শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আজ পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭

ইমতিয়াজ আহমেদ, যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম : আজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ। ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। বাংলা নববর্ষ। আজকের নতুন সূর্য্যালোকে স্নাত হয়ে নারায়ণগঞ্জবাসী বরণ করবে বাংলা নববর্ষকে। পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজন জেলাজুড়ে। শহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে বৈশাখ বরণের আয়োজন। দেওভোগ লক্ষ্মী নারায়ণ আখড়ায় শুরু হচ্ছে মাস ব্যাপী বৈশাখী মেলা। নগর জুড়ে রয়েছে বৈশাখী ফলের সমাহার। চারিদিকেই আজ আনন্দ। একটু শংকা আছে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে। তবুও হতাশা-গ্লানিময় অতীতকে ভুলে যাবার এক সহজাত প্রয়াসের মধ্যদিয়ে দুয়ারে এসেছে পহেলা বৈশাখ। গতকাল বৃহস্পতিবার  পশ্চিম দিগন্তে ১৪২০ বঙ্গাব্দের শেষ সূর্য অস্তমিত হয়। নতুন ভোরে নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নতুন দিন ও বছরের যাত্রা শুরু হবে। আজকের পত্রিকা যখন পাঠকের হাতে পৌঁছবে তখন নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশ বৈশাখী উৎসবে মুখর। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ জাতীয় ছুটির দিন। এদিকে বর্ষবরণের সকল প্রস্তুতি গতকালই সম্পন্ন হয়েছে। নববর্ষ উদযাপন নির্বিঘœ করতে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নববর্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের জঞ্জাল সরাতে ঘোষণা করেছেন নতুনের মহত্তম আহবান ‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে.... তোরা সব জয়ধ্বনি কর'। রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ বাংলা নববর্ষকে দাওয়াত করেন আরো প্রত্যয়মগ্ন হয়ে গভীর আকুলতায় ‘অগণ্য অসংখ্য বাধা ওড়ায়ে হয় প্রবল কণ্ঠে। তুলি পুরুষ হুংকার, হে বৈশাখ এসো...।' পহেলা বৈশাখ, কেবল জ্যোতির্বিদ্যা নিরুপিত পৃথিবী আহ্নিক গতির ওপর নির্ভরশীল একটি দিন তা নয়। আমাদের জীবনে চেতনা এবং স্বকীয় সংস্কৃতির পরিচয়ও বটে। স্মৃতিচারণ : বৈশাখী মেলা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে শহরের উত্তর চাষাড়ার বাসিন্দা শেখ মাকসুদুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে বৈশাখ বলতে আখড়া মেলাকে বোঝায়। দেওভোগ আখড়া মেলার ঐতিহ্য অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এখনো প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে মেলা বসে। মাস ব্যাপী এ মেলার আশায় থাকে শিশু-কিশোররা। আমরা শৈশবে মেলাকে ‘বান্নি’ বলতাম। এখনো ভুল করে ‘বান্নি’ বলে ফেলি। সেই বড় চড়ক গাছ, নাগড়দোলা নেই। মেলার পরিসর এখন ছোট হয়ে এসেছে। আগেরকার খৈ-উকরা ও  নিমকী পিটির স্বাদ কোখায় ? নেই গরম গরম জিলাপী। তাকলেও স্বাদ নেই। কদমা, তিলেখাজা, গজার নাম ভুলে যেতে বসেছে শিশু কিশোররা। সবাই এখন ব্যস্ত মোবাইল নিয়ে। এখনকার বৈশাখে আয়োজন বেশি, প্রাণের স্পন্দন কম। একইভাবে হারানো দিনের কথা বললেন দেওভোগের বাসিন্দা নাট্যকার সেলিম খন্দকার খোকা। তিনি জানালেন, আখড়া মেলার কিছুই আজ নেই। এখন সবকিছু বানিজ্যিক হয়ে গেছে। প্রাণের টান কোথায়। আগে ঢাকের শব্দে শহরবাসী মেলার কথা জেনে যেত। আখড়ায় বটগাছের নীচে বসতো মেলা। চড়ক গাছের ক্যাচ ক্যাচ শব্দ, ভেপু ও বাঁেশর বাঁশির আওয়াজ কানে আসতো দিনভর। আহা সে দিন কোথায় পাব। আবহমান বাংলা : আবহমান বাংলার এক চিরন্তন রূপ নিয়ে বৈশাখের আগমন ঘটে সারা বাংলায়। প্রকৃতির ধূলিধূসর আবরণটুকু বৈশাখের তুমুল হাওয়া উড়িয়ে