শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গণ পরিবহণে নৈরাজ্য : সমাধান (১)

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম : গণ পরিবহণে নৈরাজ্য, এ কোন নতুন কথা নয়। নৈরাজ্য বলতে পরিবহণ জগতের বিশৃঙ্খলা, মনোপলী ব্যবসা, আইন নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রতিযোতীতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং মানুষ হত্যার এক চেটিয়া লাইসেন্সধারী সেক্টর বললেও ভুল বলা হবে না। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু গণ পরিবহণের দাপট আর কমে না। কারণ তারা সব সময়ই সরকারী দল। যখন যে দল ক্ষমতায় সে দলের নেতাদের সামনে রেখেই পরিবহণ মালিকেরা তান্ডব চালায়। সময়ে সময়ে এ দেশে যারা এম.পি/মন্ত্রী হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা পরিবহণ ব্যবসার সাথে জড়িত। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক কর্তা ব্যক্তি রয়েছেন যারা পরিবহণ ব্যবসার সাথে জড়িত, স্বনামে বা বেনামে। পরিবহণ থেকে প্রতিদিন যে চাঁদা উঠে তার একটি অংশ টপ-টু-বটম অর্থাৎ সার্জেন্ট থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায় পর্যন্ত ভাগ বাটোয়ারা হয়। প্রতি টার্মিনাল, এক জেলা থেকে আরেক জেলায় অতিক্রম করার চাঁদাবাজী ছাড়াও গণ পরিবহণের নেতারা নিয়মিত চাঁদা পেয়ে থাকে। যে সকল প্রাইভেট মাইক্রোবাস যাত্রীদের জন্য ভাড়ায় খাটে তাদেরকেও একটি নির্দিষ্ট চাঁদা পুলিশ ও নেতাদের পরিশোধ করতে হয়। বিআরটিএ রুট পারমিট দিলেও পরিবহণ নেতাদের মোটা অংকের টাকা না দিলে সে রুটে বাস চালানো যাবে না এটা বৃটিশ শাসনতন্ত্রের মত যেন একটি অলিখিত আইন যাহা বাধ্যতামূলক অর্থাৎ MANDOTARY হয়ে দাড়িয়েছে। বেপরোয়া ট্রাক’কে সরকার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে নাই। কারণ সরকার যতই নিষেধাজ্ঞা প্রদান করুক না কেন ঘুষ বানিজ্যের কারণে তা বিফলে যায়। ঘুষের বিনিময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাক চালকদের টোকেন দেয়া হয়, যেমন- এপ্রিল মাসে যদি বাঘের ছবির টোকেন দেয়া হয় তবে মে মাসের জন্য দেয়া হবে হরিনের ছবি সম্মলিত টোকেন। উক্ত টোকেন প্রতি মাসেই পরিবর্তন হয় যা পুলিশের নির্ধারিত কর্মকর্তাদের নিকট থেকে ট্রাক মালিকরা ক্রয় করে, ফলে ফিটনেস, ব্লুবুক, প্রভৃতি সঠিক না থাকলেও অনায়াসে ট্রাক এক জেলা থেকে অন্য জেলায় সহজেই চলাচল করতে পারে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয়ের Accident Research Center এর জরিপে দেখা যায় যে, দেশে প্রতি বৎসর ১২ হাজার মানুষ সড়ক দূর্ঘটনার কারণে মারা যায়, আহত হয় ৩৫ হাজার মানুষ। জাতি সংঘের প্রতিবেদন মোতাবেক বাংলাদেশের বার্ষিক আরবান গ্রোথ হচ্ছে ৪%, আর মোটর ভেহিকেল গ্রোথ হচ্ছে ৮% অর্থাৎ দ্বিগুন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে ২০১৬ ইং সালে ৬,৫৮১টি সড়ক দূর্ঘটায় মৃত্যু হয়েছে ৮,৬৪২ জন। যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোন সুনির্দিষ্ট বিধান সরকার করে নাই। দূর্ঘটনায় নিহত হলে বিআরটিসি থেকে ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান করা হয়েছিল যা সম্পূর্ণ অপ্রতুল। যানজট সমস্যা, কিন্তুটা System Loss এবং কিছুটা কৃত্রিম যা দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে সংগঠিত হচ্ছে। (ক্রমশ:) লেখক : এ্যাডঃ তৈমূর আলম খন্দকার সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন কলামিষ্ট ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোবাঃ ০১৭১১-৫৬১৪৫৬ E-mail: [email protected]  
এই বিভাগের আরো খবর