ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানকে
প্রকাশিত: ৮ মে ২০১৭ আপডেট: ৮ মে ২০১৭
স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, শামীম ওসমান ইতিহাসের পাঠ গ্রহণ করে না। সে এখনো পর্যন্ত তা থেকে শিক্ষা নেয় নাই। ৩৬ বছর পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, ৪২বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংঘটিত হয়েছে।
ত্বকী হত্যার জন্যে ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শামীম ওসমান, হত্যাকারী হিসেবে তার ছেলে অয়ন ওসমান এবং ভাতিজা আজমেরী ওসমানকে অবশ্যই ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে। সেটা আজ অথবা কাল যখনই হোক। এ থেকে তার পরিত্রান পাওয়ার কোন কারণ নেই। এ ছাড়াও সে বিভিন্ন হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে, কিন্তু ত্বকী হত্যা থেকে তার পরিত্রান পাওয়ার কোন কারণ নেই।
নারায়ণগঞ্জে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ৫০ মাস পূর্তিতে মোমশিখা প্রজ্জ্বলন কর্মসূচী পালনকালে তিনি তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নগরীর চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সোমবার সন্ধ্যায় এই কর্মসূচী পালন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, খেলাঘর জেলা কমিটির সভাপতি রথীন চক্রবতী, জেলা সিপিবি সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদের জেলার সমন্বয়ক নিখিল দাস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু নারায়ণগঞ্জ, এড. আওলাদ হোসেন, এড প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল প্রমুখ।
সমাবেশে রফিউর রাব্বি আরো বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে ত্বকী হত্যায় অভিযুক্ত ওসমান পরিবার দ্বারা আমাদের অনেককেই রোষানলে পড়তে হয়েছে। এই ত্বকী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি মামলা মোকদ্দমা দিয়ে আমাদের হত্যার বিচার চাওয়া থেকে বিরত থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে।
আমার বিরুদ্ধে শামীম ওমান তার স্ত্রীকে দিয়ে মানহানির মামলা করিয়েছে, তার মামা শ্বশুরকে দিয়ে চেক ডিজঅনারের মিথ্যা মামলা কিরয়েছে, সোনালী ব্যাংকের ডিজিএমকে ভয় দেখিয়ে জোর করে মামলা করিয়েছে এখন আবার হেফাজতের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ২১ এপ্রিল শুক্রবার বন্দর জামে মসজিদ নামে যে মসজিদটি সেই মসজিদটিতে জুমআর নামাজের সময় আমার বিরুদ্ধে নাস্তিক বলে সেখানে বিভিন্ন বক্তব্য দেয়া হয়েছে। নামাজ শেষে এলাকার লোকজন ইমাম সাহেবকে ধরে জিজ্ঞেস করেছেন আপনি কী তাকে চেনেছেন? সে তো ২০ বছর আগে হজ্ব পালন করেছেন সে নাস্তিক হয় কীভাবে? সে সুফীবাদে বিশ্বাসী একজন লোক। তার সাথে কী আপনার পরিচয় রয়েছে ? ইমাম বলেন, আমি তাকে চিনি না।
তাহলে আপনি কেন এই কথা বললেন, তিনি বলেন, শামীম ওসমানের ভয়ে। শামীম ওসমান শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব-পশ্চিম পাড়ের বিভিন্ন মসজিদে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও টাকা পয়সা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বলিয়েছেন এবং এখনো বলাচ্ছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা যাতে ত্বকী হত্যার বিচার না চাই। শামীম ওসমানদের অপকর্ম খুন, হত্যা, রাহাজানি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা কথা না বলি।
রফিউর রাব্বি বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জের কেউ কেউ নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ঠিকাদার মন করে। আবার কেউ কেউ নিজেদেরকে ইসলাম ধর্মের ঠিকাদার মনে করে। মুক্তিযুদ্ধের ঠিকাদাররা তাদের বিরুদ্ধে যারা বলে, তাদেরকে তারা রাজাকার, রাজাকারের সন্তান বলে। অথচ তারা নিজেরা রাজাকারদের সাথে আত্মীয়তা করে। রাজাকারের ছেলেদের চেম্বারের সভাপতি বানায়, তাদের চারপাশে রাজাকারের ছেলে নাতি পুতিরা কিলবিল করে।
তারা আবার মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। আমরা আবার দেখি, একটি গোষ্ঠি তারা নিজেদেরকে মনে করে ইসলামের ঠিকাদারীটা তাদের কাছে। তারা যাকে ইচ্ছা নাস্তিক বলবে, যাকে ইচ্ছা মুরতাদ বলবে, ধর্ম বিরোধী বলবে। তাদের এই অধিকার কে দিলো, কোত্থেকে পেলো এটি হলো প্রশ্ন।
তিনি বলেন, এই গোষ্ঠিটি অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে এই কথাগুলো বলে বেড়ায়। এই গোষ্ঠিটি ১শ’ বছর আগেও কাজী নজরুল ইসলামকে কাফের ফতুয়া দিয়েছিল, এক হাজার বছর আগে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীকে কাফের ফতুয়া দিয়েছিল এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা। বিভিন্নভাবে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে বিভিন্ন ফতুয়া দিয়ে বেড়ায়।
জালাল উদ্দিন রুমীকে যারা কাফের ফতুয়া দিয়েছিল তাদের নাম নিশানা নাই, অথচ জালাল উদ্দিন রুমী এক হাজার বছর পরেও সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচিত এবং শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্মরণ করা হয়। ৬৫টি ভাষায় জালাল উদ্দিন রুমির ‘মসনবী শরীফ’ অনুদিত হয়েছে। নজরুল ইসলামকে এশিয়া, ইউরোপ- আফ্রিকার মানুষ জানে।
