মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধ বিস্মৃত হওয়ার মানে হচ্ছে আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলা : রফিউর রাব্বি

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম : প্রখ্যাত নাট্যকার মুনির চৌধুরীর বিখ্যাত কবর নাটকের একটি সংলাপের উদ্ধৃতি দিয়ে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি  বলেন, যারা শহিদ তাঁদেরকে মাটি চাপা দিয়ে রাখা যায় না, কোন না কোন সময়ে তারা মাটি ভেদ করে বেড়িয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য এমনই একটি বিষয় আমাদের মধ্য থেকে সেটা বিস্মৃত হওয়ার মানে হচ্ছে আমাদের পরিচয় হতে ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাওয়া, নিজেদের আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলা। সোমবার মহান মুক্তিযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে প্রথম প্রতিরোধ ও হত্যাযজ্ঞ দিবসে প্রতিরোধ স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি তার বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, কবি হালিম আজাদ, নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, উদীচী নারায়ণগঞ্জ জেলা সংসদের সভাপতি জাহিদুল হক দিপু, নারী সংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক পপি রানি সরকার, বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক নিখিল দাস, আবৃত্তি শিল্পী ফাহমিদা আজাদসহ নারয়ণগঞ্জের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলের নেত্রীবৃন্দ। এদিকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন কমিউনিষ্ট পার্টির কোন নেতা কর্মীকে সেখানে ফুল দিতে দেখা যায়নি। রফিউর রাব্বি আরো বলেন, অস্ত্রসস্ত্র সজ্জিত পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এক নলা দু’নলা বন্দুক সহ লাঠিসোটা দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা থেকেই বাঙ্গালিদের মনোবল সম্পর্কে ধারণা করা যায়। পাক বাহিনী পঞ্চবটী থেকে শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে প্রতিরোধ স্তম্ভের কাছে অবস্থান নেয়া মুক্তিসেনারা পাক বাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা করেন। এতে একজন পাক সেনা গুলিবিদ্ধ হলে পাক বাহিনীর একটি জীপ তাকে নিয়ে ঢাকা রওনা হয়। পরবর্তীতে  হানাদার বাহিনী শহরে প্রবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এখানে দু’টি বিষয়, প্রথমটি গৌরবের এবং দ্বিতীয়টি শোকের। এই ইতিহাসকে ধরে রাখার প্রথম ধাপ হিসেবে এই প্রতিরোধ স্তম্ভ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মকে এখানকার গৌরবোজ্জল ইতিহাস জানানোর সুযোগ তৈরী হয়েছে। এ সময় তিনি প্রতিরোধ স্তম্ভ নির্মানের জন্য মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দীনকে ধন্যবাদ জানান। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা প্রতিরোধ স্তম্ভের জায়গাকে আরো প্রসারিত করে স্থানটির যথাযোগ্য রক্ষনাবেক্ষন করা, এবং  ২৭ মার্চ ১৯৭১ এ পাকিস্থানিদের হামলায় যারা শহিদ হয়েছেন তাদের সকলের নাম সহ একটি  নাম ফলক করার দাবি ওঠে। পরবর্তি বছর গুলোতেও গুরুত্বের সাথে প্রতিরোধ ও হত্যাযজ্ঞ দিবস পালন করা হবে বলে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, ২৫ মার্চ ঢাকায় হত্যাযজ্ঞ শেষে ২৭ মার্চ ভোর রাতে পাক বাহিনী ট্যাংক, কামান ও আধুনিক অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ঢাকা থেকে পঞ্চবটি হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ওই সময় মাসদাইর কবরস্থান এলাকায় প্রথম হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। হানাদারদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে অনেকেই সেদিন পাশের একটি মসজিদে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাতেও রক্ষা পায়নি নিরীহ মানুষ। হানাদার বাহিনী বুটজুতা পায়ে সেই মসজিদে ঢুকে ১৪/১৫ জনকে হত্যা করে। এ দিনটিকে স্মরণ করে সোমবার  মাসদাইর কবরস্থান সংলগ্ন প্রতিরোধ স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন ও স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। শিমুল/এস/এস
এই বিভাগের আরো খবর