শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অপরাধীরা সক্রিয় : ৩০দিনে ১৩ খুন, ১০ ধর্ষণ ও অপমৃত্যু ১২

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭

ষ্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : ধারাবাহিক ভাবে প্রশাসনের আঙুলের ডগায় বসে নারায়ণগঞ্জে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে অপরাধীরা। প্রশাসনের হাজার কর্মউদ্যোগ ও আশ্বাসবাণীকে ম্লান করে দিয়ে নিত্য ঘটছে খুন, গুম, ধর্ষণ, আত্মহত্যার মতো ঘটনা। প্রশাসন অনেকগুলোর কুল কিনারা করতে পারছে না। আবার অনেকগুলোর কূল কিনারা করলেও আইনের ফাঁক ফোঁকড় দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মানবতাবাদী ও সামজিক সংগঠনগুলোও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হচ্ছে ব্যর্থ। ফলে কিছুতেই কমছে না এসব ভয়ংকর অপরাধ প্রবণতা। এতে নারায়ণগঞ্জবাসী বিপর্যস্ত এবং আতঙ্কিতরস্থায় জীবনযাপন করছে। গত এপ্রিল মাসে নারায়ণগঞ্জে ঘটেছে ১৩টি খুন, ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে ১০ টি। সড়ক দুর্ঘটনায় ৫জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আত্মহত্যা করেছে ৮ জন। এ ছাড়াও বিভিন্ন কারনে অনেক ঘটনা রয়ে যায় অগোচরে। মাসের শুরুতেই ১ম দিনে সোনারগাঁয়ে এক সিএনজি চালক অপর সিএনজি চালককে হত্যা করে। ৪ এপ্রিল আড়াইহাজারে নির্মাণ শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ১১ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের বৈদবাজার এলাকায় মেঘনা গ্রুপের মাঠ থেকে ছিন্ন-ভিন্ন মাথা উদ্ধার করে। একই দিনে রুপগঞ্জে ভজন চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধার হয়। ৪ এপ্রিল বন্দরে স্ত্রীকে ঘুরাতে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে স্বামী আকাশ। ১৬ এপ্রিল দুপুর ২টায় রুপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার একটি বালুর মাঠ মাটিচাপা দিয়ে পুঁতে রাখা অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। ১৭ ই এপ্রিল শীতলক্ষ্যা থেকে অর্ধ গলিত অজ্ঞাত এক কিশোরীর (১৪) লাশ সিদ্ধিরগঞ্জে গোদনাইল ২নং নদীর ঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৮ এপ্রিল পানিতে ডুবিয়ে শিশুকে হত্যা করেছে। একই দিনে বিকেলে ২নং ঢাকেশ্বরী মীরপাড়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে নদীতে ফেলে যায়। ১৯ এপ্রিল শহরের মাসদাইরে এক নির্মাণ শ্রমিক নির্মাণাধীন ভবন থেকে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। ২৪ এপ্রিল রুপগঞ্জে ব্রিফকেস থেকে অজ্ঞাত এক যুবতীর লাশ উদ্ধার করে রুপগঞ্জ থানা পুলিশ। একই দিনে নিশৃংস ভাবে এক অটোরিক্সাচালককে হত্যা করে যাত্রীবেশি ৪ ছিনতাইকারী। ২৬ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়িতে ভাড়াটিয়া কর্তৃক বাড়িওয়ালার স্ত্রী সেলিনা আক্তার (৪৮) কে খুনের ঘটনা ঘটে। এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ৮ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের শুকুরদী গ্রামে সাত বছরের এক মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ৯ তারিখ ফতুল্লায় প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ করে। ১০ এপ্রিল বন্দরের কাইত্তাখালি মাদ্রাসার শিক্ষক ক্বারী মোঃ রফিকুল ইসলাম কর্তৃক ছাত্র (৭) কে বলাৎকার করার ঘটনা