ধর্ম ব্যবসায়ী যারা তাকে কাফের ঘোষণা করেছিল তাদের কেউ চিনে না। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সবসময়ই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হয়। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। এরা ধর্মের আলখাল্লা গায়ে দিয়ে ধর্মের নামে মিথ্যাচার করে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা প্রকৃত পক্ষে ভন্ড। এই আল্লার ঘরে বসে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। মিথ্যার বেসাতি করে, অথচ এরা ইসলামের রক্ষক হিসেবে ধর্মের নামে ফতুয়া দেয়।
আমরা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ৬ মাস আগে আপনি বলেছিলেন, ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে তা আমরা জানি। কাদের অফিসে রক্তমাখা প্যান্ট পাওয়া গিয়েছিল আমি জানি। আপনি বলেছিলেন, ত্বকীর দু’জন হত্যাকারীকে কারা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে আমি জানি।
আপনি আরো বলেছিলেন, সমস্ত গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন আমার কাছে আছে। আমি জানি ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার বিচার করবো। আমরা ৫০ মাস উপলক্ষ্যে এখানে বলতে চাই, আপনি ত্বকী হত্যায় নির্দেশদাতা, হত্যাকারীদের সেখানে গ্রেপ্তার করে নির্দেশ দিন, বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
তিনি বলেন, যখন নাকি কেউ ডুবতে থাকে, তখন খড়কুটো হাতের কাছে যা পায় তা নিয়ে বাঁচতে চায়। তারা বাঁচার জন্য এখন হেফাজাত জামায়াত কোন বাছ বিচার নাই, যাকে ইচ্ছা তারা তাকেই আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। এই খুনী পরিবারটি হচ্ছে একটি ডুবন্ত জাহাজ। এই জাহাজে যারা সওয়ার হবে তারাও এখন ডুববে।
তিনি বলেন, আমরা একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই দেশটির নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এটি ইসলামি রিপাবলিক অব বাংলাদেশ নয়। এটি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ, ৩০ লক্ষ শহীদের বাংলাদেশ। এই দেশে যেমন তিতুমীর, ফকির বজলু শাহ্ রক্ত ঝড়েছে, ঠিক তেমিন এ দেশ সূর্য্য সেন প্রীতিলতার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এই দেশ সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাস্পে কখনো আচ্ছাদিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
এটি লালন-হাসনের বাংলাদেশ, শাহজালালের বাংলাদেশ, শ্রী চৈতন্যের বাংলাদেশ। শ্রী চৈতন্যের ভক্তি বিপ্লব আর সুফীবাদের সমন্বয়ে এখানে এই ভুখন্ডের মানুষ সংগঠন গড়ে উঠেছে। এটি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বাংলাদেশ।
সুতরাং যারা আস্ফালন করেন, মনে করেন, ধাক্কা দিয়ে এই দেশটিতে ৫০ বছর পেছনে নিয়ে যাবো, আমরা আরেকটা পাকিস্তান বানিয়ে দেব, সেই খোয়াব দুস্বপ্নই থেকে যাবে। এই বাংলাদেশে তা কখনোই সম্ভব হবে না। এই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য যেমিন সফল হবে না, তেমনি বাংলাদেশে ধর্ম ব্যবসায়ী ভন্ড এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, জঙ্গী গোষ্ঠির অভয়ারণ্য কখনোই হবে না। আমরা ত্বকী হত্যার ৫ বছর পূর্তিতে এই কথাটি বলতে চাই, আমরা ত্বকী হত্যাসহ, আমাদের এই নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত চঞ্চল হত্যা, আশিক হত্যাসহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার চাই। সকল হত্যাকান্ডের বিচার আদায় করে ছাড়বো। আমরা সই প্রতিজ্ঞাই আজকে গ্রহণ করছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরন ও খুন করা হয়। ৮ মার্চ শীতলক্ষা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ত্বকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে কলেজ রোড এলাকায় তার টর্চার সেলে নির্যাতন চালিয়ে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। সে সময় থেকে বিচারের দাবিতে প্রতিমাসের ৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এ প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে আসছে।
এই বিভাগের আরো খবর
- ধরা খেলেন শামীম ওসমান
- পদত্যাগ করার ঘোষনা দিলেন মেয়র আইভী
- আমার ভাই এমপি হিসেবে অনেক কিছুই বলতে পারেন : আইভী
- ওবায়দুল কাদেরের পা ধরেও কাজ করাতে পারেননি শামীম ওসমান
- আ’লীগের মনোনয়ন নিয়ে
কাদের নওফেলের পর বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন ‘ভুয়া’ - গ্রেপ্তার করলে আগে আমাকে করুন : পুলিশকে শাহেদ
- আইভীর নড়াচড়ায় শামীমের দৌড়ঝাঁপ
- আইভীকে দেখে চলে গেলেন হাই-বাদল
- বাবুর রাজ্যে শামীমের হানা !
- শামীম ওসমান কেন, কাউকেই মনোনয়ন দেইনি : ওবায়দুল কাদের
- শামীমের ওসমানের শপথ কাজে আসেনি
- আসছে জাকির খান, থাকছে রাজীব-মোশারফ
- নৌকা মার্কায় কিভাবে নমিনেশন পান দেখা যাবে : বাদল
- আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল
আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের ৮ নেতা - ডিসবাবুকে গ্রেপ্তারের পর এসপি কার্যালয়ে শামীম ওসমান (ভিডিও)