বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রেল লাইনের পাশ জুড়ে অবৈধ দোকান, ঝুঁকিপূর্ণ জনজীবন

প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ২২ মে ২০১৭

আফরিন অাহমেদ (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম ) : ‘ট্রেন আইতেছে, ট্রেন আইতেছে সইরা জান’ এভাবেই ট্রেন এলে সরে যাওয়ার জন্য সংকেত দেন ২নং রেইলগেটের গাঁ ঘেসে গড়ে ওঠা দোকানের বিক্রেতারা। ১ নং রেইল গেট থেকে ২নং রেইলগেট পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার পথে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে কাঁচা বাজার ও হকারদের দোকান। এ সকল দোকানপাট বিপদজনক ভাবে রেল লাইনের গাঁ-ঘেসে গড়ে উঠেছে। রেলওয়ে ও সিটি কর্পোরেশনের সীমানাবর্তী এলাকায় এ সকল দোকানপাট হওয়ায় কর্তৃপক্ষ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। আর এ সুযোগে রমরমা  ব্যবসা করছে হকাররা। ট্রেন লাইনের দুদিকে বিভিন্ন পন্য সামগ্রির পসরা বসিয়ে রাখায় ঝুকিপূর্ণ ভাবেই চলাচল করে ট্রেন। দুপাশে দোকান ঘেরা সরু গলি দিয়ে ট্রেন যাতায়াত করার সময় প্রতিনিয়তই ঘটে দূর্ঘটনা। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে অবৈধ হকারদের ব্যবসা ও রেল চলাচল। পলিথিন এর ছাউনি দিয়ে ঘেরা এসব দোকানে কাঁচা বাজার ছাড়াও রয়েছে প্লাস্টিকের তৈজসপত্র, কাচের প্লেট বাটি ,লোহার জিনিসপত্র সহ অসংখ্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। ফলে সাধারন মানুষ এসকল প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এ ঝুকিপূর্ণ স্থানে আসতে বাধ্য হন। বাজার করতে আসা একজন ক্রেতা নাসরিন  আক্তারের এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এখানে ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কম দামে  কিনতে পাই তাই এখানেই কেনা কাটা করতে আসি। অনেক সময় কেনাকাটা করতে করতে ট্রেন আসার ব্যপারটা খেয়াল থাকে না। এ চিত্র কেবল মাত্র ২ নং রেইল গেটের নয় ঢাকা নারায়ণগঞ্জ ১৭ কি.মি. রেল পথের গেন্ডারিয়া, জুরাইন, বউ বাজার, পাগলা , আলীগঞ্জ, ফতুল্লা, ইসদাইর সহ বিভিন্ন স্থানের চিত্র প্রায় একই। এ ১৭ কি.মি. পথে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। যানযট এড়াতে ও টাকা বাঁচাতে সাধারণ মানুষ এ রেল পথেই যাতায়াত করে। দুর্ঘটনা হলে ট্রেন চলাচল থেমে থাকে দির্ঘক্ষন ফলে যাত্রীরা পরেন দুর্ভোগে। ২৫ বছর ধরে এ রেল লাইনের পাশেই দোকান দিয়ে ব্যবসা করেন বলে দাবী জানান দোকানদার আবুল মিয়া। এইখানে দোকান দিয়ে ব্যবসার জন্য কারো কাছে ভাড়া বা চাঁদা দিতে হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভাড়া তো দিতেই হয়। একেক সময় একেকজন আইসা টাকা নিয়া যায় কখনো কখনো পুলিশরাও আইসা ভাড়া তোলে। টাকার পরিমান জানতে চাইলে বলেন, বিশ টাকা পঞ্চাশ টাকা অবার উচ্ছেদ অভিযান পর  দোকান বসাইতে ১০০ পর্যন্ত টাকা লাগে। এখানে দোকান দিয়ে ব্যবসা করা তো অবৈধ তবুও ভাড়া দেন কেন এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা গরীব মানুষ পুলিশরা, এলাকার মস্তানরা আইসা চাঁদা চায় না দিলে তো বাবা পেট চলবোনা। রেলওয়ে পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, রেল লাইনের পাশের হকাররা লাইন পার হলেই সিটি কর্পোরেশনের আওতার মধ্যে পরে যায়। ফলে আমরা তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে সহজেই স্থান পরিবর্তন করে সুযোগ নেয়। এছাড়াও ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটের বিভিন্ন স্টেশন যেমন পাগলা, গেন্ডারিয়া এসব এলাকায় হাজার হাজার হকার এভাবেই লাইন ঘেসে দোকান দিয়ে ব্যবসা করে। তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে এত মানুষ পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা তো আমরা করতে পারি না ফলে তাদের হাতে প্রশাসনেও একরকম জিম্মি। পুলিশের  চাঁদা নেয়ার অভিযোগ আছে বললে তিনি এ অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, আমাদের কর্মকর্তরা তো কখনো নেয়না অন্য কেউ নিয়ে থাকলে আমারা তা বলতে পারবো না। এ ব্যপারে রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমরা ডাবল লাইন ও প্যরালাল লাইনের প্রকল্প হাতে নিচ্ছি ফলে এ হকারদের এখানে আর ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। মন্ত্রী সভায় অনুমতি পাওয়া গেছে ফলে বাজেট পাশের পরেই এই প্রকল্পের কাজে হাত দেয়া হবে। ডাবল লাইন করলেই এ হকার সমস্যার সমাধান হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, না তা হবে না এর জন্যে আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষক তৈরী করবো। এবং এ সকল অবৈধ দোকান পাট সরাতে আমরা শীঘ্রই ব্যবস্থা নিব। সিটি কর্পোরেশন ও রেলওয়ে সীমানাবর্তী এলাকার সুযোগ নিচ্ছে হকাররা এ সমস্যা সমাধানে তাদের করনীয় কী এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা রেলওয়ের জায়গাতেই ডাবল লাইন করবো। ফলে রেলওয়ের জায়গাতে অবৈধ ব্যবসা আর করতে দেয়া হবে না।
এই বিভাগের আরো খবর