শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সোনারগাঁয়ের শিল্পমালিকরা নিরাপত্তাহীন: চাঁদাবাজি সর্বত্র যেন বৈধ !

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সোনারগাঁ প্রতিনিধি : বাস্তবেই সোনারগাঁয়ের সর্বত্র চাঁদাবাজি যেন বৈধ রূপ পেয়েছে। প্রতি মাসে এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে বয়েক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এখানে শিল্প কারখানায় এখন চাঁদা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশের চাঁদাবাজির ঘটনায় শিল্প মালিকরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শিল্প কারখানায় বেপরোয়া চাঁদা বাণিজ্য রীতিমতো ছিনতাই-ডাকাতির পর্যায়ে চলে গেছে। দিন-রাতের বিভীষিকাময় এ চাঁদা বাণিজ্য আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। সোর্সদের মাধ্যমে তোলা বিপুল হারের এ চাঁদা পরিশোধে চরম ক্ষতিগস্ত হচ্ছেন শিল্প মালিকরা। জানাগেছে, প্রতি মাসে এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে বয়েক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদা না দিলে মারধর করা হয়। হয়রানি করা হয় মামলা দিয়ে। রাতে চাঁদাবাজ পুলিশ সদস্যরা নামেন ডাকাতের ভূমিকায়। রাতের আঁধার নামতেই পুলিশ তাদের সোর্সের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠানে জড়ো হয়। অতি ভয়ঙ্করভাবে রাতের আততায়ী হিসেবে চাঁদা তোলা হয়। রাতভর বিরতিহীন চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে হৈচৈ, ছোটাছুটিতে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শিল্প মালিকদের অভিযোগ, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হলে মালিকদের সারারাত আটকে রাখা, মরাধর, মিথ্যা সন্দেহের দোহাই দিয়ে মামলার ভয়-ভীতি দেখানো হয়। বিল্লাল হোসেন নামে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা নিতে গিয়ে বরখাস্ত হন সোনারগাঁ থানার এসআই আমিনুল ইসলাম ও আবদুল লতিফ। জানাগেছে, সোনারগাঁ উপজেলার মিরেরবাগ এলাকায় কাউছার টেক্সটাইল মিলের মালিক বিলাল হোসেনকে মারধর করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে পুলিশের কয়েকজন সদস্য। এলাকাবাসী বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিষ্ঠানের চারপাশ থেকে গিরে ফেলে এবং পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। ১৯ ফেব্রুয়ারি রোববার রাতে সোনারগাঁ উপজেলার মিরেরবাগ এলাকায় কাউছার টেক্সটাইল মিলে এসআই আমিনুল ও আব্দুল লতিফ, দুই কনস্টেবল ও স্থানীয় সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান হাবিব, মিঠু, গোলজার, জয়নালকে সঙ্গে নিয়ে ওই শিল্পকারখানায় গিয়ে চাঁদা দাবি করে। এক পর্যায়ে কারখানার মালিক বিলাল হোসেনকে আটক করে মারধর করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন মারধরের শিকার হয়ে ডাকাত বলে চিৎকার দেন। বিষয়টি এলাকাবাসী শুনতে পেরে স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে তাদের অবরুদ্ধ করেন। পরে অবরুদ্ধদের মধ্যে দু’জন নিজেকে থানা পুলিশের এসআই ও দুইজন কনস্টেবল বলে দাবি করে। রাতেই নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌছে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন। এদিকে শিল্পকারখানায় চাঁদা দাবির ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের দুই এসআই আমিনুল ও আব্দুল লতিফকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন তাদের প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিয়ার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ তদন্ত কমিটিকে অবিলম্বে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়াও চাঁদাবাজিতে পুলিশকে সহযোগিতার অপরাধে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতা জয়নাল মীর, শামীম ও হাবিবুর রহমান হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলায়। কাউছার টেক্সটাইল মিলের মালিক বিল্লাল হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানে চাঁদার পর তেকে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এখন শুধু আমি নই সোনারগাঁয়ের অর্ধশতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক এখন চাঁদা আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের বিচারিক আদালতের সহকারী সরকারী কৌসুলী বেগম নুরজাহান বলেন, পুলিশ জনগনের বন্ধু নয়, শত্রুতার পরিচয় দিয়েছে। পুলিশ তাদেও সোর্সের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে বিভিন্ন শিল্প প্রষ্ঠিানে চাঁদাবাজি করে আসছে। পুলিশের এসব সোর্সরা জামায়াত-শিবিরের। যেসব পুলিশ চাঁদাবাজি করছে তারা বর্তমান সরকারের সুন্যিাম নষ্ট করছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) সাজিদুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। চাঁদাবাজির অভিযোগ পেয়ে জড়িত দুই এসআইকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে তারা দোষী প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই বিভাগের আরো খবর