বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ময়লার ভাগাড়ে শীতলক্ষ্যা, প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্য নিক্ষেপ

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম : শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের শহর নারায়ণগঞ্জ। শীতলক্ষ্যা নদীকে কেন্দ্র করে প্রাচীন আমলেই শুরু হয়েছে এখানকার সভ্যতা। এই নদীর ইতিহাসও পুরোনো। প্রাচীন ইতিহাসে এই নদীকে নিয়ে কল্পকাহিনীরও শেষ নেই। এক সময়ে এ নদীর পানি বোতলজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। যা বর্তমানে শুধুই গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমান প্রজন্মকে এ গল্প বললে হয়তো বিশ্বাসও করবে না। শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রতিদিন কমপক্ষে সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্যপদার্থ ফেলা হয়। যা যে কোন নদীকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। এই সব বর্জ্যের মধ্যে আছে কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির রাসায়নিক বর্জ্য, অসংখ্য সাবান ফ্যাক্টরির সিলিকেট, তেল শোধনাগারের গাদ, ডায়িং ফ্যাক্টরিগুলোর বর্জ্য পদার্থ, বিষাক্ত এসিড ও চর্বি মিশ্রিত বর্জ্য। যার দরুণ নদীর পানি কালো হয়ে গিয়েছে  এবং পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। নদী পারাপারকারীরা নাকে রুমাল দিয়ে দৈনিক পারাপার করছে প্রাচীন এই নদী। কালের পরিক্রমায় এ নদী মানুষের লালসার স্বীকার হয়েছে। পুঁিজবাদি মানসিকতার ব্যক্তিরা শীতলক্ষ্যার অপব্যবহার করে নদীকে ময়লার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করছে। কিছু বাড়তি খরচ থেকে বাঁচার জন্য শীতলক্ষ্যার পানিতে তারা ময়লা আবর্জনা, কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, ডাইংয়ের রং সহ বাসা বাড়ির যাবতীয় আবর্জনা নদীতে ফেলছে। এমনকি পয়ঃনিষ্কাশনের লাইনও নদীর সাথে দিয়ে দিয়েছে। এতে কয়েক বছরে শীতলক্ষ্যার পানি দূষিত হয়ে কালো ও দুর্র্গন্ধযুক্ত করেছে। শীতলক্ষ্যা নদীর সবচেয়ে দূষিত অংশ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত। এই অঞ্চলে নদীর তীরবর্তী এলাকা দখল করে কয়েক হাজার ব্যবসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলছে বহুদিন ধরেই। এর ফলে ধীরে ধীরে নদী দূষিত হচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। যার ফলশ্রুতিতে এখন শীতলক্ষ্যা এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে গিয়েছে। ডাইং কারখানার সব বর্জ্য পড়ছে শীতলক্ষ্যায়। যদিও ডাইং কারখানায় ইটিপি স্থাপন করা সরকার বাধ্যতামূলক করলেও সব প্রতিষ্ঠান তা করছে না। আর ডাইংয়ের বিষাক্ত ক্যামিকেলযুক্ত পানি সরাসরি পড়ছে শীতলক্ষ্যায়। খোজ নিয়ে জানা গেছে, বড় আটটি আরসিসি পাইপলাইনে কারখানাগুলো থেকে অবিরাম দূষিত তরল বর্জ্য এসে মিশছে খালের পানিতে। কোনো পাইপের পানির রং কালো, কোনোটির সবুজ। আবার  কোনোটির রং গাঢ় লাল কিংবা বেগুনি। নানা রঙের এসব বর্জ্যমিশ্রিত পানি গিয়ে মিশছে পাশের বিলাইজুড়ি খালের পানিতে। ডিএনডির ভেতরে সেচখাল আছে ৫৫ দশমিক ২০ কিলোমিটার, আর পানি নিষ্কাশন ক্যানেল রয়েছে ৪৫ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। এই খাল ও ক্যানেলগুলো  শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। পানি এতটাই দূষিত ও বিষাক্ত যে, পাম্প হাউজের পানি নিষ্কাশনের সময় তাদের নাকে রুমাল চেপে কাজ করতে হয়। অনেক সময় বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে অফিস করাই কষ্ঠসাধ্য হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে নদী পারাপারকারী রিতা বলেছেন, এত দূর্গন্ধ যে মানুষকে পারাপারের সময় অনেক বিব্রত অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। ইতালি থেকে আমার ভাই এসেছিল কয়েকদিন আগে। আমার বাড়ি নদীর ওপারে। তাকে নিয়ে নদী পারাপার হওয়ার সময় নদীর পানির দূরাবস্থা দেখে উনি অবাক হয়ে গিয়েছেন। তাকে নাকে রুমাল দিয়ে নদী পার হতে হয়েছে। বিদেশ প্রবাসী শামীম আহমেদ শীতলক্ষ্যার ব্যাপারে বলেন, আমরা কষ্ট করে প্রতি মাসে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাই। এতে দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দেশের কি উন্নয়ন করছে। উল্টো নদীটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এক সময় আমরা এই নদীতে গোসল করেছি। কত স্মৃতি এই নদীকে ঘিরে। কিন্তু এখন আর তা নেই। কালো পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। যা আসলেই কাম্য নয়।
এই বিভাগের আরো খবর