ঘটেছে। ১১ এপ্রিল ভোরে ফতুল্লার নরসিংপুরে ইয়াসিন জুট মিলে প্রেমিককে আটকে রেখে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে সিকিউরিটিগার্ড। একই দিনে ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেছে আবুল হোসেন (৪৫) নামক এক লম্পট। ১৭ এপ্রিল ফতুল্লায় এক গার্মেন্টস কর্মী (২৪) কে ধর্ষণ করে হালিম (৩০) নামের এক যুবক। ১৯ এপ্রিল রুপগঞ্জে ১৪ বছরের এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২৮ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে নারী শ্রমিককে ৩ বন্ধু মিলে গণ-ধর্ষণ করে।  ২৯ এপ্রিল ফতুল্লায় ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেছে মুসফিকুল (১২) নামের এক কিশোর। এপ্রিলের ৩ তারিখে সিদ্ধিরগঞ্জে বালুর ট্রাক চাপায় দিয়া (৮) নামের এক শিশু নিহত হয়। ৭ এপ্রিল বন্দরের ধামগড় চৈড়ারবাড়ি এলাকায় অটো রিকশার মটরে বোরকার উড়না পেচিয়ে জাহানারা বেগম (৫০) নামে ৪ সন্তানের জননী এক মহিলার গলা বিচ্ছিন্ন হয়ে নিহত হয়েছে।  ১৩ তারিখে সোনারগাঁয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ বছরের কিশোরী মেয়ে নিহত হয়েছে। ১৬ তারিখে রুপগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় এনায়েত মিয়া (৩০) নামক এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ২৬ এপ্রিল রাস্তা পারাপারের সময় এক অজ্ঞাত (৪০) যুবক নিহত হয়েছে। পারিবারিক অশান্তি, জীবনের সঠিক মানে খুজে না পাওয়া, অসহ্য জীবন থেকে শান্তির আশায় প্রতিদিনই ভবিষ্যত এ মেগা শহরে ঘটছে আত্মহত্যা। মাসের প্রথমে এপ্রিলের ১ তারিখের পশ্চিম দেওভোগে লিয়াকত হোসেন পলি (৩২) নামক এ যুবক আত্মহত্যা করেছে। ৫ এপ্রিল মোগরাপাড়ায় বিষপান করে গৃহবধু আত্মহত্যা করে। ১০ এপ্রিল সোনারগাঁ উপজেলার মনোয়ারা বেগম আত্মহত্যা করেছে। ১১ এপ্রিল প্রেমিক কপোত-কপোতি আত্মহত্যা করে। ১৫ এপ্রিল ফতুল্লার মাকসুদা (২৭) আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ২৪ এপ্রিল মাসদাইরে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে বেবী রাণী (১৭) মারা যায়। ২৬ এপ্রিল ফতুল্লায় শাহিদা বেগম (২৮) আত্মহত্যা করেছে। এ সব বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের এক বাসিন্দা সাগর সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, গুম, খুন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা নিয়ে আমাদের জীবন। নারায়ণগঞ্জ এক সময়ে মসলিনের জন্য সু-পরিচিত হলেও বর্তমানে সু-পরিচিত অপরাধ নগরী হিসেবে। এটা নতুন কিছু নয়। ইসতিয়াকের সাথে কথা বললে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ভাই নারায়ণগঞ্জের মানুষ অপরাধের সাথে অভ্যস্ত। পরিবার কেন্দ্রীক রাজনীতি যেখানে চলে সেখানে অপরাধ হবেই। সকলেই এক পরিবারের মুখাপেক্ষি। তাই কেউ কোনো অপরাধ করলেও তা মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিয়ার রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে গত জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত ২৬ টি  খুনের মামলার মধ্যে ১৭টি খুনের মামলা চলছে। এবং বাকিগুলোও তদন্ত চলছে। আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সবসময় লিফলেট বিতরণ, এলাকার গন্যমান্য মানুষের সাথে নিয়মিত বৈঠক করছি। আমরা আগের থেকে অনেক তৎপর, আমাদের সফলতা শতভাগ।
এই বিভাগের আরো খবর