মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

আইএস বধূ শামীমার সন্তানের মৃত্যু : সমালোচনার মুখে ব্রিটিশ মন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : ব্রিটেন থেকে পালিয়ে সিরিয়া চলে যাওয়া ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জিহাদি-বধূ শামীমা বেগমের শিশু সন্তানর মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ।


আইএসে যোগ দিতে শামীমা ১৫ বছর বয়সে লন্ডন ছেড়ে সিরিয়ায় যান। এই টিনএজার যখন ফিরে আসার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন তখন সাজিদ জাভিদ তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা জানান।


শামীমা বেগমের পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন বলেছেন, ব্রিটেন শিশুটির নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।একইসময়ে লেবার পার্টি বলছে, শিশুটির মৃত্যু ছিল একটি ‘দাম্ভিক এবং অমানবিক’ সিদ্ধান্তের ফলাফল।ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যেকোনো শিশুর মৃত্যুই দুঃখজনক।


ওই মুখপাত্র বলেন, সরকার অব্যাহতভাবে সিরিয়া ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্ক করে এসেছে এবং লোকজনকে সন্ত্রাসবাদ এবং বিপদজনক যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়া থেকেই বিরত রাখতে যা কিছু করা সম্ভব সেসব আমরা চালিয়ে যাব।


২০১৫ সালে স্কুলের আরও দুই বান্ধবীসহ যুক্তরাজ্য ছাড়েন শামীমা বেগম। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যখন ইসলামিক স্টেটের স্বঘোষিত খেলাফত বিলুপ্তপ্রায় তখন সিরিয়ার বাঘুজে এক শরণার্থী শিবিরে তাকে খুঁজে পান দ্য টাইমস পত্রিকার এক সাংবাদিক।


সেসময় নয় মাসে গর্ভাবস্থায় ছিলেন শামীমা বেগম এবং তিনি তখন জানিয়েছিলেন যে, সে তার স্বামীর (একজন ডাচ আইএস যোদ্ধা) সঙ্গে আইএসের সর্বশেষ ঘাঁটিতে সে বসবাস করতো। এর আগে আরও দুটি শিশু সন্তানকে হারায় সে সেজন্য শামীমা বেগম এখানকার প্রতিকূল পরিবেশকে দায়ী করেন।
শামীমা বেগম ব্রিটেনে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে। শামীমা বেগম এর আগে বলেছিলেন- তিনি সিরিয়ায় যাবার জন্য এবং আইএসে যোগ দেবার জন্য অনুতপ্ত নন, তবে আইএস খিলাফত ধ্বংস প্রায় বলেও তখন উল্লেখ করেছিলেন তিনি।


তার যে শিশুটি বৃহস্পতিবার মারা গেল সেই জারাহ জন্ম নেয়ার পরপরই বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন- তিনি ব্রিটেন ফিরে যেতে চান এবং তার সন্তানকে যুক্তরাজ্যে বড় করতে চান।

মেডিকেল সার্টিফিকেট অনুসারে নিউমোনিয়ার কারণে মারা গেছে জারাহ। তার বয়স হয়েছিল তিন সপ্তাহরেও কম।

কনজারভেটিভ এমপি এবং সাবেক আইন মন্ত্রী ফিলিপ লি এই মর্মান্তিক ঘটনার পর সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তাদের নৈতিক দায়-দায়িত্বের প্রতিফলন দেখাতে।


তিনি বলেন, শামীমা বেগমের ‘বিতৃষ্ণামূলক মনোভাব’ সত্ত্বেও তার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত এবং তার ব্রিটেনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করা এতে যেটা দেখা গেল তা হলো- জনসমর্থন পেতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চিন্তা দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং কোনো নীতির দ্বারা নয়।
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা কুইনটিন সামারভিল জানিয়েছেন, খাবারের অভাব, কম্বল ও তাঁবুর সঙ্কটের কারণে আশ্রয়-শিবিরের অবস্থা ‘মোটামুটি ভয়াবহ’।


