শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

“শ্রমিক মালিক গড়বো দেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ” প্রতিপাদ্যে শ্রম দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের মে দিবস উদযাপন

প্রকাশিত: ১ মে ২০১৭   আপডেট: ১ মে ২০১৭

ষ্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : চাষাড়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে “শ্রমিক মালিক গড়বো দেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মহান মে দিবসে এক র‌্যালী ও র‌্যালী পরবর্তী সমাবেশ করেছে আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ। এতে সার্বিক সহযোগীতা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। সোমবার সকাল ১০ টায় র‌্যালীর মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। র‌্যালীটি চাষাড়া জিয়া হল থেকে ১ নং রেল গেট হয়ে আবার শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রীড়া উপস্থাপক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের সহকারী শ্রম পরিচালক মোহাম্মদ সাদেকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মঈনুল হক ও ইন্ডাষ্ট্রিয়াল-৪ এর পুলিশ সুপার সানা শামীনুর রহমান। মালিক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিকেএমইএর অর্থ বিষয়ক সহ-সভাপতি জি.এম.ফারুক। শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব কাউসার আহমেদ পলাশ, মোঃ মাইনুদ্দিন আহমেদ বাবলু, মোঃ কামরুল হাসান মুন্না, মোঃ আবুল খায়ের ভূঁইয়া মোহাম্মদ সাদেকুজ্জামানসহ প্রায় ৭৪ টি সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ। নারায়ণগঞ্জ শ্রমকল্যান দপ্তরের মহাপরিদর্শক জনাব মো: আফিুজ্জামান আরিফ বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে আমরা শ্রমিকের জন্য কাজ করে আসছি। মালিক, শ্রমিক ও সরকার ৩টি পক্ষের সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে শ্রমকল্যান অধিদপ্তর। শ্রমিকের যত দাবি তা আমাদের কাচে বললে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো তাদের দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে উথাপন করবো। তা-ও আপনারা প্রথমেই রাস্তায় নেমে আসবেন না। ইউনাইটেড ফেডারেশন গার্মেন্টস শ্রমিক ওয়ার্কাস শাহাদাত হোসেন সেন্টু বলেন, মে দিবসের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা যারা সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের স্বীকার। এখনো ৮ ঘন্টা কাজ নির্ধাারণ হয় নাই। পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, আমি ছাত্রবস্থায় থাকতে রাজপথে আপানাদের সাথে আন্দোলন করেছি। আমি আমার জায়গা থেকে এখনো আপনাদের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ শ্রমিকের তীর্থভূমি, পূণ্যভূমি। নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকরা অনেক সংস্কৃতমনা। তারা আনন্দের সাথে তাদের কাজ করে। আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকরা গার্মেন্টস এ তাদের সকল জীবনীশক্তি দিয়ে আসে। ১০ বছরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনেক উন্নতি হয়েছে। আপনাদের এখনো অনেক ক্ষোভ আছে। দেশ যদি উন্নতি হয় তবে আপনাদেরও উন্নতি হবে। এদেশকে এগিয়ে যাওয়ার মূল চালিকাশক্তি আপনারা। এদেশকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবেশ রাখতে হবে। শ্রমিকরা এগিয়ে গেলে এ দেশ এগিয়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জ ও কাভার্ড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মানিক বলেন, সড়ক পরিবহন ২০১৭ আইনের কয়েকটি ধারা কালো আইন। ৩০২ ধারা যেন বাতিল করা হয়। এটি সন্ত্রাসীদের জন্য। পরিবহন শ্রমিকরা ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাতে পারবে না। ৮ম শ্রেণী পাশ করে ড্রাইভারের লাইসেন্স দেয়ার যে নিয়ম তা-ও বাতিল করতে হবে। কারণ যে ড্রাইভার ২০ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছে সে অভিজ্ঞ ড্রাইভার। কিন্তু এখন তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। শ্রমিক নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, মে দিবস এক দিনে হয় নাই। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মে দিবস হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে সকল দাবি আদায় হয় যার প্রমাণ এই মে দিবস। এই মে দিবস শিকাগোতে বাচ্চা শিশুর  রক্তে রঞ্জিত। সারা বিশ্বে মে দিবস পালিত হলেও আমেরিকাতে মে দিবস পালিত হয় না। ২২ হাজার মালিক পরিবারের জন্য দেশ স্বাধীন হয় নাই। যার আছে অনেক আছে যার নাই কিছুই নাই। শ্রমিকরা যাতে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে তার জন্য গ্রুপিং করা হয়। গার্মেন্টস এ নেতার অভাব নাই কিন্তু কোন কর্মী নাই। প্রতিটি কারখানায় একটি করে ইউনিয়ন ও একটি করে ফেডারেশন থাকতে হবে। এর বেশি থাকলে তা শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা হবে না। এগুলো অনৈক্যের জন্য তৈরি হয়। বিকেএমইএ, বিজেএমইএ ও এফডিসিআই সব এক। কিন্তু শ্রমিকরা এক নয়। মাত্র এক দিনের সিদ্ধান্তে নারায়ণগঞ্জে ইজিবাইক বন্ধ করে দেয়া হলো। ইজি বাইক আমদানি বন্ধ না করে চালাানো বন্ধ করা হয়। এতে ইজিবাইক শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। লক্ষী নারায়ণ, চিত্তরঞ্জনকে বাদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস লিখা যাবে না। ইন্ডাষ্ট্রিয়াল (৪) পুলিশ সুপার বলেন সানা শামীনুর রহমান, ৩টি দাবির পিছনে আন্দোলন হয়েছিল। তা হলো- ৮ ঘন্টা কাজের দাবি, বেতন বৃদ্ধি, কাজের পরিবেশ উন্নয়ন। আপনাদের রক্তে ঘামে দেশ এগিয়ে চলছে। আপনারা কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে। আপনারা কাজ করলে ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিত হবে। আপনাদের ক্ষোভ অনেক। যখন কোন নাজুক পরিবেশের সৃষ্টি হয় তখন মাঠে থাকি আমরা ও আপনারা। আর কেউ মাঠে থাকে না। আপনাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করেন। তবে তা শান্তিপূর্ণ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, শুধু নেতা হাসলে হবে না, কর্মীদের হাসাতে হবে। কর্মীদের হাসাতে না পারলে নেতার পাশে কর্মীরা থাকে না। যথাযথ কর্মী না হলে যথাযথ নেতা হবে না। শ্রমিক না হলে মালিক হতে পারে না। সন্তান ভাল না হলে বাবার সম্মান নাই। আপনাদের সন্তান যাতে আর শ্রমিক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। নিজেদের ভাল বাসতে শিখেন। যদি নিজেদের ভাল বাসেন তবে আপনাদের সন্তানরা নেতা হবে, সরকারী আমলা হবে। যত এমপি মন্ত্রী আছে তাদের সন্তান মাত্র এক বা দুই জন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আপনাদের সন্তান অনেক। আপনারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করেন। বাঘের বাচ্চা একজন হলেই চলে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দিয়ে বেশিদিন নেতা হওয়া যায় না। আগের অনেক নেতা এখন আর নাই। আপনাদের সন্তানকেই মালিক, নেতা, আমলা বানাতে হবে। নেতাদের দায়িত্ব হলো নেতা তৈরি করা। নেতারা ভয়ে নতুন নেতা তৈরি করে না। চ্যালেঞ্জ করার ভয়ে নেতা তৈরি হয় না। আমরা আর শ্রমিক হিসেবে থাকতে চাই না। আমরা মালিক হতে চাই। মালিক বেশি হলে বিদেশ থেকে আমাদের দেশে শ্রমিক আসবে। আমাদের দেশের মানুষ বিদেশে গিয়ে অনেক কষ্ট করে। আমরা চাই না আমাদের দেশের মানুষ অন্য দেশে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করুক। বাংলাদেশ আমাদের মা। মা কে ভালবাসতে হবে।
এই বিভাগের আরো খবর