শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী রুবেল বেপোরোয়া, অতিষ্ঠ মানুষ

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার : রুবেল ভূঁইয়া (৩৫)। র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃংখলাবাহিনীর তালিকাভুক্ত অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী, খুনি ও মাদক ব্যবসায়ী। রুপগঞ্জে সন্ত্রাসের ত্রাস, এলাকাবাসীর আতংক। হত্যা, চাঁদাবাজি, দখলদার, মাদক, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে রূপগঞ্জ থানায় রয়েছে অসংখ্য মামলা।  তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউই মুখ খুলতে সাহস পায়না।

 

অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই তাকে পড়তে হয় রোষানলে। সইতে হয় নির্যাতন। থানা পুলিশের আশ্রয় নিলে তার উপর নেমে আসে বিভিন্নভাবে অত্যাচারের খড়গ।  রুবেল রূপগঞ্জ তারাবো দক্ষিণ পাড়া  এলাকার  মৃত তমিজ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ করোনার দূর্যোগ মহামারিতেও রুবেল থেমে নেই। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এক দিকে মাদক, অন্যদিকে নির্যাতন, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব নিয়েও পুলিশে অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।  তার রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী ও মাদক চক্র।

 

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বরপা বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে ২টি বিদেশী পিস্তল, ২ টি গুলি ভর্তি ম্যাগজিন ও ১টি চাপাতিসহ রুবেল ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১।

 

ওই সময়  র‌্যাব-১১’র সিনিয়র এএসপি মোঃ জসিম উদ্দীন চৌধুরী  পিপিএম কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গ্রেফতারকৃত রুবেল দীর্ঘদিন যাবৎ রূপগঞ্জ এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে এলাকায় জনসাধারণ এর মধ্যে আতংঙ্ক সৃষ্টি করে আসছে।

 

সম্প্রতি রুবেলের এসব অপরাধ কর্মকন্ডের প্রতিবাদ করায় মনির ওরফে সাগর নামে এক যুবক শিকার হয় তার নির্যাতনের। তিনি তারাবো হাটিপাড়া এলাকায় করিমের ভাড়ির ভাড়াটিয়া। পেশায় টেম্পু চালক। দীর্ঘদিন থেকে রুবেল ভুইয়া অস্ত্র ও মাদকসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার উপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছে।

 

এসব জের ধরেই গত ১৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তারাবো দক্ষিনপাড়া এলাকায় রুবেল ভুইয়াসহ তার সহযোগী রাসেল, বান্দইরা রুবেল, বাপ্পিসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন ধারালো ছেনদা, ছুরি, চাপাতি, রামদা, লোহর রড, পাইপ, হকিষ্টিকসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মনির ওরফে সাগরকে আটক করে।

 

পরে লোকমানের দোকানের সামনে তাকে এলোপাথারি মারপিট করে। এক পর্যায়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথা কুপিয়ে জখম করে। এতে মনির মাটিতে লুটিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ উল্লেখ করেন, মারপিট ও নির্যাতনের একপর্যায়ে রুবেল ভুইয়ার সহযোগী চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাপ্পি তার গলা চেপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা চালায়। অপরদিকে রুবেল ভুইয়া নিজে মনিরের মাথায় কোপ মারে। অন্যদিকে বান্দইরা রুবেল তার হাতে থাকা লোহার রড় দিয়ে পিটাতে থাকে।

 

এতে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে রক্তাক্ত জখম হয়। একসময়  রাসেল, বাপ্পি ও অজ্ঞাত কয়েকজন যোগ দেয়। তারাও তাকে লোহার রড ও লাঠি সোটা দিয়ে সমস্ত শরীরে এলোপাথারী ভাবে পিটাতে থাকে। এক পর্যায়ে সে রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

 

অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) হরি বিনাষ এ বিষয়ে জানান, এ ঘটনায় দুই পক্ষ দুটি অভিযোগ দিয়েছে। মুলত লক ডাউন ও পূর্বের বিরোধের জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতে সকলকে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে।  

 

জানা গেছে, র‌্যাব এর সাথে ক্রসফায়ারে নিহত ফরিদের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলো রুবেল ভুইয়া। ফরিদের মৃত্যুর পরই রুবেল সবকিছু তার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। রূপগঞ্জে টাটকি খালপাড় এলাকায় আলোচিত ফয়সাল মার্ডার ও তারাবো ভুইয়া পাড়ার সাগর মার্ডার আসামী।

 

একটি সূত্র জানায়, র‌্যাব, পুলিশ ও ডিবির চোখ ফাঁকি দিতে বর্তমানে সন্ত্রাসী রুবেলের স্ত্রী রোকসানা নেপথ্যে থেকে মাদকের নিয়ন্ত্রন করছে। তার বিক্রেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কাজল ও জামাল।

 

এছাড়াও রুবেল ও তার স্ত্রী রোকসানা মিলে দিঘী বড়াবো এলাকায় সিরাজ মিয়া নামে এক প্রবাস ফেরতকে মাদকাসক্ত করে তুলে। এমনকি রুবেলের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে দিনের পর দিন মাদক সেবন করায়। এর আগে রুবেল ভুইয়া মাদকের বকেয়া ২৫ হাজার টাকার জন্য সিরাজের ১ শতাংশ জমি জামানত হিসেবে রেখে ৩ লাখ টাকা দেয়।

 

ওই টাকাও মাদক দিয়ে নিয়ে নেয়। রুবেল অস্ত্রগুলিসহ গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী রোকসানা সিরাজকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। মাদক ও তার খরচের বাবদ রোকসানা তার কাছ প্রমান স্বরুপ একটি স্ট্যাম্প করতে চায়। পরে তাকে মাদকের নেশায় ডুবিয়ে রুপগঞ্জে একটি অফিসে নিয়ে গিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়।  

 

একপর্যায়ে সিরাজকে পরিবারের সদস্যরা মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করায়। সিরাজ সুন্থ্য হয়ে ৮ মাস বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার বাড়ি দখল নিতে রুবেল ও তার স্ত্রী রোকসানা বিভিন্ন লোক পাঠিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে।

 

তারা সিরাজকে জানায় সিরাজ তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই জমির পাওয়ার দিয়েছে। এদিকে সিরাজের পরিবারের সদস্যরা রুবলে ও তার স্ত্রী রোকসানার দাবিকৃত টাকা ফেরত দিতে চাইলেও  তারা তা নিবেনা জানিয়ে দিয়ে বলে ওই জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা হলেও কোনো সমাধান হয়নি।

 

এদিকে সিরাজ বাধ্য হয়ে ওই জামির পাওয়ার বাতিল ও সাধারন জীবন যাপনের জন্য আদালতের ধারস্ত হয়।  এরপর থেকে আব্যাহত হুমকির মুখে আছে।

 

দিঘী বড়াবো এলাকায় এলাকার ফেন্সি মিজান, মামুন, শাকিল রুবল ভুইয়ার অধিনে সমস্ত অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে বলে ওই সূত্রটি জানায়।

 

এদিকে রূপগঞ্জবাসী অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী, খুনি ও মাদক ব্যবসায়ী রুবেল ভুইয়া ও তার স্ত্রী রোকসানার কাছ থেকে রক্ষা পেতে র‌্যাব, পুলিশ ও আইনশৃখলাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

এই বিভাগের আরো খবর