
"যখন তোমার কেউ ছিল না তখন ছিলাম আমি। এখন তোমার সব হয়েছে পর হয়েছি আমি "।ছন্দের সুরে এমন একটি কথা যদি হারিকেন বলতে পারতো নির্শ্চয় কথাটি যথার্থই হতো। কারন সভ্যতার বিবর্তন আর কালের পরিবর্তনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের রাত্রিকালীন বন্ধু আলোর দিশারী হারিকেন। কিন্তু একটা সময়ে অন্ধকার দূর করার জন্য হারিকেনের ছিল খুবই কদর।
প্রতি সন্ধ্যায় হারিকেনের চিমনি খুলে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে তারপর ছিপি খুলে কেরোসিন তেল ঢেলে আবার ছিপি লাগিয়ে চিমনির মধ্যে সুতার ফিতায় দিয়াশলাইয়ে কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে নেওয়া হতো। হারিকেনের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠতো ঘরগুলো। ছাত্র-ছাত্রীরা হারিকেনের আলোতে লেখাপড়া করতো। হারিকেনের আলোতে রমনীরা রান্নার কাজ করতো।
হাট-বাজার ও ছোট ছোট দোকান গুলোতে হারিকেনে বেধে কেনাবেচা করতো। চিমনির কারনে বাতাসে নিভে যেত না, তাই গ্রামের মেঠোপথে ভ্যান ও রিকশার নিচে হারিকেন বাধা থাকতো। অন্ধকার পথ দূর করার জন্য হারিকেন ছিল মানুষের পরম সঙ্গী। রাতে ঘুমানোর পূর্বে হারিকেনের আলো কমিয়ে ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হতো। নিস্তব্ধ রাতের নিরিবিলি পরিবেশে জানালার ফাঁক দিয়ে মিটমিট আলোর ধেয়ে আসার দৃশ্য এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ছায়ায় রুপ পেত।
দিন যত যাচ্ছে প্রযুক্তি ততই উন্নতির পথে চলছে যার কারনে হারিকেন ছেড়ে মানুষ এখন বিদ্যুৎতের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুতকে সংগ্রহ করার পন্থা আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞানীরা। চার্জারলাইট, সৌরবিদ্যুত সহ বেশ কিছু আলোর যোগান থাকায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য হারিকেন হারিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির ভিড়ে। এক সময় হয়তো চিরতরে বিলুপ্ত হবে হারিকেন। তাতে নতুন প্রজন্মের কাছে অচেনা হয়ে থাকবে হারিকেনের ইতিহাস।