মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

১ মে, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় দিন

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭

স্টাফ রির্পোটার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : আজ মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় দিন পহেলা মে। এই দিবসটিকে শ্রমিক দিবস হিসেবেও পালিত হয়। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। সারা বাংলাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও এ দিবসটি উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে কমিউনিস্ট পার্টি, নারায়ণগঞ্জ ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ,শ্রমিক  ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী  ফেডারেশনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক,  পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীসমূহের বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসনকাল থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। ওই বছরই সদ্য স্বাধীন  দেশে পহেলা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই সারাবিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও পালিত হয়ে আসছে মে দিবস। বিশ্বের অনেক দেশ এ দিনটিকে ‘লেবার ডে’ হিসেবে পালন করে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ মোট ৮০টি দেশে দিনটি সরকারিভাবে ছুটির দিন। শ্রমজীবী মানুষের এই স্বীকৃতির সূচনাকাল সহজ ছিল না। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি  পেতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে বুকের রক্তে শ্রমিকরা আদায় করেছিলেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার। শ্রমিকদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই সেদিন মালিকরা স্বীকার করে  নিয়েছিলেন শ্রমিকরাও মানুষ। তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রামও বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। ১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে শিকাগো শহরের তিন লাখের বেশি শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের  হে মার্কেট রূপ নেয় শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলীবর্ষণ শুরু হয়। ফলে প্রায় ১০/১২জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। এর পরপরই  হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি  মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ১৮৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের শতবার্র্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তজার্তিক-এর প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকভাবে দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এরপরপরই ১৮৯৪ সালের মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবী আদায়ের জন্য এবং শান্তি  প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের মাধ্যমে  সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং মিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়নে) প্রতি আহবান জানানো হয়।  সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না থাকলে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে’র ১ তারিখে “বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার” সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। অনেক  দেশে  শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে পালনের দাবী জানায় এবং অনেক  দেশেই এটা কার্যকরী হয়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিষ্ট এবং কিছু সংগঠন তাদের দাবী জানানোর জন্য  মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসাবে বেছে নেয়। কোন কোন স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে আগুনও জ্বালানো হয়ে থাকে। পূর্বতন সোভিযয়েত রাষ্ট্র চীন, কিউবাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সে সব  দেশে এমনকি এ উপলক্ষে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। যুগের পর যুগ কেটে গেলেও  শ্রমিকদের সেই একই অবস্থা। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের একই অবস্থা। তবে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কিছু শ্রমিক ভালো আছেন। তারা শ্রমিক হিসেবে বেশিরভাগ সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো। চাকরির যেমন নিরাপত্ত নেই, তেমনি ভবিষ্যৎ বলতেও তারা কিছু ভাবতে পারছেন না। তারা এখনও নানান শ্রেনী পেশার মানুষদের দ্বারা জর্জরিত। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রগুলোতে তারা আজও নিপীড়িত। নির্দিষ্ট সময়ের অধিক সময় কাজ করলেও পাচ্ছে না শ্রমের ন্যায্যমূল্য। জীবিকার তাগিদে শত গঞ্জনার আর হতাশার মধ্যে দিয়েও কাজ করে যেতে হচ্ছে তাদের।
এই বিভাগের আরো খবর