বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অমর্যাদা-অযত্নে চাষাড়া শহীদ মিনার, প্রধান ফটক ভাঙ্গা

প্রকাশিত: ৮ আগস্ট ২০১৮  

শাহজাহান দোলন (যুগের চিন্তা ২৪) : পৃথিবীর একমাত্র জাতি হিসেবে নিজের মাতৃভাষার জন্য জীবন দেয়া বীরদের সম্মানে গড়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। অথচ প্রতিদিন নানান অমর্যাদা আর অযত্নে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনারটি। অবহেলার সাক্ষ্য বহন করছে প্রায় ৬ মাস যাবৎ ভাঙ্গা চাষাড়া শহীদ মিনারের প্রধান ফটক।

সরেজমিন ঘুরে চাষাড়া শহীদ মিনার জুড়ে দেখা যায় নানান অযত্ন ও অবহেলার ছাপ। তিনটি ফটকের প্রধান ফটকটির এক অংশ ভাঙ্গা। ভাঙ্গা অংশ হেলান দিয়ে রাখা আছে ফটকের পাশেই। শহীদ মিনারে আগত লোকজন নানান আবর্জনা ফেলছেন শহীদ মিনারের মূল স্তম্বসহ এর প্রাঙ্গনে। 

জুতা পায়েই মূল বেদীতে বসে আছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক, শিশু-বৃদ্ধ প্রায় সকলেই। বেদীর পেছনের অংশে ঘুমোচ্ছেন ভবঘুরেদের কেউ কেউ। বেদীসহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গনেই চলছে প্রকাশ্য ধুমপান। 

শহীদ মিনারের অস্থায়ী দোকানিদের দেয়া তথ্য মতে চলতি বছরের একুশে ফেব্রয়ারীর প্রথম প্রহরে একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুলদিতে গেলে তাদের ধাক্কা ধাক্কিতে ভেঙ্গে যায় ফটকটি। 

তার পর প্রায় ছয়মাস পেরিয়ে গেলেও আর ঠিক করা হয়নি সেটি। ফলে এক প্রকার অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসীর মিলনস্থল চাষাড়া শহীদ মিনার।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে ধনী শহর প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ। তবে এখানে নেই পর্যাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র বা গণজমায়েত স্থল। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই দিনের শুরু থেকেই চাষাড়া শহীদ মানারে ভীর জমায় নারায়ণগঞ্জের প্রায় সর্বস্তরের মানুষ। 

আর এই জমায়েতকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনার ও এর আশপাশে গড়ে উঠেছে খাবারসহ নানান প্রকারের দোকান। সেই দোকান থেকে উৎপন্ন আবর্জনা ফেলা হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনেই।

শহীদ মিনারের পশ্চিম অংশ জুড়ে রয়েছে সারি সারি দোকান। সেগুলোর প্রধান খাবার চা, পানীয় ও বিভিন্ন ইন্ডিয়ান খাবার। সেসব দোকানে ব্যবহৃত টি ব্যাগ রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয় শহীদ মিনারের সৌন্দর্য বর্ধনে নির্মিত সিটি কর্পোরেশনের ফোয়ারা। পাশের গণসৌচাগারের বেহাল দশার কারনে কখনো কখনো তার দুর্গন্ধ ভেসে আসে শহীদ মিনারে। 

শহীদ মিনারের অস্থায়ী ফুচকা, ও ঝাল মুড়ির দোকানের কাগজ এবং পলিথিন ফেলা হচ্ছে শহীদ মিনারে। বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা পঁচে তৈরী হচ্ছে দূর্গন্ধ। 

কথা হয় শহীদ বেদীতে বসে আড্ডা দেয়া মেহের আফরোজ নামের তোলারাম কলেজের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। বলেন, আমরা বন্ধুরা প্রতিদিন ক্লাস শেষ হওয়ার পর শহীদ মিনারে এসে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করি। কিন্তু এখানে এখন আর গল্প করার মতো পরিবেশ নেই বললেই চলে।

কারন জানতে চাইলে যুগের চিন্তা ২৪কে তিনি বলেন, এখানকার পরিবেশ দিনের দিন খারাপ হচ্ছে। একদিকেতো ভিক্ষুকের উৎপাত, তার মধ্যেই সিগারেটের ধোঁয়া, পাশ থেকে ভেসে আসে দূর্গন্ধ।

অথচ তিনি নিজেই তখন বাদাম খেয়ে সেগুলোর খোসা ফেলছিলেন বেদীতে। সেই শিক্ষার্থীসহ বন্ধুরা বসে আছেন জুতা পায়ে।

তাদের জুতা পায়ে মূল বেদীতে বসে থাকা ও নোংরা করার কারনে জানতে চাইলে কিছুটা বিব্রত হয়ে বলেন, এখানেতো সবাই জুতা পায়েই উঠে। আর এমন ময়লা সকলেই ফেলে। তাই আলাদাভাবে বিষয়টার প্রতি নজর দেয়া হয়নি।

শহীদ মিনারে কথা হয় স্কুল শিক্ষক ইয়াকুব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সরকারী অব্যাবস্থাপনা আর আমাদের অসচেতনতা এই দুই মিলে শহীদ মিনার অপবিত্র হচ্ছে। এখানে আড্ডা দেয়ায় কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে অসচেতন ভাবে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে উঠা কিংবা তা নোংরা করায়। 

দীর্ঘদিন প্রধান ফটক ভাঙ্গা থাকাটা দুঃখ জনক মন্তব্য করে এই শিক্ষক বলেন, কথায় আছে যে জাতি তার বীরদের সম্মান দিতে পারে না সে জাতীতে বীর জন্মায় না। 

আমাদের সমাজের একটি অংশ সবসময়ই শহীদ মিনারকে ধর্মবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করতে কাজ করেছে। ফলে একটি অংশের মানুষ শহীদ মিনারের সম্মানের বিষয়টি গুরত্ব দিতে চায় না। 

এছাড়াও শহীদ মিনার বিষয়ে মানুষের ধারণা পাল্টাতে বিশেষ উদ্যোগে জনসচেতনতা তৈরীর প্রতি জোর দেন তিনি। 
 

এই বিভাগের আরো খবর