শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অতিরিক্ত ভাড়া নিলেও সেবার মান বাড়েনি ‘বন্ধু পরিবহনে’ 

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : বন্ধু পরিবহন সিটিং সার্ভিস, না কাউন্টার সার্ভিস তার উত্তর নেই কারো কাছে। চিটাগাংরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ টার্মিনাল ঘাট পর্যন্ত একমাত্র বাসসার্ভিস হওয়ার সুযোগে এই বাসকর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা চরমে পৌঁছেছে। স্বল্প দুরুত্বে নিজেদের ইচ্ছামত ভাড়া বাড়ালেও সেবার মান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ এই বাস সার্ভিস। 


এছাড়া এই পরিবহনের টিকিট কেনার সময় খুচরো কয়েন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগও যাত্রীদের। তাদের ভাষ্য, এতো কয়েন বন্ধু পরিবহন কর্তৃপক্ষের সংগ্রহের উৎস কি, অনেকে  অভিযোগ তোলেন ভিক্ষুকদের কাছ থেকে টাকার পরিমাণে কম টাকা দেয়ার শর্তেই এসব কয়েন সংগ্রহ করে তারা। আর তা ঘচিয়ে দেয়া হয় যাত্রীদের। প্রতিবাদ করলে  করা হয় তিরস্কারসহ নানা অপমান।     


যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারী হিসেব অনুযায়ী কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ টাকা ৭০ পয়সা করে। কিন্তু তারা সে নিয়ম মানছে না। চিটাগাংরোড থেকে কেন্দ্রীয় টার্মিনাল ১২ কিলোমিটারে ভাড়া ২০ টাকা। নতুন কোর্ট পর্যন্ত ১৮ টাকা ভাড়া নিলেও যাত্রীরা পড়ে হয়রানির মুখে। 


টিকেট ছাড়া গাড়িতে উঠানো নিষেধ থাকলেও তা মানেনা ড্রাইভার এবং হেল্পার। চিটাগাংরোড কাউন্টার থেকে গাড়ি ছেড়ে ৩০০ মিটার সামনে শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রী তুলে তারা। আবার সাইনবোর্ড কাউন্টারের আগেও নানা জায়গায় কাউন্টার ব্যতিরেকে যাত্রী তোলে তারা। পুরো সার্ভিস লোকাল পরিবহনের ন্যায় কিন্তু ভাড়া তুলছে সিটিং সার্ভিস বলেই।


এছাড়া জানা গেছে, বন্ধু পরিবহন আগে শহরের ১নং রেলগেট কাউন্টার হতে শিবু মার্কেট পর্যন্ত যাত্রী প্রতি ভাড়া আদায় করত ৮ টাকা। বর্তমানে আদায় করছে ১৭ টাকা । আর চিটাগাং রোড পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে ২০ টাকা। এদিকে সরকারী কিলোমিটার প্রতি বাড়ানো হয়েছে ১০ পয়সা করে।  


সে হিসেব অনুযায়ী সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড থেকে নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার হলে ভাড়া বাড়ার কথা ১ টা ২০ পয়সা। কিন্তু বন্ধু পরিবহন ভাড়া বাড়িয়েছে ৩ টাকা করে। অন্যদিকে শহরের চাষাড়া লিংক রোডের মোড় থেকে টেম্পু চালকরা মাত্র ১০ জন যাত্রী নিয়ে জনপ্রতি শিবুমার্কেট পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে মাত্র ৫ টাকা। 


আর বন্ধু পরিবহনে দ্বিগুণেরও বেশি আদায় করে যাত্রীদের সাথে অভিনব প্রতারণা করছে। চিটাগাংরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ চলাচলরত যাত্রীরা জানায় প্রতিদিন কমপক্ষে এ সড়ক দিয়ে লক্ষাধিক লোক যাতায়াত করছে বন্ধু পরিবহন দিয়ে।


এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করানো হচ্ছে। সিট খালি না থাকলেও যাত্রী উঠানোর ফলে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে মহিলা যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। এ পরিবহনে অহরহ ঘটছে পকেট মার মোবাইল চুরি ও যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে মলম পার্টির খপ্পড়ে। এসব পকেটমার ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের সাথে বন্ধু পরিবহনের চালক হেলপারদের যোগসূত্র রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


বন্ধু পরিবহনের একজন নিয়মিত নারী যাত্রী শামীমা আক্তার জানান, প্রতিদিনই এই বাস দিয়ে যাই। কিন্তু দাড়িয়ে যাইতে হয়। সিটিং সার্ভিস উল্লেখ করে টিকেট কাটলেও সিট পাই না। মহিলা সিটও খালি পাই না, প্রায় সময়ই মহিলা সিট এ পুরুষরা বসে থাকে। অর্ধেক রাস্তায় গেলে কখনও দেখা যায় কেউ সিট দিচ্ছে, তখন বসে যাই। নয়ত চিটাগংরোড অব্দি দাঁড়াইয়াই যাইতে হয়।


ভুক্তভোগী একাধিক বাস যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্ধু পরিবহন  সিটিং সার্ভিস থাকলের তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে লোকাল বাসের মত। মনের ইচ্ছে মত থামিয়ে থামিয়ে যাত্রীদের উঠা-নামা করাচ্ছে। অন্যদিকে কোনো প্রকার নিয়মনীতি ছাড়াই বাড়িয়েছে ভাড়াও।


ভুক্তভোগী যাত্রী এম আর কামাল জানান, স্বল্পভাড়ায় চলাচলের সুবিদ্বার্থে বন্ধু পরিবহনের চলাচল করে থাকে আমাদের মত অনেক মানুষ। কিন্তু গত কয়েকদিন যাবৎ বাড়তি ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে বন্ধু পরিবহনে। বাসের টিকেটে ১৭ টাকার জায়গায় লেখা রয়েছে ২০ টাকা। 


এ নিয়ে বাসের হেলপারের সাথে কথা বললে তারা আমাকে জানায়,বিশেষ কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারে নি ওই হেলপার।


তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ বন্ধু পরিবহনের পরিচালক মুরাদ। তিনি বলেন, ড্রাইভার ও হেল্পাররা বাসে নানা জায়গা থেকে যাত্রী উঠায় এটি সবসময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথাটি সঠিক না। বাস টার্মিনাল থেকে অনেকে কোর্ট পর্যন্ত যাবে বলে গাড়িতে উঠে। 


কিন্তু দেখা যায় তারা শিবু মাকের্ট, জালকুড়ি পর্যন্ত যায়। যার কারণে আমাদের টিকেটটা ওইভাবেই করা। আর বন্ধু পরিবহনের কাউন্টারে কয়েন বিড়ম্বনার বিষয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। তবে এর সাথে স্থানীয় কাউন্টারের লোকেরাই জড়িত। বিষয়টা আমরা আবারও গুরুত্বসহকারে দেখবো, কোন কাউন্টার থেকে আর যাত্রীদের কয়েন ঘচিয়ে দেয়া হবেনা। 
 

এই বিভাগের আরো খবর