বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অরক্ষিত কাঁচপুর বিসিক শিল্প এলাকা

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০১৯  

সোনারগাঁ (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর বিসিক শিল্প এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মাদক সেবী ও স্থানীয় কয়েকজন যুবক চুরি, ছিনতাই, ভেতরে দোকানপাট নির্মাণ করে ওই এলাকাকে অরক্ষিত করে রাখে। শিল্প এলাকার শ্রমিকদের বেতন দেয়ার দিন শ্রমিকদের মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনারও অভিযোগ রয়েছে।

 

রাতের বেলায় শিল্প এলাকায় বহিরাগত ও মাদক সেবিদের আড্ডায়খানায় পরিণত হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক শিল্প মালিক। মাদক ব্যবসায়ী ও বহিরাগতদের প্রভাবে অতীষ্ট হয়ে পড়েছে শিল্প মালিকরা। বিসিক শিল্প কমিটির বিষয়টি নজরে এলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে অবগত করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচলনা করে বিসিক শিল্প এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকান পাট উচ্ছেদ করে। 

 

এছাড়াও টেলকম ডাইং লিমিটেডের পাশের গেইটটি তালাবন্ধ করে সিলগালা করে দেন। গত এক মাস সিলগালা থাকলেও বিসিকের সভাপতি আব্দুস সবুর খাঁন প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে গেইটটি খুলে দেন। ফলে আবারো বহিরাগত ও মাদকসেবীরা বিসিক শিল্প এলাকাটি রাতের বেলায় মাদকের আড্ডায় পরিণত করেছেন।  


জানা যায়, উপজেলার কাঁচপৃুর এলাকায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাঁচপুর বিসিক শিল্প এলাকা গড়ে উঠে। ওই শিল্প এলাকায় ১৩৬টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এ শিল্প কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা মাদক সেবী ও স্থানীয় যুবকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডে প্রতিবাদ করে ফল পায়নি শিল্প মালিকরা। 

 

কাঁচপুর বিসিক শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিসিক শিল্প এলাকায় স্থানীয় লোকজন বিসিকের ভেতরে দোকানপাট নির্মাণ করে জায়গা দখল করে রাখে। ফলে ওই এলাকায় বগিরাগতদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাছাড়া রাতের বেলায় মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বিসিকে কর্মরত শ্রমিকদের মারধর করে ওই মাদকসেবী ও বহিরাগতরা তাদের টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। 

 

গত ৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক  মো. জসিম উদ্দিন বিসিক শিল্প এলাকায় পরিদর্শনে আসলে এ বিষয়টি তাকে জানানো হয়।পরদিন জেলা প্রশাসন বিসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোকানপাট উচ্ছেদ করে। পরে কুতুবপুর গ্রামের পাশর্^বর্তী টেলকম ডাংইয়ের পাশের ফটকটি তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দেন। 

 

গত বৃহস্পতিবার বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সবুর খাঁন প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া তালা খুলে দেয়ায় আবারও মাদক সেবীরা মাদকের হাটে পরিণত করেছেন।

 

বিসিক শিল্প নগরীর হাবিব ডাইংয়ের মালিক জাফর লোদী জানান, আমাদের শিল্প মালিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই প্রশাসন বিতর্কিত গেইটটি বন্ধ করে দেন। শুনেছি সবুর খাঁন তার এলাকার দাবির প্রেক্ষিতে এ গেইটটি প্রশাসনকে না জানিয়ে খুলে দিয়েছেন।গেইটটি খুলে দেয়ায় আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।এতে করে আমাদের নিরাপত্তায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ গেইটি বন্ধ রাখা উচিত।  

 

ফরচুন ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও বিসিক শিল্প মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক কমল মিয়া জানান, নিরাপত্তার জন্যই এ গেইটটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি প্রশাসনের কেউ না। তবে কেন তিনি গেইটটি খুলে দিলেন আমি বুঝতে পারছি না। গেইটটি খেলা থাকলেই দোকানপাট বসে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যখাত ঘটায়। আমাদের মালপত্র লোড আনলোড করতে পারি না। কিছু বললেই আমাদের হুমকি দেয়া হয়। তাছাড়া রাতের বেলায় মাদকসেবীদের আড্ডার স্থানে পরিণত হয়। দ্রুত পুনরায় গেইটটি বন্ধ করে দেয়া উচিত। 

 

কাঁচপুর বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা কাজী নেয়ামতউল্লাহ জানান, শিল্প নগরীর নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন গেইটটি বন্ধ করা হয়েছিল। আমি অফিস শেষে চলে আসার পর বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি কার অনুমতি নিয়ে খুলেছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

 

কাঁচপুর বিসিক শিল্প নগরী মালিক সমিতির সভাপতি অভিযুক্ত আব্দুস সবুর খাঁনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।  

 

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, নিরাপত্তা বিঘিœত হয় এমন সমস্যা হলে গেইটটি বন্ধ রাখা উচিত। জেলা প্রশাসন এ গেইটটি বন্ধ করেছিল। খোঁজ নিয়ে পুনরায় বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে। 

এই বিভাগের আরো খবর