শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আইভী নড়ছেনই না

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত এক নাম ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। পুরোদস্তুর আওয়ামীলীগার হলেও তাঁর জনপ্রিয়তা স্পর্শ করেছে দল-মত-বর্ণ নির্বিশেষে। 

তবে আওয়ামীলীগে তাঁর শক্তপোক্ত অবস্থানে আসার পথ অতো মসৃণ ছিলো না। তাঁর দৃঢ় ও তেজোদীপ্ত রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই তাঁকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। 

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঘুরে ফিরে আসছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) টানা দুইবারের নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম। 

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, আওয়ামীলীগের প্রার্থী নির্বাচনে আইভীর মতামত একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের জন্য। 

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, ২০১১ সালে নাসিক নির্বাচনে নিজ দলের নেতাদের সাথে কতখানি লড়াই করতে হয়েছে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সেটি সারাদেশের মানুষই অবলোকন করেছে। ওই সময়ের নির্বাচনে বতর্মান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী ছিলেন। 

নিজের জনপ্রিয়তা ও কর্মক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন আইভী। নির্বাচনে শামীম ওসমানকে কোনঠাসা করে লড়াইয়ে জেতেন তিনি। তবে জয়ী হয়েই থেমে থাকেননি। 

দলের প্রতি যে তাঁর অনবদ্য আনুগত্য ছিলো তারও প্রমাণ দিয়েছেন। জয়ী হয়ে জয়ের কৃতিত্ব তুলে দিয়েছেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। 

তবে স্থানীয় রাজনীতিতে অনেক ঘৃণ্য পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে মেয়র আইভীকে। তাকে দমানোর হেন কোন চেষ্টাই বাকি ছিলো না, কিন্তু অবিচলভাবে নিজের ও দলের প্রতি আস্থা রেখেই কাজ করে গেছেন মেয়র আইভী। 

তবে শামীম ওসমান ও তাঁর অনুসারীরা পুরো মেয়াদকালেই তাকে সমালোচিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলো। 

নাসিকের ২য় নির্বাচনের সময়ও আইভীর বিরোধীতা কারীরা সরব ছিলেন। এসময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা তাঁর নাম ব্যতিরেকেই নির্বাচনে কেন্দ্রে আওয়ীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম পাঠায়। 

তবে এবার আর ভুল করেননি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অগ্রসেনানী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

মনোনয়ন তুলে দেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। তিনি যে ভুল করেননি  সেটি আবারো প্রমাণ করেন মেয়র আইভী। তবে এটিই যেন কাল হলো মেয়র আইভীর জন্য। 

২য় মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পূর্ণ হওয়ায় ৯ জানুয়ারী দেওভোগে শেখ রাসেল পার্কে জনতার মুখোমুখী হয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী । নগরের বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। 

 এ সময়ে চলছিলো হকার ইস্যু নিয়ে আলোচনা। মেয়র আইভী স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সড়ক ব্যতিত নির্ধারিত জায়গায় হকার বসতে হবে। কিন্তু ১৫ জানুয়ারি হকারদের সাথে নিয়ে ১৬ জানুয়ারি হকার বসানোর ঘোষণা দেন শামী ওসমান। 

এরপরদিন ১৬ জানুয়ারি চাষাঢ়ায় হকার ইস্যুতে মেয়র আইভীর উপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে। মেয়র, সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত ৫০ জন। 

আবারো প্রকাশ্যে আসে মেয়র আইভী কতখানি যুদ্ধ করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছেন। এটাকে হকার ইস্যু হিসেবে না দেখে অনেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আইভী কতখানি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন তা নিয়ে নানা বিশ্লেষন দেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

তাদের মতে, এর প্রায় কয়েক মাস আগে থেকেই শুধু নগরীতেই নয়, জেলার পাঁচটি আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী দিতে হবে এমন দাবিতে সরব ছিলেন আইভী। 

নানাভাবে এ দাবি থেকে আইভীকে হটাতে ও আওয়ামীলীগের ঐক্য নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছিলো একটি পক্ষ বলে মত বিশ্লেষকদের। 

তাদের মতে, এ হামলার ঘটনার পরও আরো কয়েকটি বিষয় দিয়ে আইভীকে সমালোচনার মুখে ঠেলে দিতে চেয়েছিলো একটি পক্ষ। তাদের প্রচেষ্টা ছিলো আইভী সরে গেলেই হয়তো জেলার পাঁচটি আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার দাবিটি স্তিমিত হয়ে যাবে। 

এমনকি নাসিকের এলাকায় বর্জ্য ডাম্পিংয়ের স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেই জেনে জনসম্পৃক্ত একটি বিষয় নিয়েও মেয়র আইভীকে কোনঠাসা করার চেষ্টা চলে। প্রকাশ্যে পরোক্ষভাবে চেয়ার বদলে দেয়ারও ঘোষণা দেয় একটি পক্ষ। তবে তাতেও অত্যন্ত দমে যাননি আইভী। স্থিরতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে এসব কিছুর মোকাবেলা করেছেন।

এর মাঝে কয়েকবারই তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য নানা সংকেত দেয় কয়েকটি মহল। কিন্তু আইভী জনগণ ও আওয়ামীলীগের তৃণমূলকে নিয়ে সেসব সমস্যার মোকাবেলা করেছেন। কোনরূপ পাত্তা না পেয়ে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয় সেই পক্ষগুলো। 

তাদের জানা ছিলো, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের সব নেতাকে ছাপিয়ে মেয়র আইভীই হয়ে উঠবেন নির্বাচনের অন্যতম ফ্যাক্টর। নির্বাচনের আগে সেসব কিছুরই আভাস মিলছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। শত বাঁধা মোকাবেলা করে আজকের এই অনড় অবস্থানে যেভাবে পৌঁছেছেন মেয়র আইভী। 

সামনের সবগুলো বাঁধাও দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জেলার পাঁচটি আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা কেন্দ্রে জোর লবিং করছেন। 

তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যদি আইভীর সুপারিশ ও সাপোর্ট পায় তা অবশ্যই আলাদা একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে বলে মত বিশ্লেষকদের। 

এক্ষেত্রে সমালোচিত ও দলকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে এমন নেতার পক্ষে যে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থন থাকবেনা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
 

এই বিভাগের আরো খবর