলেন। এখনো সেই পদে টিকে আছে।


ডাঃ আইভীর এমন বক্তব্যের সাথে একটি অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারাও একমত পোষন করে প্রশ্ন তোলেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ যায়গা গুলোতে কোন রাজাকারের ছেলে বা আত্মীয়স্বজন থাকলে তাদেরকে বহিস্কার করতে হবে। কেননা এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার। ডাঃ আইভী সাহস করে যে কথা বলেছেন তাতে আমরা গর্ব বোধ করি। সে ধিক্কার জানাই রাজাকারের ছেলেকে যাঁরা বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন।


ডাঃ আইভী সব সময় সত্য কথা বলেন। ওসমান পরিবার রাজাকারের ছেলে খালেদ হায়দার কাজলকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন যায়গায় পদ পাইয়ে দিয়েছে। কাজেই রাজাকার ইস্যুতে ওসমান পরিবারের প্রসঙ্গটাও এখন চলে আসে কান টানলে মাথা আসার মতই। আমাদের প্রশ্ন সব সত্য যদি ডাঃ আইভী বলবে তাহলে আপনারা কি করবেন।


আইভী সত্য বলে বলেই তাঁর কথায় অনেকে খোঁচা অনুভব করেন এবং তাঁর সমালোচনা করেন। ওসমান পরিবার কাজলের সেবা গ্রহণ করার বিনিময়ে তাকে পুরস্কৃত করেছেন বিভিন্ন পদে বসিয়ে। আদতে তা বুমেরাং হয়েছে কাজলের জন্য। ওসমান পরিবারের কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়ে কাজল এখন জনধিকৃত হচ্ছেন।


এখন সময় এসেছে কাজলের মত আরো যারা বিভিন্ন পদে আছেন তাদের সকলকে বয়কট করার ঘোষনা দেয়া। নইলে নারায়ণগঞ্জের আমজনতা রাজাকারের ছেলে ইস্যুতে মাঠে নেমে আসলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবেনা।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী শুক্রবার বলেছেন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রাজাকারের ছেলের উপস্থিতি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।


আর সেই অনুষ্ঠান যদি হয়ে থাকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান তাহলে কোনভাবে আপোষ করারও পশ্ন উঠেনা। যে মহান নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো সেই মহান নেতাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত কাউন্ট ডাউন অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত রাজাকারের সন্তান খালেদ হায়দার খান কাজলের উপস্থিতি, তাকে দিয়ে বক্তব্য দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা কোনটিই নারায়ণগঞ্জবাসী মেনে নিবেনা।


আমি ধিক্কার জানাই নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক পুলিশ সুপার এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে। সেই সঙ্গে ধিক্কার জানাই যারা দীর্ঘদিন থেকে রাজাকারদের সমাজে প্রতিষ্টিত করছেন সেই সেলিম ওসমান সেই শামীম ওসমানকে।


অথচ এই দুই ভ্রাতৃদ্বয় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন।  আমি রাতেই জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন ও পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের সাথে বলেছি। তাদেরকে বলেছি রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠানে রাজাকারের ছেলে কিভাবে অতিথি হলেন ?


এর উত্তরে তাঁরা বলেন, এ ঘটনায় আমরাও বিব্রত। এরপর আমি তাদেরকে বলেছি এরকম ঘটনা যদি আবার ঘটে নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিয়ে প্রতিবাদ জানাবো এবং তাদেরকে প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নিবো। তিনি বলেন, এই শহর রাজাকারদের নয় এটা মুক্তিযোদ্ধাদের শহর।


তিনি প্রশ্ন তুলেন ১ জানয়ারী থেকে প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি আমরা। আজকে রাজাকারদের বংশদরদের দিয়ে অনুষ্ঠানমালা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে।  রাজাকারদের বংশধরদের পূণর্বাসন করার যে মিশন তানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ জানাবো। ওনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।


সূত্রমতে, শুক্রবার রাতে রাসেল পার্কে বঙ্গবন্ধুর শতবার্যিকী আয়োজিত অনুষ্টানে  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেয়র আইভী। এ সময় একজন ডিসি-এসপির মাঝখানে রাজাকার পুত্রের ছবি দেখান। এ সময় মেয়র ক্ষুব্দ হয়ে ডিসি-এসপিকে ফোন করে ব্যাখ্যা চান। সকলেই রাজাকার ইস্যুতে মেয়রের সাথে একমত হয়েছেন।


সবচেয়ে অবাক করার বিষয় সাধারণ পত্রিকা পাঠকরাও বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন। তাঁরাও উৎসুক হয়ে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায়  চোখ রাখছেন এটা জানতে যে, শেষ পর্যন্ত রাজাকার পুত্রের কি হল ? সে কি রাইফেল ক্লাব ও চেম্বার থেকে অপসারিত হয়েছেন ! তাছাড়া ওসমান পরিবার তাকে আর কতদিন বুকে আগলে রাখবেন। সময় এসেছে ঝেরে কাশি দেয়ার। খক খক করে কেশে লাভ হবেনা। খড়গটি তৈরী হয়ে গেছে।


বামদলের রাজনৈতিক নেতাদের মতে, রাজাকার পুত্র কাজল শহরে কারো ক্ষতি করেনি। এটা নীতি নৈতিকতার ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের আমলে রাজাকারের পুত্র গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকবে-এটা কি করে সম্ভব। রাজাকারের ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে কোন যুক্তিই চলেনা। যেখানে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা অনুষ্ঠান হয় সেখানে মঞ্চে রাজাকজার পুত্র পৌঁছালো কি রূপে। তাও আবার রাজাকার পুত্রটি বসলেন ডিসি-এসপি’র পাশে। বাহ্ কি চমৎকার !


রাজাকারের ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় পত্রপত্রিকায় একাধিক সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলেও ডিসি সাহেব কি একটি সংবাদও পড়েননি। এসপি সাহেব নতুন এসেছেন তিনি অনেককে চিনেন না। কিন্তু ডিসি সাহেবতো মোটামুটি নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ লোকজনকে চিনেন। তবুও কেনো এতবড় ভুল হল। আমরা এমনটা আশা করিনা।


পর্যবেক্ষক মহলের মতে, কেউ চিনুক বা না চিনুক, জানুক বা না জানুক-তাতে ভুল শুদ্ধ হয়ে যায়না। রাজাকারের ছেলেকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অবশ্যই বর্জন করতে হবে। এতে কারো অসুবিধা বা দায়বদ্ধতা থাকলে তিনিও বর্জনের তালিকায় চলে যাবেন। কারণ এই ইস্যুতে মেয়র আইভীর বক্তব্যে ঘুম ভেঙ্গেছে আম-জনতার। বীর জনতা জেগে উঠলে রাজাকারের পুত্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দানকারীরা রেহাই পাবেন না।


তবে আশার কথা প্রশাসনের সকলেই ধীরে ধীরে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছেন। যেমন ডিসি সাহেব বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যদি রাষ্ট্রীয় বড় বড় পদে না থাকে তবে দেশ আবার অন্য জায়গায় চলে যাবে, তা টেরও পাবেন না।


রাজাকারের সন্তানরা এসব পদে ঢুকে সব নষ্ট করে দেবে। এটি কিন্তু আমি মনে মনে অনুভব করি। সেই জায়গাটি কিন্তু পাবেন না। এসপি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ সবসময় জাতির পিতার দিক নির্দেশনায় কাজ করে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ স্বাধীনতার চেতনায় কাজ করে।

 

এই বিভাগের আরো খবর