ডেইলি-মেইলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক লারিসা ব্রাউন নিউজনাইট অনুষ্ঠানে বলেন, ক্যাম্পের ভেতর হিটিং বা গরম করার কোনোরকমের ব্যবস্থা নেই এবং রাতের বেলা তাপমাত্রা তিন কিংবা চার সেলসিয়াস অনুভূত হলেও তাঁবুর ভেতর বাচ্চাদের শরীর গরম রাখার মত কোনো চুলা ছিল না।
তিনমাসের মধ্যে একশ’র বেশি মানুষ ক্যাম্পে পৌঁছানোর পথে কিংবা পৌঁছানোর পরপরই মারা গেছে, এদের মধ্যে তিনভাগের দুইভাগের বয়স পাঁচবছরের নিচে।


ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটির সভাপতি ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং অপুষ্টির শিকার ১২ হাজার মানুষ আইএসের শাসন থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়ায় ক্যাম্পটিতে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

সাবেক মেট্রোপলিটন পুলিশ চিফ সুপারিন্টেনডেন্ট এবং শামীমা বেগমের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বিবিসির নিউজ-নাইট অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা দেশ হিসেবে শিশুটিকে নিরাপদে রক্ষায় ব্যর্থ হলাম।


শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিলের পর তার পরিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর চিঠি লিখে জানায় যে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা চ্যালেঞ্জ জানানোর পরিকল্পনা করেছে এবং তার শিশুপুত্রকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনতে সাহায্যের আবেদন করে। শামীমা বেগমের বোন রেনু বেগম চিঠিতে বলেন, শিশু জারাহ ছিল এই পরিস্থিতিতে সত্যিকার নিরপরাধ একজন।


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে তার নাগরিকত্ব বাতিলের আগেই যেহেতু শিশুটির জন্ম সে হিসেবে সে ব্রিটিশ নাগরিক এখনও বিবেচিত হওয়ার কথা। মিস্টার বাবু বলেন, ব্রিটিশ একজন নাগরিকের সম্পূর্ণভাবে এড়ানোর যোগ্য একটি মৃত্যু ছিল এটা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের সাহায্যের চেষ্টা ছিল না। আমি মনে করি যেভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি মোকাবেলা করছেন তা রীতিমত বেদনাদায়ক।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকা-ের সমালোচনা করেছেন ছায়া মন্ত্রী ডায়ানে অ্যাবট নিজেও। টুইটারে তিনি লিখেছেন- ‘কাউকে রাষ্ট্রহীন করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী, এবং এখন একটি নিষ্পাপ শিশু মারা গেল কারণ একজন ব্রিটিশ নারী তার নাগরিকত্ব হারিয়েছেন। এটা নির্মম ও অমানবিক।’


শিশুটির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার আগে শুক্রবার বিবিসির সাথে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে সেখানে সম্ভবত বহু শিশু রয়েছ, যারা এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে জন্মেছে, অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে নিরপরাধ। এই পরিস্থিতির মধ্যে এসে পড়া এই শিশুদের প্রতি সহানুভূতি ছাড়া আমার আর কিছুই করা নেই।


বিবিসির সংবাদদাতা ড্যানিয়েল স্যান্ডফোর্ড বলেন, সরকারের পক্ষে সিরিয়ার বাইরে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল, তবে তা রাজনৈতিকভাবে কঠিন হয়ে পড়তো।


সেভ দ্য চিলড্রেন-এর কর্মকর্তা ক্রিস্টি ম্যাকনেইল বলেছেন, আইএসের সঙ্গে সম্পর্কিত সকল শিশু এই সংঘাতের ভুক্তভোগী এবং সেটা বিবেচনা করা উচিত। এই শিশুটিসহ অন্যান্যদের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব ছিল।

তবে এই মর্মান্তিক ঘটনার দায়-দায়িত্ব তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের বলেও দাবি করেছেন অনেকেই।

এই বিভাগের আরো খবর