
প্রিন্ট: ২০ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৬ এএম
‘শেখ হাসিনা কোনো দালাই লামা নন, ভারতকে তার সমর্থন বন্ধ করতে হবে’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১১ পিএম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
৫ আগস্ট থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি। রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৮০তম দিনেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। তার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে তার দল আওয়ামী লীগ হয়তো পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে।
ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্ট দ্রুত ভাইরাল হয়, যা সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষের জমায়েত ঘটায়। হাসিনা তার বক্তৃতা শুরু করার সময় ধানমন্ডি ৩২-এর ঐতিহাসিক ভবনের সামনে বুলডোজার আনা হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তা আগুনে জ্বলতে থাকে। পরে ডোজারের বড় ধাতব ব্লেডগুলো ভবনের একটি অংশ ধ্বংস করতে শুরু করে।
এই ঘটনা বিস্ময়ের জন্ম দেয়, এমনকি বাংলাদেশের এস্টাবলিশমেন্টের মধ্যেও। সেনাবাহিনীর প্রায় ৪০ জন সদস্য ভবনটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন, কিন্তু বিক্ষোভকারীদের প্রতিরোধের মুখে সরে যেতে বাধ্য হন। পরদিন সকাল, বাংলাদেশ এক নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড়ায়— দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে যা ঘটেনি, তা মাত্র ৯ ঘণ্টায় সম্পন্ন হয়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িটি।
তবে এই ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে কোনও ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ছিল না। যারা উল্লাস করছিলেন, তারা দেশের ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও শহুরে জনগোষ্ঠীর অংশ ছিলেন। একের পর এক কারচুপির নির্বাচনের কারণে যারা কখনোই ভোট দিতে পারেননি, তারাই এই প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেন।
শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে তার বাবার উত্তরাধিকার এবং মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এক সময় যা ছিল জাতীয় গর্ব, তা এখন অনেকের চোখে দুঃশাসনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
এই ঘটনার একদিন পরেও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সোহেল তাজ কোনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তিনি ইঙ্গিতপূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে থাকা হাসিনাকেই দলটির পতনের জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, “একজন ব্যক্তি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যেখানে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলের মর্যাদাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।”
এদিকে, ভারতের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনও হাসিনার প্রতি ক্ষোভকে আরও তীব্র করেছে। কিছুদিন আগেই একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়, যেখানে হাসিনাকে তার বিরোধীদের বাড়িঘরে আগুন ধরানোর নির্দেশ দিতে শোনা যায়।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে হাসিনাকে পুনর্বাসন করা প্রায় অসম্ভব। কারণ তার শাসনামলের নিপীড়ন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতার স্মৃতি এখনো জনগণের মনে টাটকা। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও জটিল হয়ে পড়েছে।
ভারতের জন্য এখন বাংলাদেশকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সময় এসেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাংলাদেশকে “পাকিস্তানের প্রেতাত্মা” হিসেবে চিত্রিত করার প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গে ভোট জিততে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশকে হারানোর ঝুঁকি তৈরি করবে।
বাংলাদেশে চীনের ভূমিকা বরাবরের মতোই বাস্তববাদী। অন্যদিকে, ভারতের নীতি এখনো ৭৭ বছর বয়সী ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকেন্দ্রিক রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারতকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখে ওয়াশিংটন।
বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায়, বাংলাদেশ নতুন একটি অধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা বিপ্লব দেশটিকে নতুন করে গড়ার সুযোগ দিয়েছে, যেখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিষয়গুলো নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হবে।
সূত্র : দ্য প্রিন্ট, লেখক: আহমেদ হোসেন।