বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সিদ্ধিরগঞ্জের হযরত শাব্দী শাহ বোগদাদী মাজারে টাকা উঠে লাখ লাখ, হয় শুধু লুটপাট

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি : কেউ দান করেন আল্লহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। কেউবা দান করেন নিজের মনবাসনা পূরণের জন্য। এভাবে বহু বছর যাবত ভক্তরা দান করে আসছেন সিদ্ধিরগঞ্জের হযরত শাব্দী শাহ্্ বোগদাদী (রঃ) এর মাজারে। বর্তমানে প্রতিমাসে এ মাজারের দান বক্সে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দান করে থাকে মাজার ভক্তরা। প্রতিবছর যার পরিমাণ হয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু এ টাকা হয় নয়-ছয়। নয়-ছয় করেন এ মাজরেরই কমিটির কর্তা-ব্যক্তিরা। মাজারের খাদেমের বেতন ও কয়েক বছর পর রং এবং টুক-টাক কাজ ছাড়া এ মাজার কিংবা দরিদ্রদের কোন উপকারে আসেনা এ মাজারের টাকা। উপকারে আসেনা কোন মসজিদ-মাদ্রাসা বা সামাজিক কোন উন্নয়নের কাজেও। বরং উন্নয়ন হয় মাজার কমিটির কর্তাব্যক্তিদেরই। এ মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় ওরশের। মজার ব্যাপার হল, এ ওরশ অনুষ্ঠিত হয় টেন্ডারের মাধ্যমে। টেন্ডারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থও ভাগ-বাটোয়ারা করা হয় নিজেদের মধ্যে। এ নিয়ে কেউ টু-শব্ধটিও করতে পারেনা। ওরশকে কেন্দ্র করে মেলা থেকে অর্জিত অর্থ স্থানীয় একটি স্পোটিং ক্লাবকে দেয়া হয়। কিন্তু ঐ ক্লাবের খেলাধুলা বা কোন উন্নয়ন কাজে ঐ অর্থ ব্যয় করা হয় না। ব্যায় হয় ঐ সংগঠনের এক সদস্য এবং তার সহযোগীদের উন্নয়নে। যিনি ঐ মাজার কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। বহু বছরের পূরানো এ মাজার কিভাবে উৎপত্তি হল তা জানেনা মাজার কমিটির সংশ্লিষ্ট কেউ। তবে এলাকার মুরব্বীরা বলেন, তারা তাদের দাদাদের কাছ থেকে শুনেছেন, ইয়ামেনের শাহ বোগদাদী নামে একজন আওলিয়ার নামে মাজারস্থলে গায়েবীভাবে একটি পাথর উঠেছিল শত বছর পূর্বে। সেই থেকেই এখানে মাজারের উৎপত্তি। তবে স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক রেজা ফারুক জানায়, হযরত শাহজালাল ও শাহপরানসহ ৩৬০ জন অলি বাংলাদেশে আসেন ইসলাম প্রচার করার জন্য। তাদের সাথে হযরত শাব্দী শাহও বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করতে আসেন। এক পর্যায়ে তিনি মৃত্যু বরণ করলে তাকে এ স্থানে দাফন করার পর তার ভক্তরা মাজার তৈরী করেন। সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাশে সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকায় অবস্থিত হযরত শাব্দী শাহ বোগদাদী (রঃ) এর মাজার। এ মাজারে দান খয়রাত করেন মাজার ভক্তরা। কিন্তু এ টাকা তেমন উপকারে আসেনা মাজারের। মাজারের একজন পুরুষ খাদেম বর্তমানে ৩ হাজার টাকা ও মহিলা খাদেম ২ হাজার টাকা মাসিক বেতনে মাজার দেখাশোনা করেন। মাজারের যাবতীয় তদারকির জন্য ২১ সদস্য বিশিষ্ট যে কমিটি বর্তমানে রয়েছে, তা ১০ বছর পূর্বে গঠন করা হয়। তবে এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মৃত্যু বরণ করলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সালাহউদ্দিন ওরফে নেতা সালাহউদ্দিন নামের সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকার এক বাসিন্দা। এ কমিটির বর্তমান সভাপতি সাহাবুদ্দিন মেম্বার। প্রতিবছর টেন্ডারের মাধ্যমে ওরশ পালন করা হয় এ মাজারের। ২০১৬ সালে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওরশ পালনের জন্য কার্য্যাদেশ পান হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। ২০১৬ সালে ওরশ উপলক্ষ্যে মেলার স্টল থেকে মাজার কমিটি আয় করে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। মেলার টাকা দেয়া হয় স্থানীয় আদর্শ স্পোটিং ক্লাবকে। এ ক্লাবের সদস্য মাজার কমিটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন। আদর্শ ক্লাবের নামে মাজারের ওরশের দোকানের টাকা বরাদ্দ হলেও ক্লাবের উন্নয়ন তেমন চোখে পড়েনি। ২০১৭ সালে ২৭, ২৮ ফেব্রুয়ারী ও ১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ওরশ। এ বছরের ওরশে মেলার স্টল বরাদ্দ বাবদ কত উঠেছে তা সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন। এবারও দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ওরশের আয়োজন করা হয়। ১৯ টি শর্তে এ ওরশের কার্য্যাদেশ পান হাজী এমদাদুল হক নামের এক ব্যক্তি। তার শ্বশুর ইউনুছ মিয়া এ মজার কমিটির অর্থ সম্পাদক। তার জামাতা ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকায় দরপত্র পান। কিন্তু তার জামাতা শুধু ১৫ হাজার টাকা জামানত বাবদ জমা দেয় মাজার কর্তৃপক্ষের কাছে। বাকী টাকা অদ্যবধি জমা না দেয়ায় মাজার সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ, অসন্তোষ। বছরের পর বছর এ মাজারের টাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩/৪ জন আত্মসাত করে আসছে বলে জানিয়েছেন মাজার কমিটির একাধিক ব্যক্তি। কিন্তু তারা মুখে কিছুই বলতে পারেননা। মাজারের অর্থ সম্পাদক ইউনুছ মিয়া জানায়, আমি ব্যাপারটি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলাপ করে আমার জামাতাকে টাকা দেয়ার জন্য বলব। তবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন জানায়, মাজার উপলক্ষ্যে অর্জিত টাকা আদর্শ স্পোটিং ক্লাবে দেয়া হয়। কিন্তু আদর্শ ক্লাবের কি কাজে এ অর্থ ব্যয় করা হয় তার বিবরণ তিনি দিতে পারেননি। অবশ্য তিনি জানান, মাজারের দুই খাদেমকে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। তাছাড়া পাশ্ববর্তী সিদ্দিকীয় মাদ্রাসার লিল্লাহ বোডিংয়ে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। বাকী টাকা থেকে গরীব ১৪/১৫ জন গরীবকে ৫০০ ও ৩০০ টাকা করে দেয়া হয়। তবে তাদের তালিকা তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি আরো জানান, মোহন সরকার নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির ভাতিজীর বিয়েতে ৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে উত্তোলিত টাকা থেকে। মেলা পরিচালনা এবং ওরশ উপলক্ষ্যে বলেনটিয়ারদেরকেও মেলার দোকান ভাড়ার টাকা থেকে তাদের মজুরী দেয়া হয়েছে। তবে তিনি এ মাজারের অর্থ লোপাটের ব্যাপারটি অস্বীকার করেন।
এই বিভাগের আরো খবর