নেয় দূরে বহুদূরে। পুরনো জীর্ণতাকে মুছে দিয়ে নিসর্গের ক্যানভাসে অঙ্কিত করে এক নবজাগরণের, নতুন স্বপ্নের দিনলিপি। বাঙালী সংস্কৃতির প্রতিটি স্তবকে রয়েছে ঐতিহ্যের ধারক বৈশাখের অফুরন্ত ছোঁয়া। যে ছোঁয়ায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে মন আর দৈনন্দিন জীবন। আকাশে থমকানো মেঘের টুকরোর মতো উচ্ছ্বাস যেন বাংলা নববর্ষের বর্ষবরণে ভিন্ন এক মাত্রা নিয়ে উন্মোচিত হয়। যার ছাপ পড়ে জীবনের প্রতিটি স্পন্দনে, ছন্দে। ব্যবসা-বাণিজ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাওয়া-দাওয়া, জীবনাচার, চাষাবাদ থেকে শুরু করে প্রতিটি পঙ্ক্তিতে পহেলা বৈশাখের ছাপ লক্ষ্য করা যায় নতুন বর্ষের সূচনা লগ্ন থেকে। এই বৈশাখকে ঘিরে যেমন সমগ্র বাংলার পথেপ্রান্তরে নতুন ফসলের তরঙ্গবীথির দুলুনি মনকে প্রসন্ন করে তোলে। একই ভাবে চোখে পড়ে বাঙালী মানসের উচ্ছ্বাস। সেই তরঙ্গ বৈশাখী উৎসবে মেতে উঠে যেন সারা বাংলার পল অনুপল। বৈশাখের রঙে রেঙে যায় বাঙালী নারী আর পুরুষ। এ যেন এক অভূতপূর্ব জলরঙ ছবি। যে ছবির অন্তর্গত মহিমার সঙ্গীত বাজে অমিয় সুরের ধারায়। গ্রামীণ জনপদে যেমন বাংলা নববর্ষের একটা অনস্বীকার্য প্রভাব রয়েছে। একইভাবে নগরজীবনেও পহেলা বৈশাখের প্রবল উত্তাল, আনন্দমুখর উৎসারণ যেন সকল পঙ্কিলতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে আকণ্ঠ আবেগ, মানবিক চৈতন্যের দরজায় এসে বেল বাজায়। লাল কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙ্গা অনুরাগে স্ফুরিত হয়ে বৈশাখ আসে বছর ঘুরে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে চারুকলা প্রাঙ্গনে, চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, শীতলক্ষ্যা তীরের ওয়াক ওয়েতে, ঢাকার রমনার বটমূলে,  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাতাঝরা আঙ্গিনায়, টিএসসি, চারুকলার গভীর প্রাঙ্গণে। ভোরবেলার মুখরিত ইলিশ-পান্তা ভোজন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, লাল-সাদার শুদ্ধতা বিজড়িত নন্দিত প্রহর যেন বৈশাখের গলায় এক চিরকালীন সম্প্রীতির মালা পরিয়ে দিয়ে যায়। আর এ মালায় গ্রথিত ফুলের ঘ্রাণে বছরজুড়ে বাঙালীর প্রাণ যেন থাকে উদ্বেলিত। নিরাপত্তার চাদর: বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জব্যাপী নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে র‌্যাব, পুলিশ, ডিবিসহ জেলার সকল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও দিনটি উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তার চাদরে নারায়ণগঞ্জকে ঘিরে রাখতে সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১২ এপ্রিল বুধবার রাত থেকেই জেলায় সকল বহিরাগতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে তল্লাশী করার জন্য তলাশি চৌকিগুলোকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সকল উন্মুক্ত অনুষ্ঠান সরকারি নির্দেশনাক্রমে বিকেল ৫টার মধ্যে সম্পন্ন করতেও অনুরোধ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন জানান, আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্যরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সাদা পোশাকের পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, সকল বাহিনীর সদস্যদেরকেও এ্যালার্ট থাকতে বলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, মঙ্গলশোভাযাত্রায় নিরাপত্তার জন্য আমাদের পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবাইকে শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে বাঙালীর বড় উৎসব পালনের জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
এই বিভাগের আরো খবর